বাংলায় নীল বিদ্রোহের কারণগুলি উল্লেখ করে। 4 Marks/Class 10
উত্তর:–
ভূমিকা : ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে নীলচাষিদের নীলকর সাহেবদের অমানুষিক অত্যাচার ও নির্মম শােষণের বির ১৮৫৯-৬০ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় নীলচাষিদের সংঘবদ্ধ আন্দোলন নীলবিদ্রোহ নামে পরিচিত।
১) নীলচাষের পদ্ধতি : নীলকররা গরিব চাষিদের নিরক্ষরতার সুযােগ নিয়ে কম টাকা দাদন দিয়ে বেশি টাকার চুক্তি করে তাদের নীলচাষ করাতে বাধ্য করত।
২) নীলকর সাহেবদের অত্যাচার : কৃষকদের প্রতি নীলকরদের অত্যাচার, লুণ্ঠন, শােষণ, দৌরাত্ম্য, ব্যভিচার, লাম্পট্য ছিল এই বিদ্রোহের অন্যতম কারণ।
৩) নীলকরদের সরকারি সমর্থন : ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনে শ্বেতাঙ্গদের জমি কেনার অধিকার ও তারও আগে। সরকারের দাদনি প্রথাকে সমর্থন, একাদশ আইন দ্বারা ‘দাদন’ গ্রহণকারী কৃষকদের নীলচাষ করতে বাধ্য করা প্রভৃতি কারণে তীব্র জনরােষের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
৪) নীলের কম দাম প্রদান : রায়তদের উৎপাদিত নীলের দাম দেওয়া হত ২ টাকা ৮ আনা অথচ সেই নীলের বাজার দর ছিল ১০ টাকা, অর্থাৎ প্রতি কেজি নীলে কৃষকদের ৭ টাকা ৮ আনা ঠকানাে হত।
৫) পঞ্চম আইন : ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে লর্ড বেন্টিঙ্কের শাসনকালে পঞম আইনে বলা হয়, ‘দাদন’ নিয়ে নীলচাষ না করলে তা বে-আইনি বলে গণ্য হবে এবং অপরাধীর জেল হবে।
৬) পক্ষপাতদুষ্ট বিচারব্যবস্থা : নীলকরদের বিরুদ্ধে সরকারি আদালতে নালিশ করলেও শ্বেতাঙ্গ ম্যাজিস্ট্রেটরা স্ব-জাতীয় শ্বেতাঙ্গ নীলকরদের প্রতি পক্ষপাত দেখাতেন এবং মফস্সলে ভারতীয় বিচারকরা শ্বেতাঙ্গ নীলকরদের বিচার করতে পারত না।
৭) অন্যান্য বিদ্রোহের প্রভাব : ফরাজি, ওয়াহাবি, সাঁওতাল, কোল বিদ্রোহের ঘটনাক্রম নীলচাষিদের মনে সাহস সঞ্চার করে।

উপসংহার : উপরিউক্ত নানা কারণে দিগম্বর বিশ্বাস, বিষ্ণুচরণ বিশ্বাস, বৈদ্যনাথ সর্দার, বিশ্বনাথ সর্দার, রহিম উল্লা, রফিক মণ্ডল মহেশ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখের নেতৃত্বে নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে বাংলার অনিচ্ছুক নীলচাষিদের বিদ্রোহ সংঘটিত হয়।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।