ভারতে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে দেশীয় উদ্যোগে কীভাবে ইন্ডিয়ান অ্যাসােসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ ও কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় তা ব্যাখ্যা করাে।

প্রশ্ন – ভারতে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে দেশীয় উদ্যোগে কীভাবে ইন্ডিয়ান অ্যাসােসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ ও কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় তা ব্যাখ্যা করাে। 8 Marks | Class 10

উত্তর – ভূমিকা : উনিশ শতকে সরকারি উদ্যোগে বাংলায় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার বিকাশ ঘটলেও তা ছিল অপ্রতুল; তাই বাঙালি তথা ভারতীয়রা নিজ উদ্যোগে বিজ্ঞানচর্চার প্রতিষ্ঠান স্থাপনে অগ্রসর হয়। এমনই দুটি প্রতিষ্ঠান হল ইন্ডিয়ান অ্যাসােসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ (১৮৭৬ খ্রি.) এবং কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ’ (১৯১৪ খ্রি.)।

ইন্ডিয়ান অ্যাসােসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স প্রতিষ্ঠা : পাশ্চাত্য বিজ্ঞানের ভক্ত ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার এদেশে অনুরূপ বিজ্ঞানচর্চা ও তার প্রসার ঘটাতে চেয়েছিলেন। তিনি লন্ডনের রয়্যাল ইন্সটিটিউট ও ব্রিটিশ অ্যাসােসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স-এর অনুকরণে একটি গবেষণাগার। প্রতিষ্ঠার কথা প্রচার করেন। অবশেষে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের দান ও তাঁর জীবনের সঞ্জিত অর্থের সাহায্যে ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার বৌবাজার স্ট্রিটে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ইন্ডিয়ান অ্যাসােসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স।

উদ্দেশ্য : ইন্ডিয়ান অ্যাসােসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন। অব সায়েন্স প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল দ্বিবিধ—(১) বিজ্ঞানের প্রসার সাধন ও প্রকৃত গবেষণার মাধ্যমে প্রায়ােগিক বিজ্ঞানের পরিধির বিস্তার এবং (২) সম্পূর্ণরূপে নিজেদের উদ্যোগে ও তত্ত্বাবধানে স্বাধীনভাবে গবেষণা করা। 

গুরুত্ব : ইন্ডিয়ান অ্যাসােসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স প্রতিষ্ঠার ফলে (১) ভারত তথা বাংলা বিজ্ঞান গবেষণার জন্য একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান লাভ করে। (২) এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই আধুনিক বিজ্ঞানচর্চা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। 

কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠা : কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠা আকস্মিক ছিল না, তা ছিল একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রক্রিয়া 

১। তারকনাথ পালিতের উদ্যোগ : বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রতি আগ্রহী তারকনাথ পালিত দেশীয় ব্যক্তিদের মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার উন্নতি ও বিস্তার ঘটানাের উদ্দেশ্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে জমি ও টাকা দান করেন (জুন, ১৯১২ খি।

২ | আশুতােষ মুখােপাধ্যায়ের প্রচেষ্টা : কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য আশুতােষ মুখােপাধ্যায় সরকারের কাছে এই জমির উপর ল্যাবরেটরি সহ একটি আবাসিক বিজ্ঞান কলেজ স্থাপনের প্রস্তাব দেন। কিন্তু সরকার এই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন।

৩। রাসবিহারী ঘােষের উদ্যোগ : সরকার কর্তৃক আশুতােষ মুখােপাধ্যায়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হলে রাসবিহারী ঘােষ উপরােক্ত প্রস্তাবিত বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য ১০ লাখ টাকা দান করেন। যার ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠিত হয় কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ। 

পঠন-পাঠন – কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের প্রতিষ্ঠাকালে স্যার আশুতােষ মুখােপাধ্যায় এই কলেজকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গ বলে ঘােষণা করেন। এই কলেজের প্রথম এমএসসি ব্যাচের ছাত্রদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছাত্র ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ বােস, মেঘনাদ সাহা, জ্ঞানেন্দ্রনাথ মুখার্জি। আবার কলেজের অধ্যাপকদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিলেন বিজ্ঞানী প্রফুল্লচন্দ্র রায়, সি ভি রামন, গণেশ প্রসাদ আগারকা

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment