ভারতের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যাবস্থা সম্পর্কে বর্ণনা করো
উত্তর :
ভারতের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যাবস্থা :
নিয়মতান্ত্রিক প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থায় দ্বিতীয় পর্যায়ে আসে প্রাথমিক শিক্ষাস্তর। এই স্তরে শিশু যে শিক্ষা গ্রহণ করে তার মাধ্যমে শিশুর দৈহিক, মানসিক, প্রক্ষোভিক, সামাজিক এবং বৌদ্ধিক বিকাশের ভিত্তি রচিত হয়। বর্তমানে ভারতে প্রাথমিক শিক্ষার উপর অধিক গুরুত্ব আরােপ করা হয়েছে। প্রশাসনিকভাবে ভারতের প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক এবং অবৈতনিক বা প্রাথমিক শিক্ষায় সমসুযােগের কথা বলা হয়েছে এবং বর্তমানে ভারতে প্রাথমিক শিক্ষার পরিকাঠামাের অনেক পরিবর্তন করা হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য :
প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলি নিম্নরূপ
(i) শিশুর দৈহিক, মানসিক বৌদ্ধিক, সামাজিক, ক্ষোভিক, নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক বিকাশ যা ব্যক্তিত্ব বিকাশে সাহায্য করে।
(ii) প্রাথমিক শিক্ষা শিশুদের সুনাগরিক হয়ে ওঠার জন্য এগিয়ে নিয়ে যায়।
(iii) বিশ্বজনীন সৌভ্রাতৃত্ব এবং আন্তর্জাতিক বােঝাপড়ার বিকাশ এই প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে হয়ে থাকে।
(iv) প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য বৈজ্ঞানিক মনােভাব গড়ে তােলা।।
(v) অন্যতম উদ্দেশ্য হলাে হাতেনাতে কাজকর্ম এবং অভিজ্ঞতার মাধ্যমে কার্যগত অভিজ্ঞতাকে জড়িয়ে সমাজজীবনে নিজেকে যাতে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে এবং সমাজজীবনে অভিযােজন ঘটানাে।
বয়স, সময় এবং শ্রেণিবিভাগ :
ভারতে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় পাঁচ বা ছয়। বছর বয়স থেকে এবং শেষ হয় 11 বছর বয়সে। পূর্বে প্রাথমিক শিক্ষার দুটি ভাগ ছিল pen—(i) Lower Primary 478 (ii) Upper Primary কিন্তু বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষা হলাে চতুর্থ বা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। ভারতে প্রতিটি শ্রেণির সময়সীমা হলাে 40-45 মিনিট এবং বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হয় 10:40 থেকে ও শেষ হয় 3:30/400 P.M।
পাঠ্যক্রম :
বর্তমানে ভারতে প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ্যক্রমকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে – 1) খেলাধুলা ও শরীরচর্চা 2) উৎপাদন ও সৃজনমূলক কাজকর্ম, 3) প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতামূলক কাজ, 4) পঠনপাঠননির্ভর কাজ।
খেলাধুলা ও শরীরচর্চা :
অনুকরণ জাতীয় খেলা, ছড়ার মাধ্যমে খেলা, গল্পচ্ছলে খেলা, ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা।
উৎপাদন ও সৃজনমূলক কাজ :
চিত্রাঙ্কন, মাটির কাজ, বাগানের কাজ, কাগজের কাজ।
প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতামূলক কাজ :
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, উৎসব পালন, সমাজসেবামূলক কাজ, ইতিহাস, ভূগােল, প্রকৃতিবিজ্ঞান।
প্রাথমিক পর্যায়ের বিভিন্ন স্কুল :
বর্তমানে যে-সমস্ত বিদ্যালয় প্রাথমিক শিক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করে সেগুলিকে নানা দিক থেকে শ্রেণিবিভাগ করা যায়। এই ধরনের শ্রেণিবিভাগ বর্তমানে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ নয়। কারণ এইসব বিদ্যালয়ে সাধারণত একইরকম পাঠ্যক্রম অনুসরণ করা হয়। তবুও এই বিদ্যালয়গুলির নিজস্ব কিছু কিছু সাংগঠনিক বৈশিষ্ট্য আছে এবং এদের পৃথক পৃথক নামে অভিহিত করা হয়। এই বিদ্যালয়গুলি হলাে— 1) সাধারণ প্রাথমিক বিদ্যালয়, 2) বুনিয়াদি বিদ্যালয়, 3) একক শিক্ষক বিদ্যালয়, 4) ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালিত বিদ্যালয়, 5) স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা পরিচালিত বিদ্যালয়, 6) ব্যক্তিগত মালিকানাধীন বিদ্যালয়। সমস্ত বিদ্যালয়ে প্রায় সাধারণ পাঠক্রম অনুসরণ করা হয়।
প্রাথমিক শিক্ষার প্রশাসন :
প্রাথমিক শিক্ষার প্রশাসনের ব্যাপারে গ্রামাঞ্চলগুলিতে অল পঞ্চায়েত এবং শহরাঞ্চলের ক্ষেত্রে পৌরসভার ওপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল। বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের হাতে দায়িত্ব রয়েছে, তবুও অল পায়েত বা মিউনিসিপ্যালিটির হাতেও দায়িত্ব আছে। বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ভারতে বিভিন্ন রাজ্য ‘বাের্ড’ গঠিত হয়েছে এবং রাজ্য সরকার দ্বারা এই ‘বাের্ড পরিচালিত হচ্ছে। এই বাের্ডই শিক্ষক নিয়ােগ এবং প্রাথমিক শিক্ষার যাবতীয় পরিকাঠামাে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
প্রাথমিক শিক্ষায় পরীক্ষা ব্যবস্থা :
বর্তমানে ভারতে প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে পরীক্ষা ব্যবস্থা থেকে মূল্যায়ন ব্যবস্থা বেশি কার্যকরী হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন সমস্যা :
ভারতবর্ষের মতাে দেশে প্রাথমিক শিক্ষা পরিচালনা করা খুবই জটিল ব্যাপার। সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে নানারকম সমস্যা দেখা দেয়। তা হলাে— 1) অর্থের অভাব, 2) উপযুক্ত শিক্ষকের অভাব, 3) শিক্ষক শিক্ষণের অব্যবস্থা, 4) সরকারি অবহেলা, 5) অভিভাবকের উদাসীনতা, 6) ত্রুটিপূর্ণ প্রশাসন, 7) জাতিভেদপ্রথা, 8) অভিভাবকদের অজ্ঞতা, 9) উপযুক্ত পরিদর্শনের অভাব প্রভৃতি। স্বাধীনতার পর থেকে দেখা গিয়েছে 1964-65 সালের পরিসংখ্যানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা 34,413টি, শিক্ষকের সংখ্যা 98,306 জন এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা 36 লক্ষ 50 হাজার প্রায়। বর্তমানে দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা 8,40,546টি প্রায় (2015), বর্তমানে ভারতে প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যেহেতু ভারতবর্ষের বেশিরভাগ মানুষ গ্রামে বাস করে এবং দারিদ্রগ্রস্ত, তাই শিক্ষার হার বাড়লেও সেভাবে বৃদ্ধি হয়নি। তবে বর্তমান জনসাধারণ অনেক সচেতন। তাই বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করার সঙ্গে সঙ্গে অবৈতনিক করার ফলে শিক্ষার হার কিছুটা হলেও বৃদ্ধি ঘটেছে এবং জনসাধারণ প্রাথমিক শিক্ষায় তাদের ছেলে-মেয়েদের ভর্তির ক্ষেত্রে উৎসাহ দেখাচ্ছে।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।