বর্তমান ভারত গ্রন্থে বিবেকানন্দের জাতীয়তাবাদের রূপ কীভাবে প্রস্ফুটিত হয়েছে?

প্রশ্ন – বর্তমান ভারত’ গ্রন্থে বিবেকানন্দের জাতীয়তাবাদের রূপ কীভাবে প্রস্ফুটিত হয়েছে? Class 10 | 8 Marks

উত্তর) ভূমিকা : স্বামী বিবেকানন্দের বর্তমান ভারত’ গ্রন্থটি শুধুমাত্র ভারতবর্ষের নয় বরং সমগ্র মানবজাতির উত্থানপতনের একটি সুচিন্তিত সমাজতাত্ত্বিক ইতিহাস।

বর্তমান ভারত ও জাতীয়তাবাদ : এই গ্রন্থে স্বামীজি দেখিয়েছেন যে

১) শূদ্র জাগরণ : ব্রাত্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্য চক্রবৎ পর্যায়ক্রমে ভারতে আধিপত্য বিস্তার করে। বৈদিক যুগে ছিল ব্রাত্মণদের আধিপত্য, তার পরে সাম্রাজ্যবাদের যুগে প্রতিষ্ঠিত হয় ক্ষত্রিয়দের আধিপত্য, তারপরে এসেছে বণিক বা বৈশ্য ইংরেজদের যুগ। বিবেকানন্দের মতে, এই যুগেই ঘটবে শূদ্র জাগরণ, অর্থাৎ পরাধীন ভারতবর্ষের জাগরণ। তিনি বলেছেন, এমন দিন খুব। শীঘ্রই আসছে যেদিন শূদ্ৰত্বের সহিত শূদ্রের প্রাধান্য হইবে, শূদ্ররা সমাজে একাধিপত্য লাভ করিবে, ………..

 ২) ভারতের বােধিলাভ : বিবেকানন্দ এ কথাই বােঝাতে চেয়েছেন যে পাশ্চাত্য শিক্ষা সভ্যতা ও সংস্কৃতির সংস্পর্শে। এসে ভারতবাসীর যে ‘বােধি লাভ ঘটেছে, তাতেই সৃষ্টি হয়েছে। এক নতুন ভারতীয় সমাজ। এরাই একদিন ভারতবর্ষকে মুক্তির পথ দেখাবে। 

৩) পরানুকরণে নিষেধাজ্ঞা : বিবেকানন্দ বর্তমান ভারত’ গ্রন্থে। বিদেশি পাশ্চাত্য শাসনের দোষ-গুণ বিচার করে দেখিয়েছেন যে, এর সংস্পর্শে এসে দীর্ঘ সুপ্ত ভারত ধীরে ধীরে জেগে উঠেছে। আধুনিক পাশ্চাত্যের অর্থকরী বিদ্যা, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রনীতির আদর্শ ধীরে ধীরে ভারতীয় মনকে প্রভাবিত করেছে। কিন্তু নিজের আদর্শকে বিস্মৃত হয়ে আমরা যেন পরাণুকরণেই প্রবৃত্ত না হই। 

৪) নতুন ভারত গঠন : স্বামীজি ভারতবাসীর উদ্দেশ্যে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে নতুন ভারত গঠনের কথা বলেন। এই বিবেকানন্দের ভারতবর্ষ হল সেই ভারতবর্ষ, যা পরানুকরণহীন স্বকীয় তেজে উদ্দীপ্ত, সর্বপ্রকারে স্বাধীন, চিন্তা-ভাবনায় চরিত্রে মননে সর্বতােভাবে।

৫) স্বদেশচেতনা : “ভারতবাসী আমার ভাই, ভারতবাসী আমার প্রাণ, ভারতের দেবদেবী আমার ঈশ্বর, ভারতের মৃত্তিকা আমার শিশুশয্যা, আমার যৌবনের উপবন, আমার বার্ধক্যের বারাণসী-বল ভাই ভারতের মৃত্তিকা আমার স্বর্গ, ভারতের কল্যাণ আমার কল্যাণ”–বর্তমান ভারত’ প্রবন্ধে এই উক্তির মাধ্যমে বিবেকানন্দ দেশবাসীর মধ্যে স্বদেশচেতনা ও দেশপ্রেম জাগ্রত করতে চেয়েছিলেন। 

৬) সামাজিক সংহতি : সমাজের অস্পৃশ্যতা ও জাতিভেদপ্রথা দূর করে সামাজিক সংহতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতীয়তাবাদকে শক্তিশালী করে তুলতে বিবেকানন্দ বর্তমান ভারত’-এ বলেছেন, “….ভুলিও না নীচ জাতি, মুখ, দরিদ্র, অজ্ঞ, মুচি-মেথর তােমার রক্ত, তােমার ভাই।” 

৭) আত্মনির্ভরশীলতা : স্বামী বিবেকানন্দ এই গ্রন্থে পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণের পরিবর্তে দেশজ সংস্কৃতিকে অনুসরণ করার কথা বলে দেশবাসীর মধ্যে স্বদেশি চেতনা ও আত্মনির্ভরশীল হওয়ার কথা প্রচার করেন। 

৮) দেশের জন্য আত্মত্যাগের আহ্বান : বর্তমান ভারত’ প্রবন্ধে বিবেকানন্দ দেশবাসীকে দেশের জন্য আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ করে বলেছেন, “হে ভারত-ভুলিও না—তুমি জন্ম হইতেই মায়ের জন্য বলিপ্রদত্ত, ভুলিও না—তােমার সমাজ যে বিরাট মহামায়ার ছায়ামাত্র। হে বীর, সাহস অবলম্বন কর, সদর্পে বল—আমি ভারতবাসী, ভারতবাসী আমার ভাই।”

উপসংহার : বিবেকানন্দ বর্তমান ভারত’-এ দেশকে মাতৃরূপে কল্পনা করে তার মুক্তির জন্য আত্মােৎসর্গের আদর্শ তুলে ধরেছিলেন—তাতে উচ্চনীচ, ধনী-নির্ধন কেউই বাদ পড়েনি। তার। প্রেরণাতেই দেশপ্রেম ধর্মের বিকল্প হয়ে উঠেছিল এবং তার আদর্শ ও চিন্তাধারার ছাপ পরবর্তীকালে জাতীয় আন্দোলনে ছাপ ফেলেছিল।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment