প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা এই আর্টিকেলে আমরা Class 11 এর ভাব সম্মিলন কবিতার প্রশ্ন উত্তর নিয়ে এসেছি। তোমাদের একাদশ শ্রেনীর Semester 2 -তে বিদ্যাপতির লেখা ভাব সম্মিলন কবিতা রয়েছে। এখান থেকে ২ ও ৩ নম্বরের সম্ভাব্য সমস্ত প্রশ্ন উত্তর গুলি আমরা এখানে দিয়ে দিলাম। আশা করি সবার ভালো লাগবে।
ভাব সম্মিলন
বিদ্যাপতি
ভাব সম্মিলন কবিতার প্রশ্ন উত্তর | বিদ্যাপতি | Bhab Sammilon Poem Question Answer
২ নম্বরের প্রশ্ন উত্তর
ভাব সম্মিলন বলতে কী বোঝ?
উত্তর : কৃষ্ণ মথুরায় চলে যাওয়ার পর আর বৃন্দাবনে ফিরে আসেননি। কিন্তু বৈস্নব মহাজনরা রাধার বিরহ কাতরতা দেখতে পারছিলেন না। তাই বাস্তবে না-হলেও তাঁরা রাধাকৃষ্ণের মানসিক মিলনের ব্যবস্থা করে দেন, এই মিলনই হল ভাব সম্মিলন।
বিদ্যাপতি যে ভাষায় পদ লিখেছেন সেই ভাষা দ্বারা প্রভাবিত দুজন কবির নাম লেখো।
উত্তর : বিদ্যাপতি যে ভাষায় পদ লিখেছেন তা ব্রজবুলি ভাষা নামে পরিচিত। ব্রজবুলি ভাষা দ্বারা প্রভাবিত দুজন কবি হলেন—বৈস্নব কবি গোবিন্দদাস ও বাঙালি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
“কি কহব রে সখি আনন্দ ওর’ কথাটি কে, কার উদ্দেশে বলেছেন? ২
উত্তর : কৃষ্ণের সঙ্গে মিলনে উল্লসিতা রাধা আনন্দ-উচ্ছ্বসিত হয়ে সখীকে সম্বোধন করে বলেছেন, তাঁর আনন্দের সীমা নেই।
‘পিয়া-মুখ-দরশনে তত সুখ ভেল’–অংশটির অর্থ লেখো।
উত্তর : চন্দ্রকিরণ বিরহিণী রাধার মনে যে মিলনেচ্ছা বাড়িয়েছিল পিয়া-মুখ’ অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের মুখ দেখে (অবশ্যই কল্পনায়) ততটাই সুখানুভূতি লাভ করেছিলেন শ্রীরাধিকা ৷
বাঙালি পাঠকসমাজ বিদ্যাপতিকে কী কী অভিধায় ভূষিত করেছেন?
উত্তর : বাঙালি পাঠকসমাজ বিদ্যাপতির কাব্যরস আস্বাদন করে তাঁকে ‘অভিনব জয়দেব’ ও ‘মৈথিলি কোকিল’ অভিধায় ভূষিত করেছেন।
‘আঁচর ভরিয়া যদি মহানিধি পাই’–বক্তা আঁচর ভরে যদি মহানিধি পান তবুও তিনি কী করতে চান না?
উত্তর : উদ্ধৃত অংশটির বক্তা মিলনে উল্লসিতা শ্রীরাধিকা। কৃষ্ণসঙ্গ বঞ্চিতা শ্রীরাধিকা দীর্ঘ অপেক্ষার পর ভাবকল্পনায় যখন শ্রীকৃঘ্ন দর্শন পেয়েছেন, তখন কেউ তাঁকে আঁচল ভরে মূল্যবান রত্ন দিলেও তিনি তাঁর প্রিয়কে দূরদেশে পাঠাতে চান না।
‘তব হাম পিয়া দূর দেশে না পাঠাই’–বক্তা পিয়াকে কেন দূরদেশে না-পাঠানোর কথা বলেছেন?
উত্তর : প্রশ্নে আলোচিত উদ্ধৃতিটির বক্তা শ্রীরাধিকা। বৃন্দাবন থেকে কৃষ্ণ মথুরা চলে যাওয়ার ফলে শ্রীরাধিকা বিরহকাতরা হয়ে পড়েন। ভাব সম্মিলন পর্যায়ে শ্রীরাধিকা কাল্পনিক মিলনে যে সুখানুভূতি লাভ করেছিলেন সেই প্রেক্ষিতেই বলেছেন যে, কেহ যদি তাঁকে আঁচলভরে মূল্যবান রত্নও দেন তবু শ্রীরাধিকা তার প্রিয়কে দূরদেশে পাঠাবেন না ।
‘ভণয়ে বিদ্যাপতি শুন বরনারি।’—কবি বিদ্যাপতি ভণিতায় পাঠকের উদ্দেশ্যে কোন্ চিরন্তন সত্যটি ব্যক্ত করেছেন ?
উত্তর : কবি বিদ্যাপতি তাঁর ভণিতায় পাঠকের উদ্দেশ্যে বলেছেন যে, ভালো মানুষের জীবনে দুঃখ দু-চার দিনের বেশি স্থায়ী হয় না।
‘চিরদিনে মাধব মন্দিরে মোর’—কথাটি কার এবং কথাটির অর্থ কী? ২
উত্তর : প্রশ্নোদ্ধৃত কথাটি মিলনে উল্লসিতা শ্রীরাধিকার।
‘চিরদিনে মাধব মন্দিরে মোর’ কথাটির অর্থ ‘মাধব চিরদিনই তাঁর গৃহে অবস্থান করছেন।’
শীতের ওঢ়নী পিয়া গীরিষির বা।/বরিষার ছত্র পিয়া দরিয়ার না’–বক্তা উপমাগুলি কী অর্থে ব্যবহার করেছেন?
উত্তর : বিরহাকাতরা শ্রীরাধিকা তাঁর প্রিয় শ্রীকৃষ্ণ যে তাঁর কাছে কতটা অপরিহার্য, তা বোঝাতে গিয়ে শীতের আচ্ছাদন, গ্রীষ্মের বাতাস, বর্ষার ছাতা ও অকুল সমুদ্রের তরণির মতো উপমাগুলি ব্যবহার করেছেন।
ভাব সম্মিলনে কৃয়ের সাথে নিজের অস্তিত্ব রক্ষার্থে রাধিকা কোন অনিবার্য প্রয়োজনের তুলনা করেছেন ?
উত্তর : নিজের অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনে রাধিকা কৃষ্ণকে তাঁর শীতের আচ্ছাদন, গ্রীষ্মের বাতাস, বর্ষার ছাতা আর অকুল সমুদ্রের তরণির সঙ্গে তুলনা করেছেন ।
ভাব সম্মিলন পর্যায়ে শ্রীরাধিকার মনে আনন্দের সীমা নেই কেন? ২
উত্তর : ভাব সম্মিলন পর্যায়ে কৃষ্ণের সাথে রাধিকার যে কাল্পনিক মিলন সংঘঠিত হয়েছে তা থেকে বিরহিণী শ্রীরাধিকা ব্যক্ত করেছেন যে, তাঁর আনন্দের সীমা নেই; কারণ মাধব চিরদিনই তাঁর ঘরে অবস্থান করছে।
‘পাপ সুধাকর যত দুখ দেল’– ‘সুধাকর’ শব্দের অর্থ উল্লেখ করে তাকে পাপী বলার কারণ কী?
উত্তর : ‘সুধাকর’ শব্দের অর্থ ‘চাঁদের কিরণ’ বা ‘জ্যোৎস্না’। মথুরা গমনের ফলে কৃষ্ণসঙ্গ বঞ্চিত শ্রীরাধিকার কামবেগ (মিলনেচ্ছা) বাড়িয়েছে চন্দ্রকিরণ তাই বিরহকাতরা শ্রীরাধিকা সুধাকরকে ‘পাপী’ আখ্যা দিয়েছেন।
বৈষ্ণব পদাবলী ছাড়া বিদ্যাপতি কী কী গ্রন্থ লিখেছেন?
উত্তর : বৈয়ব পদাবলী ছাড়া বিদ্যাপতি ‘কীর্তিলতা’, ‘ কীৰ্তি পতাকা’, ‘ভূপরিক্রমা’, ‘দুর্গাভক্তিতরঙ্গিনী’, ‘হরগৌরী’ বিষয়ক গ্রন্থ লিখেছেন ।
‘ব্রজবুলি’ ভাষা বলতে কী বোঝ?
উত্তর : বৈষ্ণব পদাবলী রচনার উদ্দেশ্যে সৃষ্ট একটি কৃত্রিম ভাষার নাম ‘ব্রজবুলি’। নানান কথা প্রচলিত থাকলেও মূলত অবহট্ঠ ও মৈথিলি ভাষার সংমিশ্রণে গঠিত সমধুর এই সাহিত্যিক ভাষার নাম ব্রজবুলি। বিদ্যাপতি এই ভাষায় পদ রচনা করেছেন। কবি ঈশ্বর গুপ্ত ‘ব্রজবুলি’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন।
বিদ্যাপতি কোন্ কোন্ পর্যায়ের পদ রচনায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন? ২
উত্তর : বিদ্যাপতি পূর্বরাগ, অভিসার, মাথুর, প্রার্থনা, ভাব সম্মিলন প্রভৃতি পর্যায়ের পদ রচনায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন।
বিদ্যাপতি কোন্ কোন্ রাজা ও রানির পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছিলেন?
উত্তর : বিদ্যাপতি ছয় জন রাজা—শিবসিংহ, কীর্তিসিংহ, দেবসিংহ, পদ্মসিংহ, পুরাদিত্য, ভৈরবসিংহ এবং রানি বিশ্বাস দেবীর পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছিল।
‘বিদ্যাপতি বাঙালি কবি নন’ এ কথা কে প্রমাণ করেন?
উত্তর : ১৮৫৭ সালে বঙ্গদর্শন পত্রিকায় প্রকাশিত রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় তাঁর গবেষণামূলক গ্রন্থ ‘বিদ্যাপতি’-তে প্রথম প্রমাণ করেন ‘বিদ্যাপতি বাঙালি কবি নন।’
৩ নম্বরের প্রশ্ন উত্তর
‘কি কহব রে সখি আনন্দ ওর।–বক্তার এমন আনন্দের কারণ কী? ৩
উত্তর : প্রশ্নোদ্ধৃত কথাটি ‘ভাব সম্মিলন’ পর্যায়ের শ্রীরাধিকার। কৃষ্ণ মথুরা চলে যাওয়ার পর আর কোনোদিন বৃন্দাবনে ফিরে আসেননি। কিন্তু বৈষ্ণব মহাজনগণ রাধার বিরহকাতরা অবস্থা দেখতে পারছিলেন না। তাই বাস্তবে না-হলেও তাঁরা রাধাকৃষ্ণের মানসিক মিলনের ব্যবস্থা করে দেন, যা বৈষ্ণব নামানুসারে ভাবোল্লাস নামে খ্যাত। দীর্ঘ অনুপস্থিতির পর কৃষ্ণের সঙ্গে মানসিক মিলনে উল্লসিতা রাধার আনন্দ উচ্ছ্বাসের প্রকাশ ঘটেছে। “কি কহব রে সখি আনন্দ ওর’ পদটিতে তারই প্রকাশ ঘটেছে। আনন্দে আত্মহারা রাধা তাঁর সখিকে বলেছেন, তাঁর আনন্দের আর সীমা নেই। কারণ তিনি আর কোনোদিনই প্রিয়কে হারাবেন না। কুয় চিরদিনের জন্য বন্দি হয়েছেন তাঁর ঘরে ।
‘পাপ সুধাকর যত দুখ দেল। – সুধাকর’ কীভাবে শ্রীরাধিকাকে দুঃখ দিয়েছিল?
উত্তর : পাঠ্য বিদ্যাপতির ‘ভাব সম্মিলন’ পদটিতে ‘সুধাকর’ বলতে চাঁদকে বোঝানো হয়েছে। শ্রীকৃষ্ণ অঙ্কুরের রথে চেপে বৃন্দাবন ছেড়ে মথুরায় গমন করলে ব্রজধামে নেমে আসে শোকচ্ছায়া। শুরু হয় রাধিকার বিরহ। বিরহ ও বিকারের আবেশে রাধা কল্পনায় কৃষ্ণসঙ্গ সুখভোগ করছে—একেই ভাব সম্মিলন বলা হয়। কবির কথায় এই চাঁদ অর্থাৎ চাঁদের কিরণ বিরহীর যন্ত্রণার কারণ হয়। কৃষ্ণসঙ্গ বঞ্চিত থাকা কালে চন্দ্রকিরণ বিরহিণী রাধার কামবেগ (মিলনেচ্ছা) বাড়িয়েছে, যা রাধিকার পক্ষে হয়েছে পীড়াদায়ক। বিরহ বহুগুণ হয়েছে, তাই শ্রীরাধিকা চাঁদকে ‘পাপ সুধাকর’ বলেছেন।
‘পাপ সুধাকর যত দুখ দেল।/পিয়া-মুখ-দরশনে তত সুখ ভেল।।—অংশটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : উদ্ধৃতিটি বিদ্যাপতির ‘ভাব সম্মিলন’ পর্যায়ের পদ থেকে গৃহীত। ভাব সম্মিলনের মূল অর্থ স্বপ্নে কৃষ্ণ ও রাধিকার মিলন। কৃষ্ণ বৃন্দাবন ছেড়ে মথুরা গমনকালে বৃন্দাবনে যে আঁধার নেমে এসেছিল তা থেকে শ্রীরাধিকাও বাদ যায়নি। শ্রীরাধিকা বিরহে কাল কাটিয়েছেন। কবির মতে চাঁদের কিরণ বিরহী রাধার যন্ত্রণার কারণ। কৃয়সঙ্গ বঞ্ছিত কালে চন্দ্রকিরণ যে কামবেগ বা মিলনেচ্ছা বাড়িয়েছে তা রাধিকার কাছে পীড়াদায়ক। বিরহ বহুগুণিত হয়েছে, তাই রাধারানি চন্দ্রকে পাপী বলেছেন। এতদিন চন্দ্ৰই ছিল নিপীড়কের নায়ক। নিপীড়ন তো অনেকেই করে, একমাত্র চন্দ্রই তো নয়। তবে হঠাৎ চন্দ্রের কথাই উল্লেখ করলেন কেন শ্রীরাধিকা? কারণ কৃষ্ণের মুখও যে চন্দ্রের মতো। এই চন্দ্ৰ দেখে প্রিয়তমের মুখচন্দ্রের কথা স্মরণ করেছেন রাধা। অর্থাৎ শ্রীরাধিকা তাই পাপ সুধাকরের সব দেয় দুঃখ পিয়ামুখ দরশনে ভুলে সুখ অনুভব করেছেন ।
‘পিয়া-মুখ-দরশনে তত সুখ ভেল।। আঁচর ভরিয়া যদি মহানিধি পাই।’—উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তর : উদ্ধৃতাংশটি আমাদের পাঠ্য বিদ্যাপতির ‘ভাব সম্মিলন’ নামক পদ থেকে গৃহীত। শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবন ছেড়ে মথুরা গমন করলে রাধার বিরহ শুরু হয়। এই বিরহ ও বিকারের আবেশে রাধা কল্পনার মাধ্যমে কৃষ্ণ-সঙ্গসুখ উপভোগ করছেন—একেই ভাব সম্মিলন বা ভাবোল্লাস নাম দেওয়া হয়েছে। কৃষ্ণসঙ্গ থেকে বঞ্চিত থাকার কালে চন্দ্রকিরণ শ্রীরাধিকার মনে কামবেগ (মিলনেচ্ছা) জাগ্রত করেছিল। অর্থাৎ পাপী চাঁদ শ্রীরাধিকাকে যে দুঃখ দিয়েছিল তা পিয়ামুখ দরশনে মুক্ত হয়েছিল। ভাব সম্মিলনে কৃষ্ণসঙ্গ লাভে আপ্লুতা শ্রীরাধিকা তাই বলেছেন, আঁচল ভরে কেহ যদি তাঁকে মূল্যবান রত্নরাজিও দেয়, তবে তিনি তাঁর প্রিয়কে আর দূরদেশে পাঠাবেন না। বৈয়ব পদকর্তারা রাধার বিরহযন্ত্রণা অনুভব করেই এই ভাব সম্মিলনের পদ সৃষ্টি করেছেন।
‘শীতের ওঢ়নী পিয়া গীরিষির বা।/বরিষার ছত্র পিয়া দরিয়ার না।।—অংশটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তর : উদ্ধৃতাংশটি মৈথিলি কোকিল বিদ্যাপতির ‘ভাব সম্মিলন’ শীর্ষক পদ থেকে গৃহীত। কৃষ্ণ ব্রজধাম ত্যাগ করলে শ্রীরাধিকার বিরহজ্বালা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। পাপ সুধাকর অর্থাৎ চাঁদ তাঁর কামবেগ বা মিলনেচ্ছাকে আরও বহুগুণে বৃদ্ধি করেছিল। এমতাবস্থায় শ্রীরাধিকা কৃয়ের সঙ্গে স্বপ্নে মিলিত হন এবং পিয়ামুখ দরশনে যারপরনাই সুখ অনুভব করেন। পেয়ে হারানোর ভয় থেকে শ্রীরাধিকার মুখে শোনা যায়, আঁচলভরা মহামূল্যবান রত্নরাজি দিলেও তিনি তাঁর প্রিয়কে দূরে পাঠাবেন না। শুধু তাই নয় তিনি কৃষ্ণনির্ভরতার কথা বলতে গিয়ে বলেছেন—কৃয় তাঁর অর্থাৎ রাধার বর্ষার ছাতার মতো সর্বপ্রকার বর্ষণ রোধ করেন; কিংবা নদী পার হতে নৌকা যেমন অনিবার্য তেমনি ভবসমুদ্র পার হওয়ার তরণি স্বরূপ অনিবার্য শ্রীকৃষ্ণ পদচ্ছায়া। এ ছাড়া শীতকালে ওঢ়নী বা চাদর যেমন অনিবার্য, গ্রীষ্মকালের বাতাস যেমন প্রাণদায়ক—রাধার কাছেও কৃয় তদনুরূপ অনিবার্য ।
‘ভণয়ে বিদ্যাপতি শুন বরনারি।/সুজনক দুখ দিবস দুই-চারি।—কথাগুলির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো ।
উত্তর : ভাবোল্লাস মিলনের এক বিচিত্ররূপ। শ্রীরূপ গোস্বামী ‘উজ্জ্বল নীলমণি ’ গ্রন্থে ভাবোল্লাসের কথা উল্লেখ করেননি কিন্তু ‘পদ কল্পতরু’ গ্রন্থের চতুর্থ শাখার স্বদেশ পল্লবের নাম রেখেছেন ‘ভাবোল্লাস’। আসলে কৃষ্ণ মথুরায় চলে যাওয়ার পর, আর কোনোদিনই বৃন্দাবনে ফিরে আসেননি, কিন্তু বৈষ্ণব মহাজনগণ রাধার বিরহকাতর অবস্থা দেখতে পারছিলেন না। তাই বাস্তবে না-হলেও তাঁরা রাধাকৃয়ের মানসিক মিলনের ব্যবস্থা করে দেন। এই মিলনই হল ভাবোল্লাস। এখানে আমরা ভাবজগতে উন্নীতা শ্রীরাধার এক অসাধারণ রূপের পরিচয় তাই। স্বপ্নমিলনের ফলশ্রুতিতে বিরহিণী রাধিকার মনে যে আবেগ-আপ্লুতা অবস্থা দেখা দিয়েছিল—তা দেখে বিদ্যাপতি শ্রীরাধিকার উদ্দেশে বলেছেন—ওগো বরণীয়া, নারীশ্রেষ্ঠা তোমার আনন্দ দেখে বুঝলাম তোমার এতদিনের দুঃখ নিতান্ত তুচ্ছ। আসলে যারা সুজন হন তাদের দুঃখ দু-চার দিনের জন্য স্থায়ী হয়। আসলে দুঃখের ভিতর দিয়েই তার পরীক্ষা হয়। কবির বিশ্বাস তার সুদিন আসবেই।
বিদ্যাপতি বাংলা দেশের অধিবাসী না-হয়েও কীভাবে বাঙালির নিজস্ব কবি হয়ে উঠলেন তা আলোচনা করো
উত্তর : মৈথিলি কবি বিদ্যাপতি মিথিলার কবি হয়েও বাঙালির কবি হয়ে ওঠার পিছনে যথেষ্ট কারণ আছে। ‘চৈতন্যচরিতামৃত’ গ্রন্থ থেকে জানা যায় মহাপ্রভু বিদ্যাপতির পদ আস্বাদনে ধন্য হয়েছিলেন। এ ছাড়াও মিথিলা ও বাংলার সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান সর্বজনবিদিত। তাই বিদ্যাপতির পদাবলী বিশেষ করে রাধাকৃয়লীলা বিষয়ক পদাবলী মিথিলার তুলনায় বাংলায় বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। বাংলায় রচিত ‘গীতগোবিন্দম’ থেকেও বিদ্যাপতি ঋণগ্রহণ করে ‘অভিনব জয়দেব’ আখ্যায় ভূষিত হন। এ ছাড়াও চৈতন্যোত্তর পদাবলী সাহিত্যও বিদ্যাপতির প্রভাবে প্রভাবিত। তার বড়ো প্রমাণ গোবিন্দদাসের ‘দ্বিতীয় বিদ্যাপতি’ উপাধি ধারণ। এসব তথ্যই প্রশ্নোদ্ধৃত বক্তব্য সমর্থনের পক্ষে যথোপযুক্ত।
ব্রজবুলি ভাষা সম্পর্কে যা জান লেখো।
উত্তর : বিদ্যাপতির পদে এই বিশেষ ধরনের ভাষাটি পাওয়া যায়। বৈঘ্নব পদাবলীতে এই ভাষার ব্যবহার সুবিদিত হলেও এর জন্ম সম্পর্কে অধিকাংশের ধারণা অর্ধস্বচ্ছ। বস্তুত কথাটি খুব প্রাচীন নয়, ঊনবিংশ শতাব্দীতে ঈশ্বর গুপ্ত এই নামটি ব্যবহার করেন। এই ভাষার জন্মরহস্য আসলে নিহিত আছে ‘অবহট্ঠের’ মধ্যে, অবহট্ঠের একটি কৃত্রিম সাহিত্যিক রূপ অবলম্বনে ব্রজবুলি ভাষা গড়ে উঠেছে। ভাষাতাত্ত্বিকরা এই ভাষার একটি সুষ্ঠু ব্যাকরণসম্মত রূপ প্রত্যক্ষ করেছেন। বাংলা ভাষায় প্রথম ব্রজবুলি ভাষায় পদ রচনা করেন যশোরাজ খান, মিথিলায় উমাপতি ওঝা। এই ভাষা কোমল ও শ্রুতিসুখকর। এই ভাষার উল্লেখযোগ্য কবি গোবিন্দদাস, যাঁকে আবার বলা হয় দ্বিতীয় বিদ্যাপতি। স্বয়ং রবিঠাকুরও এই ভাষায় যথেষ্ট প্রাধান্য বিস্তার করেছেন।
Read Also
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।