বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাসের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও

বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাসের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। অথবা, তাপমাত্রার তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস করাে। ? Class 10 | Geography | 5 Marks

উত্তর: বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস তাপমাত্রার তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলকে ছয়টি স্তরে ভাগ করা যায়, যেমন—

1. ট্রপােস্ফিয়ার বা ক্ষুন্ধমণ্ডল

অবস্থান: বায়ুমণ্ডলের একেবারে নীচের সর্বাধিক ঘনত্বযুক্ত স্তরটির নাম ট্রপােস্ফিয়ার বা ক্ষুদ্ধমণ্ডল। ইংরেজি ‘ট্রপােস্ফিয়ার’ শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘ট্রপাে’ (যার অর্থ পরিবর্তন’ বা ‘অশান্ত’) এবং ‘স্ফিয়ার’ (যার অর্থ অঞ্চল) থেকে উদ্ভূত। 

বিস্তার: নিরক্ষীয় অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠ থেকে 16-18 কিমি ও মেরু অঞ্চলে 8-9 কিমি (গড় উচ্চতা 12 কিমি) উচ্চতা এই স্তর পর্যন্ত বিস্তৃত।

বৈশিষ্ট্য: [i] উন্নতা; এই স্তরে প্রতি 1000 মিটার উচ্চতায় বায়ুর উয়তা 6.4°সে হারে কমতে থাকে। এই কারণে ট্রপােস্ফিয়ারের উধ্ব বা শেষ সীমায় বায়ুর উয়তা কমে হয় প্রায় –55 °সে থেকে –66 °সে। [ii] ভর: বায়ুমণ্ডলের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ এই স্তরে বায়ুমণ্ডলের মােট ভরের তিন-চতুর্থাংশ পাওয়া যায়। [iii] আবহাওয়ার গােলযােগ: বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে বিভিন্ন। গ্যাসীয় উপাদান, জলীয় বাষ্প, ধূলিকণা ও লবণের কণা থাকে। মেঘের সৃষ্টি ও বায়ুপ্রবাহ প্রধানত এই স্তরেই দেখা যায়। ঘূর্ণবাত, টর্নেডাে, বৃষ্টিপাত, বজ্রপাত প্রভৃতি ঘটনা ট্রপােস্ফিয়ারেই কেবল ঘটে। তাই ট্রপােস্ফিয়ারকে ক্ষুদ্ধমণ্ডল বলা হয়। [iv] ট্রলােপজ: ট্রপােস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমাকে বলে ট্রলােপজ। এখানে উন্নতা কমেও না বা বাড়ে না অর্থাৎ প্রায় ধ্রুবক থাকে। 

2. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা শান্তমণ্ডল

অবথান: ট্রপােস্ফিয়ারের ঠিক উর্ধ্বে বায়ুমণ্ডলের দ্বিতীয় স্তরটির নাম স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা শান্তমণ্ডল। ইংরেজি স্ট্রাটোস্ফিয়ার’ শব্দটি গ্রিক স্ট্র্যাটো’ (যার অর্থ শান্ত’ অথবা ‘স্থির’) এবং “স্ফিয়ার’ (যার অর্থ ‘অঞ্চল’) থেকে উদ্ভূত। 

বিস্তার: ট্রপােস্ফিয়ারের ওপর 12 থেকে 50 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত এই স্তর বিস্তৃত।

বৈশিষ্ট্য: [i] ওজোনােস্ফিয়ার: স্ট্রাটোস্ফিয়ারের 24-40 কিমি। উচ্চতার মধ্যে ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব খুব বেশি থাকে। এই কারণে এই অংশের নাম ওজোননাস্ফিয়ার। এই স্তর সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি শােষণ করে জীবজগতকে ক্ষতিকর রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করে। [ii] মুক্তা মেঘ: স্ট্রাটোস্ফিয়ারে মেঘ ও বায়ুপ্রবাহ বিশেষ থাকে না। তবে মেরু অঞলে নিম্ন স্ট্রাটোস্ফিয়ারে বরফের কেলাস দিয়ে গঠিত মুক্তা মেঘ নামে একপ্রকার মেঘ দেখা যায়। [iii] বিমান চলাচল – স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে বায়ুপ্রবাহ না থাকায়। ঘর্ষণজনিত বাধাও খুব কম। এজন্য এই স্তর দিয়ে জেট বিমান। চলাচল করে। [iv] উন্নতা: স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে। সঙ্গে বায়ুর উয়তা 50 কিমি উচ্চতায় বেড়ে হয় প্রায় 0°সে। প্রধানত ওজোনের অণুগুলি দ্বারা অতিবেগুনি রশ্মি শােষিত হওয়ার কারণে এই স্তরে উয়তা বাড়ে। [v] স্ট্রাটোপজ: স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমার নাম স্ট্রাটোপজ। 

3. মেসােস্ফিয়ার বা মধ্যমণ্ডল

অবস্থান: বায়ুমণ্ডলের তৃতীয় স্তর বা স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ঠিক ঊর্ধের স্তরটির নাম মেসােস্ফিয়ার বা মধ্যমণ্ডল। ইংরেজি ‘মেসােস্ফিয়ার’ শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘মেসাে’ (যার অর্থ ‘মধ্যম) এবং ‘স্ফিয়ার’ (যার অর্থ ‘অঞ্চল’ বা ‘মণ্ডল’) থেকে উদ্ভূত।

বিস্তার: স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ওপর 50-80 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত এই স্তর। বিস্তৃত। 

বৈশিষ্ট্য: [i] উয়তা:এই স্তর থেকে উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর উয়তা ক্রমশ কমতে থাকে এবং 80 কিমি উচ্চতায় উয়তা কমে হয়। প্রায় –93 °সে। [ii] উল্কাপিন্ডের বিনাশ: মহাকাশ থেকে পৃথিবীর। দিকে আগত উল্কা এই স্তরে এসে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। [ii] মেসোপজ: মেসােস্ফিয়ারের ঊধ্বসীমাকে বলা হয় মেসােপজ। 

4. আয়নােস্ফিয়ার ও থার্মোস্ফিয়ার

অবস্থান: বায়ুমণ্ডলের তৃতীয় স্তর বা মেসােস্ফিয়ারের ঠিক ঊর্ধ্বের স্তরটিকে আয়নােস্ফিয়ার বলে। আয়নােস্ফিয়ারের ওপরের অংশটিকে থার্মোস্ফিয়ার বলা হয়। এখানকার গ্যাসীয় কণাগুলি। তড়িৎ-আধানযুক্ত বা আয়নাইজড বলে এই স্তরের নাম আয়নােস্ফিয়ার। আর ইংরেজি ‘থার্মোস্ফিয়ার’ শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘থার্মো’ (যার অর্থ ‘তাপ’) এবং ‘স্ফিয়ার’ (যার অর্থ ‘অঞল’ বা মণ্ডল’) থেকে উদ্ভূত।

বিস্তার: মেসােস্ফিয়ারের ওপর 80-600 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত এই স্তর বিস্তৃত। 

বৈশিষ্ট্য: [i] তড়িৎগ্রস্ত কণার উপস্থিতি: অসংখ্য ধনাত্মক ও ঋণাত্মক তড়িৎগ্রস্ত কণা বা আয়ন থাকায় এই স্তরটিকে আয়নােস্ফিয়ার বলে। [ii] কেনেলি-হেভিসাইড স্তর: আয়নােস্ফিয়ারের মধ্যে 90 থেকে 160 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলটির নাম কেনেলি-হেভিসাইড স্তর। এই স্তর স্বল্প দৈর্ঘ্যের বেতার তরঙ্গগুলিকে প্রতিফলিত করে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে রেডিয়াে যােগাযােগ সম্ভব করেছে। [iii] মেরুজ্যোতি: এই স্তরেই সুমেরুতে সুমেরুপ্রভা ও কুমেরুতে কুমেরুপ্রভা নামে মেরুজ্যোতির সৃষ্টি হয়। [iv] উন্নতা; এই স্তরে উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উয়তা অতি দ্রুত হারে বাড়তে থাকে এবং ঊর্ধ্বসীমায় তাপমাত্রা হয় প্রায় 1200 °সে। 

5. এক্সোস্ফিয়ার বা বহিঃমণ্ডল

অবস্থান: বায়ুমণ্ডলের পঞ্চম স্তরটির নাম এক্সোস্ফিয়ার। 

বিস্তার: আয়নােস্ফিয়ারের ওপর 600-1500 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত এই স্তর বিস্তৃত।

বৈশিষ্ট্য: [i] বায়বীয় কণার নির্গমণ: এক্সোস্ফিয়ার স্তর থেকে বায়বীয় কণাগুলি ক্রমাগত মহাশূন্যে নির্গত হয়। [ii] গঠন: এক্সোস্ফিয়ার অত্যন্ত কম ঘনত্বের হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাস দ্বারা গঠিত। [iii] উচ্চতা ও উন্নতার সম্পর্ক: এই স্তরেও উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে উয়তা বাড়ে, তবে থার্মোস্ফিয়ারের মতাে অত দ্রুত নয়। [iv] উয়তা:এই স্তরের উয়ত প্রায় 1200 °সে থেকে 1600 °সে।

6.ম্যাগনেটোস্ফিয়ার বা চৌম্বকমণ্ডল

অবস্থান: এক্সোস্ফিয়ারের পরবর্তী স্তর ম্যাগনেটোস্ফিয়ার নামে পরিচিত।

বিস্তার: এক্সোস্ফিয়ারের ওপর 1500 কিমি থেকে -10000 কিমি বা তারও বেশি অর্থাৎ ঊর্ধ্বসীমা অনির্দিষ্ট।

বৈশিষ্ট্য: [i] স্থায়ী চুম্বকীয় ক্ষেত্র: সৌর বাত্যা (solar wind) থেকে নির্গত ইলেকট্রন ও প্রােটনের প্রভাবে এই স্তরে একটি স্থায়ী চুম্বকীয় ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়েছে। তাই এই স্তরের নাম। ম্যাগনেটোস্ফিয়ার। [ii] ইলেকট্রন ও মুক্ত আয়নগুলির সংঘবদ্ধ অবস্থান: এই স্তরে তড়িৎচুম্বকীয় শক্তির প্রভাবে ইলেকট্রন ও মুক্ত আয়নগুলি সংবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। [ii] ভ্যান অ্যালেন বিকিরণ বলয়: এই স্তরেই সৃষ্টি হয়েছে ভ্যান অ্যালেন বিকিরণ বলয়। [iv] মহাশূন্যে বিলীন হওয়া: এই স্তরটি ধীরে ধীরে বায়ুশূন্য হয়ে মহাশূন্যে বিলীন হয়ে যায়।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!