ভারতসভার প্রতিষ্ঠা ও ভূমিকা আলােচনা করাে। ভারতসভার লক্ষ্য কী ছিল?

প্রশ্ন – ভারতসভার প্রতিষ্ঠা ও ভূমিকা আলােচনা করাে। অথবা, ভারতসভার লক্ষ্য কী ছিল? জাতীয় আন্দোলনের উন্মেষে এই সভা কীভাবে সাহায্য করেছিল? Class 10 | 8 Marks

উত্তর – প্রথম অংশ : ভূমিকা : ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই কলকাতার অ্যালবার্ট হলে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, আনন্দমােহন বসু প্রমুখের উদ্যোগে স্থাপিত হয় ভারতসভা বা ইন্ডিয়ান অ্যাসােসিয়েশন। শিশিরকুমার ঘােষের প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান লিগ’ও এর সঙ্গে যুক্ত হয়। 

প্রেক্ষাপট : ভারতসভা প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপটে দেখা যায় যে

প্রথমত, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ বুদ্ধিজীবী শ্রেণির নেতা উপলব্ধি করেছিলেন যে, দেশের বৃহত্তর জনগণের সংযােগে। গণতান্ত্রিকভাবে সমিতি গঠন না-করলে সরকার সেই সমিতির দাবিকে মূল্য দেবে না।

দ্বিতীয়ত, ভারতে ইতিপূর্বে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক সমিতিগুলি ছিল রক্ষণশীল ও তাদের আচরণ ছিল অভিজাতসুলভ।

তৃতীয়ত, সর্বভারতীয় স্তরে সমিতি গঠন ও আন্দোলন। পরিচালনার মাধ্যমে ভারতীয় স্বার্থ সুরক্ষিত করা। ১ ভারতসভার উদ্দেশ্য : ‘ভারতসভা’-র চারটি ঘােষিত উদ্দেশ্য ছিল, যেমন— (১) জনমত গঠন, (২) ভারতের সকল জাতি ও সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য স্থাপন, (৩) হিন্দু-মুসলিম ঐক্য স্থাপন এবং (৪) রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে ভারতের জনসংযােগ ঘটানাে। যাতে সাধারণ ভারতীয়রা বিপুল সংখ্যায় এই সংগঠনে যােগ দিতে পারে তার জন্য এর সদস্য চাঁদা দরিদ্রতম শ্রেণির জন্য এক টাকা হিসেবে ধার্য করা হয়। 

দ্বিতীয় অংশ, ভারতের বিভিন্ন অঞলে ভারতসভার ১২৪ টি শাখা গড়ে ওঠে এবং এগুলির মাধ্যমে ভারতসভা জাতীয় আন্দোলন গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়। ভারতসভার উল্লেখযােগ্য কার্যাবলি হল—   

১) সিভিল সার্ভিস সংক্রান্ত আন্দোলন : ভারতসভা সর্বপ্রথম আন্দোলন গড়ে তােলে ভারতীয় সিভিল সার্ভিস আইনের সংস্কারকে কেন্দ্র করে। এই আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার্থীদের বয়স ২১ থেকে কমিয়ে ১৯ করলে ভারতসভা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। সিভিল সার্ভিস সংক্রান্ত একটি সর্বভারতীয় প্রতিবাদপত্র লালমােহন ঘােষ মারফৎ ব্রিটিশ সংসদে পেশ করা হয়।

২) লিটনের প্রতিক্রিয়াশীল আইনের বিরােধিতা : ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে লর্ড লিটন দেশীয় ভাষা সংবাদপত্র আইন জারি করে। দেশীয় ভাষার সংবাদপত্রগুলির স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার কেড়ে নেন এবং ওই বছরেই অস্ত্র আইন জারি করে ভারতবাসীকে নিরস্ত্র করার চেষ্টা করেন। কলকাতার টাউন হলে ভারতসভা’—এই দুটি আইনের বিরুদ্ধে বিরাট বিক্ষোভ সমাবেশের আয়ােজন করে।

৩) ইলবার্ট বিলের পক্ষে আন্দোলন : লর্ড রিপন-এর আমলে ভারতীয় বিচারব্যবস্থায় বর্ণবৈষম্য দূর করার উদ্দেশ্য তার আইন। সচিব সি পি ইলবার্ট একটি বিল বা আইনের খসড়া রচনা করলে ভারতসভা এই বিলের পক্ষে আন্দোলন শুরু করে। 

মূল্যায়ন : ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার প্রথম জাতীয় সম্মেলন আহ্বান করেন। এর দু-বছর পর তিনি দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলন আহ্বান করেন, যা ছিল ভারতের জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পূর্বাভাস। সুতরাং দেখা যায়, যে ভারতসভাই ছিল আধুনিক ভারতের প্রথম সর্বভারতীয় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং এই সভার মধ্য দিয়েই সর্বভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের বিকাশ ঘটে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment