ভারতে স্বাভাবিক উদ্ভিদের বণ্টন জলবায়ুর দ্বারা কীভাবে প্রভাবিত হয় তা আলােচনা করাে Class 10 | Geography | 5 Marks‘
উত্তর:
ভারতে স্বাভাবিক উদ্ভিদের বণ্টনে জলবাযুর প্রভাব
ভারতে স্বাভাবিক উদ্ভিদের বণ্টন উষ্ণতা, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ, সূর্যকিরণ, আদ্রতা ইত্যাদি জলবায়ুর উপাদানগুলি দ্বারা প্রভাবিত হয়। ভারতের বিভিন্ন অংশে এই জলবায়ুর উপাদানগুলির তারতম্যের ফলে পাঁচ প্রকার স্বাভাবিক উদ্ভিদ দেখা যায়। যথা—1. ক্রান্তীয় চিরসবুজ উদ্ভিদ, 2. ক্রান্তীয় পর্ণমােচী উদ্ভিদ, 3. ক্রান্তীয় মরু উদ্ভিদ, 4. পার্বত্য উদ্ভিদ এবং 5. ম্যানগ্রোভ। নীচে ভারতের জলবায়ুর সঙ্গে স্বাভাবিক
উদ্ভিদের বণ্টনের সম্পর্ক আলােচনা করা হল
1. ক্রান্তীয় চিরসবুজ উদ্ভিদ
অবস্থান: পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢাল, পূর্ব হিমালয়ের তরাই অঞ্চল, পূর্বাচল এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের যেসব অংশে বার্ষিক 250 সেমি বা তার বেশি বৃষ্টিপাত হয়, সেখানে ক্রান্তীয় চিরসবুজ উদ্ভিদ দেখা যায়।
সৃষ্টির কারণ: [i] এইসব অঞ্চলে সারাবছর ধরে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এবং বার্ষিক উষ্ণতার গড় থাকে প্রায় 27° সে। এরূপ উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় অত্যন্ত দীর্ঘ (30-35 মি) চিরসবুজ গাছ জন্মায়। ঘন অরণ্যে সূর্যালােক পাওয়ার আশায় গাছগুলি ওপরের দিকে ক্রমশ বেড়ে ওঠে। [ii] এই গাছগুলি থেকে সারাবছর ধরে অল্প অল্প করে পাতা ঝরে পড়ে। তাই গাছগুলি কখনােই সম্পূর্ণরূপে পত্রশূন্য হয়ে পড়ে না ও অরণ্য চিরসবুজ দেখায়।
উদাহরণ: শিশু, গর্জন, তুন, পুন, লােহাকাঠ, গােলাপকাঠ প্রভৃতি গাছ এখানে দেখা যায়।
2. পর্ণমােচী উদ্ভিদ
অবস্থান: ভারতে বার্ষিক 100-150 সেমি বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে। (যেমন—ঝাড়খণ্ড, ওডিশা, পশ্চিমবঙ্গ, কর্ণাটক, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র প্রভৃতি রাজ্যের মালভূমি অঞ্চল, অসম, গঙ্গা সমভূমি প্রভৃতি এলাকা) পর্ণমােচী বা পাতাঝরা উদ্ভিদ জন্মায়।
সৃষ্টির কারণ: এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাত সম্পূর্ণরুপে ঋতুভিত্তিক। শীতকালে বৃষ্টিপাতের অভাবে গাছে সঞ্চিত জল বাম্পমােচন নকিয়ায় পাতা দিয়ে যাতে বেরােতে না পারে সেই কারণে অধিকাংশ গাছই পত্রশূন্য হয়ে পড়ে। তাই, এগুলিকে পর্ণমােচী বা পাতাঝরা উদ্ভিদ বলে।
উদাহরণ: শাল, সেগুন, শিমূল, মহুয়া, কুসুম, জারুল, শিরীষ প্রভৃতি গাছ এবং সাবাই ঘাস, হাতি ঘাস, শব, চাপড়া ঘাস প্রভৃতি তৃণ এখানে জন্মায়।
3. ক্রান্তীয় মরু উদ্ভিদ
অবস্থান: ভারতে বার্ষিক 50 সেমির থেকে কম বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞলে (যেমন—রাজস্থানের মধ্য ও পশ্চিমভাগ, গুজরাতের উত্তরাংশ প্রভৃতি) ক্রান্তীয় মরু উদ্ভিদ দেখা যায়।
সষ্টির কারণ: [i] বৃষ্টিপাতের স্বল্পতার জন্য এখানে উদ্ভিদের পরিমাণ কম। এখানে বেশিরভাগই কাঁটাযুক্ত জেরােফাইট শ্রেণির উদ্ভিদ। জন্মায়। [ii] গাছের কাণ্ড পুরু ছালে ঢাকা থাকে। [iii] দেহ থেকে জল যাতে বেরােতে না পারে সেই জন্য পাতায় মােমের মতাে আবরণ থাকে এবং [iv] গাছের শিকড় সুদীর্ঘ হয় ও পাতা কাটাযুক্ত হয়।
উদাহরণ: ফনীমনসা, বাবলা, খেজুর বিভিন্ন প্রকার কাঁটাগাছ, ঘাস প্রভৃতি উদ্ভিদ এখানে দেখা যায়।
4. পার্বত্য উদ্ভিদ
পূর্ব ও পশ্চিম হিমালয় পার্বত্য অঞলে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতা হ্রাস পায় বলে নানা ধরনের উদ্ভিদ জন্মায়। যেমন- [i] পর্বতের পাদদেশীয় অঞলে উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় চিরসবুজ উদ্ভিদ জন্মায়, যেমন—শিশু, চাপলাস প্রভৃতি বৃক্ষ; এর ওপর [ii] চিরসবুজ ও পাতাঝরা বৃক্ষের মিশ্র অরণ্য; তার ওপর [iii] তুষারপাত অধ্যুষিত এলাকাসমূহে পাইন, ফার প্রভৃতি নরম কাঠের বৃক্ষের সরলবর্গীয় অরণ্য এবং তারও ওপরে [iv] অতিশীতল জলবায়ুতে রডােডেনড্রন, জুনিপার, লার্চ, ভুজ প্রভৃতি আপ্লীয় উদ্ভিদ জন্মায়।
5. ম্যানগ্রোভ:
গঙ্গা বদ্বীপের দক্ষিণাংশে সুন্দরবন অঞলে, মহানদী, গােদাবরী, কৃয়া, কাবেরী প্রভৃতি নদীর বদ্বীপ এলাকায় এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের উপকূলে উষ্ণ -আর্দ্র আবহাওয়া, নিয়মিত জোয়ারভাটা, জলময় পরিবেশ ও লবণাক্ত মৃত্তিকার জন্য শ্বাসমূল ও ঠেসমূলযুক্ত বিশেষ এক ধরনের উদ্ভিদ জন্মায়। এদের জরায়ুজ অঙ্কুরােদগম হয় এবং সারাবছর গাছে সবুজ পাতা থাকে। এদের বলে ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ।
উদাহরণ: সুন্দরী, গরান, গেওয়া, হেতাল, গােলপাতা প্রভৃতি উদ্ভিদ এখানে জন্মায়।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।