প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা, এখানে আমরা বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ | উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আলোচনা করলাম। খুব সুন্দর করে গুছিয়ে এই প্রবন্ধ রচনাটি লেখা হয়েছে। আশা করি তোমাদের সবারই ভালো লাগবে। ধন্যবাদ
বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ
রবীন্দ্রোত্তর যুগে বাংলা কবিতার ধারায় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নাম জীবনানন্দ দাশ। রবীন্দ্রনাথের পরে তাঁর কবিতায় যে-নতুন কাব্যভাষার সাক্ষাৎ পাওয়া যায় তা অভিনব এবং আধুনিক। তাঁর সমসাময়িক অনেক কবির মতো তিনি কিন্তু প্রত্যক্ষভাবে রবীন্দ্রবিরোধে অবতীর্ণ হননি, আধুনিক হওয়ার জন্য প্রকাশ্য কোনো ঘোষণার মধ্যেও যাননি তিনি, অথচ প্রায় নিঃশব্দে বাংলা কবিতার যুগান্তর ঘটিয়ে দিয়েছেন।
১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত বাংলার বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন জীবনানন্দ। পিতা সত্যানন্দ দাশ, মাতা কুসুমকুমারী দাশ। পিতা সত্যানন্দ ছিলেন শিক্ষক এবং ব্রহ্মবাদী নামে একটি পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। মাতা কুসুমকুমারী দেবী ছিলেন কবি। শৈশবে জীবনানন্দের বিদ্যাচর্চার সূত্রপাত হয় বাড়িতে। তিনি বরিশালের ব্রজমোহন বিদ্যালয়ে একেবারে পঞ্চম শ্রেণিতে ভরতি হয়েছিলেন। এই বিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ থেকে আইএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজি অনার্স-সহ বিএ এবং ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি আইন পড়াও শুরু করেছিলেন কিন্তু শেষপর্যন্ত আর পরীক্ষা দেননি।
জীবনানন্দের কর্মজীবন ছিল অস্থিরতা আর অনিশ্চয়তায় জর্জরিত। তাঁর কর্মজীবনের সূচনা হয় কলকাতার সিটি কলেজে। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে তিনি ওই কলেজের ইংরেজি বিভাগে ‘টিউটর’-পদে যোগ দেন। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে কলেজের আর্থিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে আরও কয়েকজনের সঙ্গে জীবনানন্দকেও চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। সিটি কলেজের চাকরি চলে গেলে তিনি খুলনা বাগেরহাট কলেজে মাস তিনেকের জন্য অধ্যাপনা করেন। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি যোগ দেন দিল্লির রামযশ কলেজে। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে নিজের অবহেলায় তাঁর এই চাকরিটিও চলে যায়। মাঝে বেশ কিছুদিন কর্মহীন থাকার পর ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি বরিশালের ব্রজমোহন কলেজে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি এই চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে সপরিবারে কলকাতায় আসেন। কলকাতায় তিনি স্বরাজও দ্বন্দ্ব নামে দুটি পত্রিকায় কিছুদিন কাজ করেন। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে খড়গপুর কলেজে অধ্যাপনার কাজে যোগ দেন। এরপর তিনি ১৯৫২-তে যোগ দেন বরিষা কলেজে। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে বরিষা কলেজের চাকরি চলে গেলে ওই বছরেই তিনি যোগ দেন হাওড়া গার্লস কলেজে। আমৃত্যু তিনি হাওড়া গার্লস কলেজেই অধ্যাপক হিসেবে যুক্ত ছিলেন।
জীবনানন্দের কাব্যচর্চার সূত্রপাত অল্পবয়সেই। তবে তাঁর প্রথম কবিতা মুদ্রিত হয় ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ব্রহ্মবাদী পত্রিকায়। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ঝরাপালক। এই কাব্যে জীবনানন্দের স্বাতন্ত্র্য তেমন স্পষ্ট নয়। কিন্তু ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ধূসর পাণ্ডুলিপি- র কবিতাগুলিতে জীবনানন্দ উপস্থিত হন রবীন্দ্রোত্তর কালের এক বিশিষ্ট কবিরূপে। প্রকাশ পায় তাঁর স্বাতন্ত্র্য। ধূসর পাণ্ডুলিপির পরে তাঁর যেসব কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় সেগুলি হল— বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, সাতটি তারার তিমির এবং জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা। তাঁর মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয়—রুপসী বাংলা, বেলা অবেলা কালবেলা, মনবিহঙ্গম, আলোপৃথিবী প্রভৃতি। গভীর অনুভূতি ও উপলব্ধি এবং চিত্ররূপময়তায় তাঁর কবিতা এক আশ্চর্য শিল্পলোকে উত্তীর্ণ হয়েছে। তাঁর কবিতায় বস্তুজগতের সঙ্গে সঙ্গে ভাবজগৎও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য হয়ে ওঠে। বঙ্গভূমির স্নিগ্ধশান্ত রূপটি যেমন তিনি অঙ্কন করেছেন, তেমনি ফুটিয়ে তুলেছেন মহাযুদ্ধপরবর্তী নাগরিক জীবনের জটিলতা।
জীবনানন্দ কবিতার পাশাপাশি বহু গল্প-উপন্যাসও রচনা করেছেন। কিন্তু তাঁর জীবদ্দশায় এগুলি প্রায় লোকচক্ষুর অন্তরালেই থেকে গিয়েছিল। এখন সেগুলি প্রকাশিত হওয়ার ফলে তাঁর সম্পর্কে নতুন চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। জলপাইহাটি, মাল্যবান, সুতীর্থ, কারুবাসনা, জীবনপ্রণালী প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। তাঁর লেখা ছোটোগল্পের সংখ্যাও অনেক। তিনি সাহিত্য বিষয়ক প্রবন্ধ রচনাতেও ছিলেন সিদ্ধহস্ত। কবিতার কথা তাঁর একটি উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ সংকলন।
১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের ১৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় রাস্তা পার হতে গিয়ে তিনি ট্রাম দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। ২২ অক্টোবর তাঁর জীবনাবসান ঘটে। এভাবে হঠাৎ তাঁর জীবনে যবনিকা নেমে না এলে তিনি হয়তো আরও বেশ কিছুদিন সাহিত্যচর্চার সুযোগ পেতেন, বাংলা সাহিত্যজগৎ আরও সমৃদ্ধ হত। তবু যেটুকু তিনি দিয়ে গেছেন তার মূল্যও অপরিসীম।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।
পড়ে আমার মন ভরে গেলো
It’s good 👍