ভারতের মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে লেখাে
উত্তর :
ভারতের মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা
ভারতবর্ষের নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় তৃতীয় স্তর হলাে মাধ্যমিক শিক্ষাস্তর। দশ বা এগারাে বছর বয়সে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ হবে এবং তারপর শুরু হবে মাধ্যমিক শিক্ষা এবং শেষ হবে 15/16 বছর বয়সে। আমাদের দেশে শিক্ষার পুনর্গঠনের জন্য ভারতীয় শিক্ষা কমিশন যে প্রস্তাব করেছে তাতে দেখা যায় পাঁচ বছরের শিক্ষাকালকে মাধ্যমিক স্তর হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে। এর মধ্যে অষ্টম, নবম, দশম (VIII, IX, X) শিক্ষাকালকে বলা হয়েছে নিম্ন মাধ্যমিক স্তর এবং একাদশ ও দ্বাদশ (XI-XII) শ্রেণির শিক্ষাকালকে বলা হয়েছে উচ্চতর মাধ্যমিক শিক্ষাস্তর। আমাদের দেশে এই জাতীয়
বিন্যাস পরিপূর্ণভাবে করা হয়নি। আমরা এখনও পঞম বা ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষাকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাস্তরের পূর্বকাল পর্যন্ত শিক্ষাকালকে মাধ্যমিক শিক্ষা হিসাবে বিবেচনা করি। মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরকে শিক্ষার একটি নির্দিষ্ট সময়কাল হিসাবে বিবেচনা করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষান্তে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যে অতিরিক্ত শিক্ষা যা বিদ্যালয়ে সংঘটিত হয় তাকে বলা হয় মাধ্যমিক শিক্ষা (Secondary Education)।
1) মাধ্যমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য :
মাধ্যমিক শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলি নিম্নরূপ
(i) শিক্ষার্থীকে ব্যক্তিগত জীবন বিকাশে সহায়তা করা।
(ii) শিক্ষার্থীকে জীবিকা অর্জনের প্রশিক্ষণ দেওয়া।
(iii) শিক্ষার্থীরা যাতে সার্থকভাবে সামাজিক অভিযােজন সক্ষম হয়, সে বিষয়ে তাদের সহায়তা করা।
(iv) শিক্ষার্থীকে নাগরিকতার প্রশিক্ষণ।।
(v) শিক্ষার্থীর কায়িক পরিশ্রমের প্রতি উপযুক্ত মনােভাব গড়ে তােলা এবং তাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত ক্ষমতানুযায়ী উপযুক্ত কর্মমূলক দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করা।
(vi) সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতি শিক্ষার্থীর উৎসাহ সৃষ্টি করা।
(vii) শিক্ষার্থীকে চরিত্র গঠনের প্রশিক্ষণ দেওয়া।
(viii) নেতৃত্ববােধের বিকাশ, ব্যক্তিসত্তার বিকাশ, অবসর যাপন, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি গঠন করা।
2) মাধ্যমিক শিক্ষার বয়স, সময় এবং শ্রেণিবিভাগ :
ভারতে মাধ্যমিক শিক্ষা শুরু হয়। 10-11 বছর বয়সের পর থেকে এবং শেষ হয় 15-16 ও 17-18 বছর বয়সে। মাধ্যমিক শিক্ষাকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়। যথা — Secondary এবং Higher Secondary. ক্লাস শুরু হয় 10-11টা থেকে এবং শেষ হয় 3:30-4:30 PM পর্যন্ত। প্রতিটি বিদ্যালয়ে প্রতিটি শ্রেণিতে মােট 6-7টি Period হয়ে থাকে এবং প্রতি Period-এর সময়সীমা 40-45 Min.
3) মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠ্যক্রম :
মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠ্যক্রম এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠ্যক্রম একটু অভিন্ন। এর পাঠ্যক্রমের চারটি ভাগ। যথা—
(i) ভাষা বিভাগ : প্রথম ভাষা (মাতৃভাষা), দ্বিতীয় ভাষা (ইংরাজি), ধ্রুপদি ভাষা।
(ii) বিজ্ঞান বিভাগ : ভৌতবিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা ও রসায়নবিদ্যা, গণিত, জীবনবিজ্ঞান।
(iii) সামাজিক বিভাগ বা কলা বিভাগ : ইতিহাস, ভূগােল।।
(iv) ঐচ্ছিক বিষয় বা অতিরিক্ত বিষয় : কর্মশিক্ষা, শারীরশিক্ষা, সমাজসেবা বা শিক্ষার্থীর রুচি অনুযায়ী যেকোনাে একটি বিষয় নির্বাচন করা হয়।
এছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যক্রমে দুটি ভাগ রয়েছে। যথা — 1) সাধারণ শিক্ষার পাঠ্যক্রম, 2) বৃত্তিমূলক শিক্ষার পাঠ্যক্রম।
4) মাধ্যমিক স্তরের বিভিন্ন বিদ্যালয় :
মাধ্যমিক স্তরের বিষয়গুলিকে মােটামুটি তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। 1) পাঠ্যক্রম বা সময়কালভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ, 2) শিক্ষার্থীদের লিঙ্গভিত্তিক বিভাগ, 3) দায়িত্বভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ।
(a) পাঠ্যক্রম বা সময়কালভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ : এর মধ্যে যেসব বিদ্যালয় দেখা যায় তা হলাে 1) নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, 2) উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, 3) উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, 4) বৃত্তিমূলক শিক্ষাদানের বিদ্যালয়।
(b) শিক্ষার্থীদের লিঙ্গভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ : এর মধ্যে যেসব বিদ্যালয় দেখা যায় তা হলাে — 1) পুরুষ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়, 2) স্ত্রী শিক্ষার্থী বিদ্যালয়, 3) সহশিক্ষা বিদ্যালয়।
(c) দায়িত্বভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ : এর মধ্যে যে বিদ্যালয় দেখা যায় তা হলাে — 1) দিবা বিদ্যালয়, 2) আবাসিক বিদ্যালয়।
মাধ্যমিক শিক্ষায় প্রশাসন :
বর্তমানে ভারতবর্ষে বিভিন্ন শিক্ষাপর্ষদ বা বাের্ড রয়েছে। যেমন—মাধ্যমিক শিক্ষাপর্ষদ, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপর্ষদ প্রভৃতি। এই সমস্ত সংস্থা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার শাসন কার্য পরিচালনা করে থাকে। এছাড়া শিক্ষক নিয়ােগের জন্য বিভিন্ন কমিশন গঠিত হয়েছে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে অভিভাবকদের নিয়ে পরিচালন কমিটি গঠন করা হয়ে থাকে এবং তারাই বিদ্যালয় পরিচালনা করে। থাকে।
মাধ্যমিক শিক্ষার সমস্যা :
মাধ্যমিক শিক্ষার সমস্যাগুলি ভিন্নরূপ। যথা— (i) ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলির আকার বিভিন্ন রকম।
(ii) ভারতের সমস্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের লক্ষ্য এক নয়।
(iii) বিভিন্ন রাজ্যে পাঠ্যক্রমের বিভিন্নতা রয়েছে।
(iv) ভাষা শিক্ষার সমস্যা।
(v) সমন্বিতকরণ পাঠ্যক্রমের যথেষ্ট অভাব রয়েছে।
(vi) পরীক্ষা এবং মূল্যায়ন ব্যবস্থার মধ্যে অসংগতি।
(vii) শিক্ষক সংখ্যা কম।
(viii) এছাড়া রয়েছে অর্থনৈতিক দুর্বলতা।।
উপরিউক্ত সমস্যাগুলি বর্তমানে ভারতে বিদ্যমান। কিন্তু মাধ্যমিক শিক্ষার গুণাবলি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার শিক্ষার অগ্রগতির জন্য বিভিন্ন কমিটি এবং পরিকল্পনা গঠন করেছে। শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিত্ব গঠন, গুণগত মান, সমাজ-অর্থনৈতিক দিকে লক্ষ রেখে মাধ্যমিক শিক্ষাকে আরও উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।