বচনের বিভিন্ন অংশ বা অবয়বগুলি আলোচনা করো। অথবা, নিরপেক্ষ বচনের অংশগুলি উদাহরণসহ আলােচনা

বচনের বিভিন্ন অংশ বা অবয়বগুলি আলোচনা করো। অথবা, নিরপেক্ষ বচনের অংশগুলি উদাহরণসহ আলােচনা l Class 12 | Bengali | 8 Marks

উত্তর :

বচনের আহণ বা উপাদান

 অবরােহ যুক্তিবিদ্যায় আমরা বচন বলতে সাধারণত নিরপেক্ষৰচ্যকেই বুঝে থাকি। এই নিরপেক্ষ বচনের অংশ হল চরিটি। এই অংশগুলি হল— 1) পরিমাণক,2) উদ্দেশ্য, 3) সংযোজক ও 4) বিধেয়। কোনো বচনের যে অংশ ওই বচনের পরিমাণ (Quantity)-কে উল্লেখ করে, তাকে বলে পরিমাপক। যার সম্পর্কে বচনে কিছু ঘােষণা করা হয় তাকে বলা হয় উদ্দেশ্য | যে অংশটি উদ্দেশ্য এবং বিধেয়কে সংযােজন বা যুক্ত করে, তাকে সংযােজক বলে। আমরা বাক্যে যাকে ক্লিয়ারূপে উল্লেখ করি, বচনে তাকেই সংযোজক বলে। অন্যদিকে, উদ্দেশ্য সম্পর্কে যা কিছু বলা বা ঘােষণা করা হয়, তাকেই বিধেয় বলে।

ব্যাখ্যা: নিরপেক্ষ বচনের চারটি অংশকে এভাবেই পরপর সাজাতে হয়— উলটোপালটাভাবে সাজানাে যায় না| এর কোনাে অংশ উহ্যও রাখা যায় না। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, বচনকে একটি বাঁধাধরা নিয়মের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, এর কোনাে ব্যতিক্রম সম্ভব নয়। এই চারটি অংশই যে বচনের ক্ষেত্রে অপরিহার্য— তাতেও কোনাে সন্দেহই নেই। সেজন্য বচন তৈরির ক্ষেত্রে এই চারটি অংশের গুরুত্বকে কখনােই উপেক্ষা করা যায় না। এই সমস্ত অংশ বা উপাদানগুলিকে নীচে পৃথক পৃথকভাবে আলোচনা করা হল— [1] পরিমাণক: যে অংশটি দিয়ে কোনাে বচনের উদ্দেশ্য অংশের পরিমাণ বা বিস্তৃতিকে সূচিত করা হয়, তাকেই বলা হয় বচনের পরিমাণক (Quantity)। অর্থাৎ, বচনের পরিমাণ নির্দেশক অংশটিই হল তার পরিমাপক। 

1. সকল মানুষ হয় মরণশীল। (সার্বিক পরিমাপক)

2. কোনাে কোনাে মানুষ হয় মরণশীল। (আংশিক পরিমাপক)

ব্যাখ্যা : প্রথম বচনটিতে একটি সার্বিক পরিমাণ (Universal Quantity)-কে নির্দেশ করা হয়েছে|কারণ, এক্ষেত্রে বিধেয়ের বিষয়টি (মরণশীলতা) সমস্ত মানুষের ক্ষেত্রেই প্রযােজ্য কিন্তু দ্বিতীয় উদাহরণটিতে উদ্দেশ্যের | আংশিক বা বিশেষ পরিমাণ (Particular Quantity)-কে নির্দেশ। করা হয়েছে। কারণ, এখানে মরণশীলতার বিষয়টি কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে প্রযােজ্য, সমস্ত মানুষের ক্ষেত্রে নয়। অর্থাৎ, সকল (All) জাতীয় শব্দের দ্বারা আমরা সার্বিক তথা সামান্য পরিমাণের। বিষয়টিকে উল্লেখ করতে পারি। কিন্তু কোনাে কোনাে (Some) । জাতীয় শব্দের দ্বারা আমরা আংশিক পরিমাণকে বোঝাতে পারি ।

[2] উদ্দেশ্য : উদ্দেশ্য হল বচনের প্রথম অংশ এবং তা পরিমাপকে অবস্থান করে। বচনের যে পদ সম্পর্কে বা, যার সম্পর্কে বিধেয়কে স্বীকার বা অস্বীকার করা হয়, তাকেই বলা হয় উদ্দেশ্য (Subject)

বিধেয়তে এই উদ্দেশ্য সম্পর্কেই কোনাে সদর্থক (হাবাচক) বা নয়ে (না বাচক) বক্তব্য প্রকাশ করা হয়।

উদাহরণ

1. সকল মানুষ হয় চিন্তাশীল। 

2. কোনাে মানুষ নয় চিন্তাশীল।

ব্যাখ্যা

এই দুটি উদাহরণেই মানুষ পদটি উদ্দেশ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এক উদ্দেশ্য তথা মানুষ সম্পর্কেই বিধেয়তে চিন্তাশীল পদটি উল্লিখিত হয়েছে। প্রথম উদাহরণে তা সদর্থকভাবে গৃহীত হয়েছে, কিন্তু দ্বিতীয় উদাহরণে তা নঞর্থকভাবে গৃহীত হয়েছে। 

[3] সংযােজক: যে শব্দের দ্বারা উদ্দেশ্য পদ ও বিধেয় পদের মধ্যে সংযােগ স্থাপন করা হয়, তাকেই বলে সংযােজক (Copula) | Copula শব্দটি এসেছে দুটি লাতিন শব্দ থেকে—যার একটি হল Co এবং অপরটি হল Apere| Co শব্দের অর্থ হল সহিত বা সঙ্গে আর Apere শব্দের অর্থ হল যুক্ত করা (Conjoin)। সুতরাং Copula শব্দটির অর্থ দাঁড়ায় দুটি বিষয়কে যুক্ত করা। বচনের ক্ষেত্রে এর অর্থ হল, উদ্দেশ্যকে বিধেয়ের সঙ্গে যুক্ত করা। এই যুক্ত করার বিষয়টি সদর্থকভাবেও হতে পারে, আবার নঞর্থকভাবেও হতে পারে। ব্যাকরণের অর্থে আমরা যাকে ক্রিয়াপদ (Verb)রুপে অভিহিত করি, তর্কবিদ্যায় আমরা তাকেই সংযােজক (Conula)রূপে উল্লেখ করি।

উদাহরণ

1. সকল দার্শনিক হয় চিন্তাশীল। 

2. কোনাে মানুষ নয় সুখী।

ব্যাখ্যা।

উদাহরণ দুটির প্রথমটিতে হয় পদটি সদর্থকভাবে উদ্দেশ্য এবং বিধেয় দুটির মধ্যে সংযােগ স্থাপন করেছে। এর ফলে এটি একটি সংযােজকরূপে গণ্য | আবার, দ্বিতীয় উদাহরণটিতে নয় পদটি নর্থকভাবে উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের মধ্যে সংযােগ সাধন করেছে| এর ফলে এটিও একটি সংযােজকরূপে গণ্য। সুতরাং বলা যায় যে, তর্কবিদ্যায় হয় অথবা নয় শব্দ দুটিকে সংযােজক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। 

[4] বিধেয়: বিধেয় (Predicate) হল বচনের শেষ অংশ। বিধেয়টি সবসময়েই সংযােজকের পরে অবস্থান করে। বিধেয় হল বচনের সেই অংশ যেখানে উদ্দেশ্য সম্পর্কে কোনাে কিছুকে স্বীকার করা হয়। বিধেয়টি সদর্থক অথবা নঞর্থক উভয়রূপেই গণ্য হতে পারে।

উদাহরণ

1. সকল দার্শনিক হন কবি। 

2. কোনাে দার্শনিক নন কবি।

ব্যাখ্যা

এই দুটি উদাহরণের ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, কবি শব্দটিকে বচনের । শেষে উল্লেখ করা হয়েছে। সেকারণেই এই শব্দটি বিধেয়রুপে গণ্য। প্রথম উদাহরণটিতে পদটি সদর্থকভাবে স্বীকৃত হয়েছে, কিন্তু দ্বিতীয় উদাহরণটিতে তা নঞর্থকভাবে উল্লিখিত হয়েছে। দুটি উদাহরণেই। এই বিধেয় পদটি উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রযুক্ত হয়েছে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

1 thought on “বচনের বিভিন্ন অংশ বা অবয়বগুলি আলোচনা করো। অথবা, নিরপেক্ষ বচনের অংশগুলি উদাহরণসহ আলােচনা”

Leave a Comment