ভারতের প্রধান প্রধান মৃত্তিকার বণ্টন ও বৈশিষ্ট্য আলােচনা করাে

ভারতের প্রধান প্রধান মৃত্তিকার বণ্টন ও বৈশিষ্ট্য আলােচনা করাে  Class 10 | Geography | 5 Marks

উত্তর: ভারতের প্রধান প্রধান মৃত্তিকার বণ্টন ও বৈশিষ্ট্য

ভারতের প্রধান প্রধান মৃত্তিকাগুলির মধ্যে — 

1. পলি মৃত্তিকা বা পলিমাটি, 2. কৃয় মৃত্তিকা বা কালােমাটি, 3. লােহিত মৃত্তিকা বা লালমাটি, 4. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা, 5. মরু অঞ্চলের মৃত্তিকা এবং 6. পার্বত্য মৃত্তিকা উল্লেখযােগ্য।

1. পলিমাটি বা পলি মৃত্তিকা: এই মাটিকে তিনভাগে ভাগ করা যায়, যথা –

i) নদী উপত্যকার পলিমাটি

ভৌগােলিক বণ্টন: সিন্ধু, গঙ্গা, ব্ৰত্মপুত্র প্রভৃতি নদনদীর বিস্তীর্ণ উপত্যকা ও বদ্বীপ অঞলে এই মাটি দেখা যায়।

প্রধান বৈশিষ্ট্য: [a] প্লাবনের ফলে নদীবাহিত বালি, পলি ও কাদা নদী উপত্যকায় সঞ্চিত হয়ে পলিমাটির সৃষ্টি হয়। [b] পলির উপস্থিতির কারণে এই মাটি খুবই উর্বর হয়, যদিও পলিমাটিতে নাইট্রোজেন ও জৈব পদার্থের ঘাটতি দেখা যায়। [c] পলিমাটি পটাশ ও চুন-জাতীয় পদার্থে সমৃদ্ধ। [d] নতুন পলিমাটিকে খাদার এবং পুরােনাে পলিমাটিকে ভাঙ্গার বলা হয়। এ ছাড়া, পর্বতের পাদদেশের বালি ও নুড়ি মিশ্রিত পলিমাটিকে ভাবর বলে। [e] এই মাটি ধান, গম, জোয়ার, বাজরা, ডাল, তৈলবীজ, তুলাে, ইক্ষু, পাট ও সবজি উৎপাদনের ক্ষেত্রে উপযােগী। 

ii) উপকূলের পলিমাটি

ভৌগােলিক বণ্টন: প্রধানত ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলে এই মাটি পাওয়া যায়। এ ছাড়া, পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনসহ ভারতের বিভিন্ন বদ্বীপ ও নীচু উপকূল অঞলেও এই মাটি দেখা যায়।

প্রধান বৈশিষ্ট্য: [a] প্রধানত সামুদ্রিক পলি সঞ্জিত হয়ে এই মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়। [b] বালি ও লবণের প্রভাবে উর্বরাশক্তি মাঝারি ধরনের হয়। [c] এই মাটিতে নারকেল ও সুপারি গাছ। ভালাে জন্মায়। [d] নীচু ও বদ্বীপ অঞলের লবণাক্ত পলিমাটিতে ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ জন্মায়। 

iii) পিট ও জৈব মৃত্তিকা

ভৌগােলিক বণ্টন: কেরলের আলাম্বুঝা জেলা এবং উত্তরপ্রদেশের তরাই অঞলে এই মাটি দেখা যায়। প্রধান বৈশিষ্ট্য: [a] এই মৃত্তিকায় পলিমাটির সঙ্গে প্রচুর তুণজাতীয় জৈব পদার্থের অধঃক্ষেপ ঘটে। [b] মালভূমি অধ্যুষিত বনাঞলে এই মৃত্তিকা দেখা যায়

2. কালােমাটি বা কৃষ্ণ মৃত্তিকা

ভৌগােলিক বণ্টন: দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর-পশ্চিমাংশের। ডেকান ট্র্যাপ অঞ্চল, বিশেষত মহারাষ্ট্র মালভূমি, গুজরাতের ভারুচ, ভাদোদরা ও সুরাত, পশ্চিম মধ্যপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা এবং উত্তর কর্ণাটক প্রভৃতি স্থানে এই মাটি দেখা যায়। 

প্রধান বৈশিষ্ট্য: 1) লাভা থেকে সৃষ্ট ব্যাসল্ট শিলা ক্ষয় হয়ে এই মাটি উৎপন্ন হয়েছে। 2) এই মাটির রং কালাে হওয়ায় এর আর এক নাম রেগুর। 3) কৃষ্ণ মৃত্তিকার জলধারণক্ষমতা খুব বেশি। 4) এই মৃত্তিকা কার্পাস চাষের জন্য বিশেষ উপযােগী হওয়ায় কৃষ্ণ মৃত্তিকাকে কৃষ্ণকার্পাস মৃত্তিকাও বলা হয়। 5) প্রকৃতিতে উর্বর এই মৃত্তিকায় তুলাে ছাড়াও খাদ্যশস্য, তেলবীজ, টকযুক্ত ফল, সবজি ইত্যাদির চাষ খুব ভালাে হয়। 

3. লালমাটি বা লােহিত মৃত্তিকা

ভৌগােলিক বণ্টন: দাক্ষিণাত্য মালভূমির অন্তর্গত তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র রাজ্যের মালভূমি অঞলঝাড়খণ্ডের ছােটোনাগপুর মালভূমি, উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্য অঞ্চল ও মেঘালয় মালভূমি প্রভৃতি অঞ্চলে লালমাটি দেখা যায়। 

প্রধান বৈশিষ্ট্য: 1) প্রাচীন গ্রানাইট, নিস প্রভৃতি আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে এই মাটি উৎপন্ন হয়। 2) এই মাটিতে লৌহকণার ভাগ বেশি থাকে বলে এর রং লাল হয়। 3) এই প্রকার মাটির জল ধরে রাখার ক্ষমতা কম। 4) লােহিত মৃত্তিকা পটাশ ও ফসফেট খনিজে সমৃদ্ধ। 5) এই মাটিতে রাগি, ধান, তামাক, চিনাবাদাম, আলু ও সবজির চাষ ভালাে হয়। 

4) ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা 

ভৌগােলিক বণ্টন:পশ্চিমঘাট, নীলগিরি, কার্ডামম প্রভৃতি পার্বত্য অঞল, ওডিশার পাহাড়ি অঞ্চল, মেঘালয় মালভূমি এবং ঝাড়খণ্ডের ছােটোনাগপুর মালভূমি অঞ্চলে ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা দেখা যায়। প্রধান

প্রধান বৈশিষ্ট্য: 1) অ্যালুমিনিয়াম ও লােহার সােদক দিয়ে গঠিত হওয়ায় এই মৃত্তিকার রং লাল হয়। 2) এই মাটি ইটের মতাে শক্ত ও কাঁকরপূর্ণ হয়। 3) ল্যাটেরাইট মৃত্তিকায় নাইট্রোজেন, ফসফোরিক অন্ন, পটাশ, চুন ও ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতি দেখা যায়। 4) সাধারণভাবে অনুর্বর এই মাটিতে জলসেচ করা গেলে ধান, রাগি, ইক্ষু প্রভৃতি ফসলের চাষ করা সম্ভব। 

5. মরু অঞ্চলের মৃত্তিকা

ভৌগােলিক বণ্টন: রাজস্থানের মরু অঞল এবং গুজরাতের কচ্ছ ও কাথিয়াবাড় উপদ্বীপের উত্তরাংশে এই মাটি দেখা যায়। 

প্রধান বৈশিষ্ট্য: 1) জৈব পদার্থহীন ও দ্রবীভূত লবণে পূর্ণ এই মাটিতে বালির পরিমাণ খুব বেশি। 2) এই প্রকার মাটি ফসফেটসমৃদ্ধ,কিন্তু নাইট্রোজেনের ঘাটতি দেখা যায়। 3) জলসেচের সাহায্যে এই মাটিতে জোয়ার, বাজরা, গম, তুলাে প্রভৃতি ফসল চাষ করা যায়

6, পার্বত্য মৃত্তিকা

ভৌগােলিক বণ্টন: পশ্চিম ও পূর্ব হিমালয়, পশ্চিমঘাট ও পূর্বঘাট পর্বতমালা, কার্ডামম পাহাড় প্রভৃতি স্থানে পার্বত্য মৃত্তিকা দেখা যায়।

প্রধান বৈশিষ্ট্য: 1) ভূমির ঢাল বেশি বলে পার্বত্য অঞ্চলে মৃত্তিকার স্তর অগভীর হয়। 2) পার্বত্য মৃত্তিকায় পটাশ, ফসফরাস ও চুনের ঘাটতি থাকলেও জৈব পদার্থে এই মৃত্তিকা অত্যন্ত সমৃদ্ধ। 3) পর্বতের উঁচু অংশে অম্লধর্মী পডসল এবং সামান্য নীচু অংশে। বাদামি চেস্টনাট মৃত্তিকা পাওয়া যায়। 4) পার্বত্য মৃত্তিকা রবার, চা, কফি, মশলা, ফল প্রভৃতি উৎপাদনে অত্যন্ত উপযােগী।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment