ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদের শ্রেণিবিভাগ করে আলােচনা করাে

মৃত্তিকা ক্ষয় কীভাবে প্রতিরােধ করে তাকে সংরক্ষণ করা যাবে? অথবা, ভারতে মৃত্তিকা ক্ষয় প্রতিরােধের উপায় ব্যাখ্যা করাে।   Class 10 | Geography | 5 Marks

উত্তর: ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদের শ্রেণিবিভাগ

ভারতের জলবায়ু ও ভূপ্রকৃতির তারতম্যের কারণে স্বাভাবিক উদ্ভিদে বিবিধ বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়। এই বৈচিত্র্যের ওপর ভিত্তি করে ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদকে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। যথা— 

1. ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্য

আলিক বণ্টন: আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢাল, পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশীয় অঞল মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম প্রভৃতি অঞলে ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্য দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্য: [i] বাতাসে সারাবছর আর্দ্রতা বেশি থাকে বলে গাছের পাতা একসাথে ঝরে যায় না। তাই গাছগুলি চিরসবুজ হয়। [i] গাছগুলি খুব কাছাকাছি জন্মায়। [iii] অরণ্যের ভূমি সারাবছর স্যাতসেঁতে থাকে। [iv] গাছগুলি ঘন সন্নিবিষ্টভাবে থাকে বলে সূর্যের আলাে অনেকসময় মাটি পর্যন্ত পৌঁছায় না। [v] গাছগুলি খুব লম্বা এবং ডালপালাযুক্ত হয়। [iv] গাছের গুঁড়ি খুব শক্ত এবং পাতাগুলি বড়াে হয়।

প্রধান উদ্ভিদ : শিশু, গর্জন, তুন, পুন, গােলাপকাঠ, বিশপকাঠ, রবার, পাম প্রভৃতি।

ব্যবহার : এই অরণ্যের কাঠ শিল্পে খুব বেশি ব্যবহৃত হয় না। তবে বাড়ি নির্মাণ, রেলের কামরা ও স্লিপার নির্মাণ এবং অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা হয়। 

2. ক্রান্তীয় পর্ণমােচী অরণ্য

আঞ্চলিক বণ্টন: ভারতের সবচেয়ে বেশি স্থান জুড়ে রয়েছে এই জাতীয় অরণ্য। মােট অরণ্যের 27 শতাংশ হল আর্দ্র পর্ণমােচী এবং 29 শতাংশ শুষ্ক পর্ণমােচী অরণ্য। অসম সমভূমি, পশ্চিমবঙ্গের সমগ্র সমভূমি ও মালভূমি অঞ্চল, ছােটোনাগপুর মালভূমি, ওডিশা, বিহার, পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্বাল, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, অন্ত্রপ্রদেশের বিভিন্ন স্থানে এই বনভূমি রয়েছে।

বৈশিষ্ট্য: [i] শীতকালে গাছের পাতা সব একসাথে ঝরে পড়ে। তাই এই অরণ্যের নাম পর্ণমােচী অরণ্য [ii] কোনাে কোনাে অঞ্চলে একই প্রজাতির গাছ একসাথে অবস্থান করে। [iii] উদ্ভিদগুলির ঘনত্ব কম। [iv] গাছের কাঠ খুব শক্ত এবং মূল্যবান। [v] গাছগুলি বহু ডালপালাযুক্ত। [vi] বৃক্ষগুলিতে বর্ষবলয় পরিষ্কার করে বােঝা যায়। [vii] এই অরণ্যে কাঠ সংগ্রহ করা সবচেয়ে সুবিধাজনক। 

প্রধান উদ্ভিদ : শাল, সেগুন, মহুয়া, শিরীষ, আম, জাম, কাঠাল, বট, পলাশ প্রভৃতি। 

ব্যবহার: এই বনভূমির কাঠের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। বাড়িঘরের জানলা, দরজা, নৌকা, জাহাজ, সেতু প্রভৃতি তৈরিতে এবং জ্বালানি কাঠ হিসেবে এর ব্যবহার খুব বেশি।

3. ক্রান্তীয় মরু উদ্ভিদ

আঞ্চলিক বণ্টন: রাজস্থানের মধ্য ও পশ্চিমভাগ, কচ্ছ ও কাথিয়াবাড় উপদ্বীপ প্রভৃতি অঞ্চলে মরু এবং মরুপ্রায় উদ্ভিদ জন্মায়। 

বৈশিষ্ট্য : [i] মরু উদ্ভিদ কখনােই ঘন বা নিবিড় হয় না। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। [ii] গাছে সতি জল যাতে জলীয় বাষ্প আকারে গাছগুলি থেকে বেরিয়ে যেতে না পারে সেই জন্য গাছের পাতাগুলি কাটায় পরিণত হয় এবং কাণ্ডের ওপর একটি মােম-জাতীয় পদার্থের আবরণ থাকে। [iii] গাছের শিকড় খুব লম্বা হয়। [iv] উদ্ভিদের পাতা সরু এবং দুচোলাে হয়। [v] গাছগুলি আকারে ছােটো হয়। [vi] উদ্ভিদ দেহে জল ধরে রাখার জন্য কোনাে কোনাে গাছের কাণ্ড ও পাতায় শাঁস থাকে।

প্রধান উদ্ভিদ : ক্যাকটাস, ফণীমনসা, বাবলা, খেজুর প্রভৃতি। ব্যবহার:এখানকার বেশিরভাগ গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। 

4. পার্বত্য উদ্ভিদ

আঞ্চলিক বণ্টন: পূর্ব ও পশ্চিম হিমালয়ের বিভিন্ন অংশে এবং পশ্চিমঘাট পর্বতে ও নীলগিরি, পালনি প্রভৃতি পাহাড়ে পার্বত্য উদ্ভিদ দেখা যায়। 

বৈশিষ্ট্য: উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতা হ্রাস পায় বলে পার্বত্য অঞলে ক্রমশ ওপরের দিকে উদ্ভিদের প্রকৃতি পালটে যায়। যেমন— পূর্ব হিমালয়ে 1000 মিটার এবং পশ্চিম হিমালয়ে 500 মিটার উচ্চতা পর্যন্ত আছে চিরসবুজ উদ্ভিদ। এর ওপর পূর্ব হিমালয়ে 2500 মিটার এবং পশ্চিম হিমালয়ে 2000 মিটার উচ্চতা পর্যন্ত চিরসবুজ ও পাতাঝরা উদ্ভিদের মিশ্র বনভূমি দেখা যায়। এর ওপর পূর্ব হিমালয়ে 2500-4000 মিটার এবং পশ্চিম হিমালয়ে 2000-3000 মিটার উচ্চতা পর্যন্ত সরলবর্গীয় উদ্ভিদ এবং তার ওপর উভয় অংশেই আছে। আল্পীয় উদ্ভিদ ও সবশেষে উদ্ভিহীন চিরতুষার ভূমি। দক্ষিণ ভারতের পার্বত্য উদ্ভিদের মধ্যে 1000-1500 মিটার উচ্চতা পর্যন্ত চিরসবুজ এবং তারপর আর্দ্র নাতিশীতােয় উদ্ভিদ দেখা যায়। প্রধান

উদ্ভিদ : শিশু, চাপলাস,গর্জন প্রভৃতি চিরসবুজ উদ্ভিদ; ওক, সিডার, পপলার, ম্যাপল প্রভৃতি পাতাঝরা উদ্ভিদ; পাইন, ফার, স, লরেল প্রভৃতি সরলবর্গীয় উদ্ভিদ এবং জুনিপার, রডােডেনড্রন, লার্চ প্রভৃতি আল্লীয় উদ্ভিদ।

ব্যবহার : শক্ত কাঠ থেকে আসবাবপত্র, কাঠের বাড়ি, পরিবহনের সাজসরঞ্জাম প্রভৃতি তৈরি হয়। কাগজের মণ্ড, দেশলাই প্রভৃতি তৈরিতে নরম কাঠ ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া, নানাধরনের ভেষজ উদ্ভিদ এবং বিভিন্ন গাছের শিকড়, পাতা, আঠা প্রভৃতি সংগ্রহ করা হয়। হিমালয়ের উদ্ভিদসমূহের আর এক নাম সবুজ সােনা (Green gold)।

5. ম্যানগ্রোভ অরণ্য

আঞ্চলিক বণ্টন: পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণে গঙ্গানদীর বদ্বীপ, মহানদী, গােদাবরী, কৃয়া, কাবেরীর বদ্বীপ অঞলে এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের বহু অংশে ম্যানগ্রোভ অরণ্য রয়েছে। 

বৈশিষ্ট্য: [i] গাছগুলির উচ্চতা কম। [ii] এদের পাতা পুরু। [iii] এরা শ্বাসমূলের সাহায্যে শ্বাসকার্য চালায়। [iv] গাছগুলিতেঠেসমূল থাকে। [v] এদের পাতাগুলি মােমজাতীয় পদার্থ দিয়ে ঢাকা থাকে। [vi] গাছগুলির শ্বাসমূল থাকে ও জরায়জ অঙ্কুরােদ্গম ঘটে।

প্রধান উদ্ভিদ : সুন্দরী, গরান, গেওয়া, হেঁতাল, হােগলা প্রভৃতি। 

ব্যবহার : সুন্দরী গাছের কাঠ থেকে ভালাে নৌকা হয়। গােলপাতা, হােগলা প্রভৃতি উদ্ভিদের পাতা ঘর ছাইতে কাজে লাগে। সুন্দরবনের অরণ্য থেকে প্রচুর মধু, মােম এবং জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করা হয়।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment