বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানের প্রভাব বর্ণনা করাে

বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানের প্রভাব বর্ণনা করাে ? Class 10 | Geography | 5 Marks

উত্তর: বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানের প্রভাব বায়ুমণ্ডলের প্রায় প্রতিটি উপাদানই প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষ ভাবে মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তার করে, যেমন— 

1. নাইট্রোজেন (78.08%): 1) মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে: শুটি জাতীয় উদ্ভিদের মূলে বসবাসকারী কতকগুলি ব্যাকটেরিয়া (যেমন রাইজোবিয়াম) বায়ুমণ্ডল থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে মাটির উর্বরাশক্তি বাড়িয়ে দেয়। 2) সার উৎপাদনে: বর্তমানে বায়ুমণ্ডল থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে সার উৎপাদনের কাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে। 3) নাইট্রোজেনের চাহিদা পুরণে: বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেন পরােক্ষভাবে উদ্ভিদ ও প্রাণীর শরীরে নাইট্রোজেনের চাহিদা পূরণ করে। 

2. অক্সিজেন (20.94%): 1) শাসকার্যে: অক্সিজেন ছাড়া জীবজগতের অস্তিত্বই অসম্ভব। কারণ, অক্সিজেন ছাড়া শ্বাসকার্য। সম্ভব নয় বলে বেঁচে থাকার জন্য সকল প্রাণীই অক্সিজেনের ওপর নির্ভরশীল। 2) শিলার আবহবিকারে: অক্সিজেন রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিলার আবহবিকার বা বিচূর্ণীভবন (জারণ) ঘটায়। 3) দহন ক্রিয়ায় : কেবল অক্সিজেনের উপস্থিতিতেই দহনক্রিয়া সম্ভব। 4) লােহার ক্ষয়সাধনে: জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিতে অক্সিজেন মরিচা সৃষ্টির মাধ্যমে লােহার ক্ষয় সাধন করে। 

3. কার্বন ডাইঅক্সাইড (0.03%): 1) সালােকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায়: কার্বন ডাইঅক্সাইড ছাড়া উদ্ভিদ খাদ্য তৈরি করতে পারে না (উদ্ভিদ সালােকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় বায়ুর কার্বন ডাইঅক্সাইডের সাহায্যে খাদ্য প্রস্তুত করে)। আর প্রাণীজগৎ খাদ্যের জন্য প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল। 2) তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে: বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেও এই গ্যাসটির বিশেষ ভূমিকা আছে। 3) রাসায়নিক আবহবিকারে: কার্বন ডাইঅক্সাইড শিলার রাসায়নিক আবহবিকারে (কার্বনেশন) সাহায্য করে। আবহবিকার দ্বারা বিভিন্ন ভূমিরূপ সৃষ্টিতে: কার্বন ডাইঅক্সাইড চুনাপাথর ও ডলােমাইট শিলায় রাসায়নিক আবহবিকার ঘটিয়ে বিভিন্ন ধরনের। ভূমিরূপ (স্ট্যালাকটাইট, স্ট্যালাগমাইট প্রভৃতি) গঠন করে। 5) খনিজ পদার্থ গঠনে: অঙ্গারময় খনিজ এবং চুন-জাতীয় খনিজ গঠনে কার্বন ডাইঅক্সাইডের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। 

4. ওজোন : ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে 24-40 কিমির মধ্যে যে ওজোন গ্যাসের স্তর পৃথিবীকে বেষ্টন করে রয়েছে, তার জন্যেই সূর্য থেকে ছুটে আসা ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি ভূপৃষ্ঠে পৌঁছােতে পারে না। ফলে পৃথিবী ক্ষতিকর রশ্মির হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে। 

5. জলীয় বাষ্প : 1) মেঘ সৃষ্টিতে: বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্প আছে। বলেই মেঘ সৃষ্টি হয় এবং ওই মেঘ থেকেই বৃষ্টি হয়। 2) জীবনের অস্তিত্ব রক্ষায়: জলের অপর নাম জীবন। জলীয় বাষ্প তথা জল না। থাকলে পৃথিবীতে জীবনের কোনাে অস্তিত্ব থাকত না। 3) শিশির, কুয়াশা প্রভৃতি সৃষ্টিতে: জলীয় বাষ্পের জন্যই পৃথিবীতে শিশির, কুয়াশা, তুহিন ও তুষার সৃষ্টি হয়। 

6. ধূলিকণা : 1) মেঘ ও কুয়াশা সৃষ্টিতে: বায়ুমণ্ডলে ভাসমান । ধূলিকণাকে আশ্রয় করেই জলীয় বাষ্প জলবিন্দুতে পরিণত হয় বা মেঘ ও কুয়াশা সৃষ্টি হয়। 2) উত্তাপের বণ্টনে: বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণাসমূহ সূর্যরশ্মি দ্বারা সরাসরি উত্তপ্ত হয়ে বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে এবং পৃথিবীতে সৌরতাপ বণ্টনের প্রভাব বিস্তার করে। 3) সুর্যের আলাের বিচ্ছুরণে: ধূলিকণার দ্বারা সূর্যের আলাে বিচ্ছুরিত হয়ে দিনের বেলা পৃথিবীকে আলােকিত করে রাখে। 4) উষা ও গােধূলি সৃষ্টিতে:বায়ুমণ্ডলে ধূলিকণার উপস্থিতির জন্য উষা ও গােধূলির সৃষ্টি হয়। 5) আকাশের বর্ণ নির্ধারণে: বায়ুমণ্ডলে ধূলিকণা থাকায় আকাশ নীল দেখায়।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment