ভারতের জাতীয়তাবাদের উন্মেষে বিবেকানন্দের রচিত “বৰ্তমান ভারত” গ্রন্থটির অবদান ব্যাখ্যা করাে। গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর কীভাবে তার অঙ্কিত ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে ঔপনিবেশিক সমাজচিত্র তুলে ধরেন? 5+3 Marks | Class 10
উত্তর) প্রথম অংশ : জাতীয়তাবাদ উন্মেষে বর্তমান ভারত’- এর ভূমিকা : স্বামী বিবেকানন্দ প্রকাশ্য রাজনীতি না-করলেও তার বিভিন্ন রচনার মাধ্যমে প্রাচ্যের ও পাশ্চাত্যের শ্রেষ্ঠ ভাবধারার সমন্বয়ে জাতীয়তাবাদী নবভারত গঠনের আদর্শ প্রচার করেন। তাঁর। রচনাবলির মধ্যে বর্তমান ভারত’ গ্রন্থটি উল্লেখযােগ্য যা ভারতের জাতীয়তাবাদ বিকাশে সহায়ক হয়েছিল।
১) স্বদেশচেতনা : “ভারতবাসী আমার ভাই, ভারতবাসী আমার প্রাণ, ভারতের দেবদেবী আমার ঈশ্বর, ভারতের মৃত্তিকা আমার শিশুশয্যা, আমার যৌবনের উপবন, আমার বার্ধক্যের বারাণসী—বল ভাই ভারতের মৃত্তিকা আমার স্বর্গ, ভারতের কল্যাণ আমার কল্যাণ”–বর্তমান ভারত’ প্রবন্ধে এই উক্তির মাধ্যমে বিবেকানন্দ দেশবাসীর মধ্যে স্বদেশচেতনা ও দেশপ্রেম জাগ্রত করতে চেয়েছিলেন।
২) সামাজিক সংহতি : সমাজের অস্পৃশ্যতা ও জাতিভেদপ্রথা নিরসনের জন্য বিবেকানন্দ বর্তমান ভারত’-এ বলেছেন, ভুলিও না নীচ জাতি, মুখ, দরিদ্র, অজ্ঞ, মুচি-মেথর তােমার রক্ত, তােমার ভাই।”
৩) দেশের জন্য আত্মত্যাগের আহ্বান : বর্তমান ভারত’ প্রবন্ধে বিবেকানন্দ দেশবাসীকে দেশের জন্য আত্মত্যাগে উদবুদ্ধ করে। বলেছেন, “হে ভারত-ভুলিও না—তুমি জন্ম হইতেই মায়ের। জন্য বলিপ্রদত্ত, ভুলিও না—তােমার সমাজ যে বিরাট মহামায়ার ছায়ামাত্র। হে বীর, সাহস অবলম্বন কর, সদর্পে বল—আমি ভারতবাসী, ভারতবাসী আমার ভাই।”
(৪) দেশপ্রেমের সঞ্জার : বিবেকানন্দ বৰ্তমান ভারত’-এ দেশকে মাতৃরূপে কল্পনা করে তার মুক্তির জন্য আত্মােৎসর্গের আদর্শ তুলে ধরেছিলেন—তাতে উচ্চনীচ, ধনী-নির্ধন কেউই বাদ পড়েনি। তার। প্রেরণাতেই দেশপ্রেম ধর্মের বিকল্প হয়ে উঠেছিল। তার আদর্শ ও চিন্তাধারার ছাপ পরবর্তীকালে জাতীয় আন্দোলনে ছাপ ফেলেছিল।
দ্বিতীয় অংশ, গগনেন্দ্রনাথের ব্যঙ্গচিত্রে ঔপনিবেশিক সমাজচিত্র : অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জ্যেষ্ঠভ্রাতা গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর সমকালীন সমাজ ও সময়ের ছবিকে তুলির টানে ব্যঙ্গাত্মক রূপে ফুটিয়ে তােলেন। রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘প্রবাসী’ ও ‘মডার্ন রিভিউ পত্রিকায় গগনেন্দ্রনাথের অঙ্কিত ব্যঙ্গচিত্রগুলি প্রকাশিত হত। তার ব্যঙ্গচিত্রগুলিতে ফুটে ওঠা সমাজচিত্র হল—
১) বিদেশি শাসনের সমালােচনা : তাঁর ব্যঙ্গচিত্রে বিদেশি শাসকদের কটাক্ষ করা হয়, একইভাবে ‘পুচ্ছ পরিবর্তন’, ‘পুরাতন ও নতুন’, ‘সংকর জাতের বাঙালি’, ‘বিধবার একাদশী ব্রাত্মণের একাদশী’ নামক ব্যঙ্গচিত্রে সমাজের নানা অসংগতি ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিমায় তুলে ধরেন।
২) মানবচরিত্র : ঔপনিবেশিক শাসকদের কাছে মাথা নােয়ানাে মানুষ বা শহুরে জীবনের কৃত্রিম সাহেবিয়ানা-যে-কোনাে কিছুকেই তান বিদ্ধ করতেন তার শ্লেষাত্মক কার্টুন চিত্রে। গগনেন্দ্রনাথ কোনাে প্রকার তােষামােদে বিশ্বাস করতেন না। তাই তার ব্যঙ্গচিত্র। হয়ে উঠেছিল ঔপনিবেশিক সমাজের সমালােচনার প্রতিফলন।
৩) দেশীয় মনীষীদের চিত্র : তার ব্যঙ্গচিত্রগুলিতে বিদেশি শাসকদের পাশাপাশি দেশীয় নেতারাও ব্যঙ্গের আওতার মধ্যে। পড়েছেন। এমনকি, রবীন্দ্রনাথও তার ব্যঙ্গচিত্রের বিষয় হয়েছেন। বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুর আবিষ্কার, প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের গবেষণা, রবীন্দ্রনাথের প্রথম বিমান চড়া, রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথের মন্ত্রিত্ব। গ্রহণ ইত্যাদি নিয়ে কার্টুন চিত্রগুলি ইতিহাসের অমূল্য দলিল।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।