ভারতে ব্যবহৃত জলসেচ পদ্ধতিগুলির বিবরণ দাও।

ভারতে ব্যবহৃত জলসেচ পদ্ধতিগুলির বিবরণ দাও।
অথবা, ভারতের বিভিন্ন অঞলে কীভাবে জলসেচ করা হয় বর্ণনা করাে।   Class 10 | Geography | 5 Marks

উত্তর:-

ভারতে ব্যবহূত জলসেচ পদ্ধতিসমূহ :  ভৌগােলিক পরিবেশের পার্থক্যের জন্য ভারতের বিভিন্ন অংশের সেচসেবিত জমিতে সেচের প্রধান তিনটি মাধ্যম বা পদ্ধতি হল— 1. সেচখাল, 2. কূপ ও নলকূপ এবং 3. জলাশয়।

1. সেচখাল: প্রধানত কৃষিতে সেচের জন্য নদী, কৃত্রিম জলাধার প্রভৃতি থেকে যে খাল খনন করা হয়, তাকে সেচখাল বলে। ভারতে দু-ধরনের সেচখাল দেখা যায়, যথা —

(i) প্লাবন খাল: যেসব খাল বর্ষা বা বন্যার অতিরিক্ত জল বহন করে সেই খালগুলিকে বলে প্লাবন খাল। প্লাবন খালের মাধ্যমে কেবল বর্ষাকালেই জলসেচ করা যায়, যেমন—কৃষ্ণা বদ্বীপ খাল, গােদাবরী বদ্বীপ খাল, কাবেরী বদ্বীপ খাল প্রভৃতি। 

(ii) নিত্যবহ খাল: যেসব নদীতে সারাবছর জল থাকে, সেইসব নদী থেকে খনন করা খালগুলিকে বলে নিত্যবহ খাল। সারাবছর জল থাকলে নদীর ওপর আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে জলাধার (Dam) তৈরি করা হয় ও ওই জলাধার থেকে যেসব খাল খনন করে কৃষিক্ষেত্রে সারাবছর জলসেচ করা হয়, সেইসব খালকে নিত্যবহ খাল বলে। 
সুবিধা: সারাবছর জলপূর্ণ থাকার জন্য নিত্যবহ খালের মাধ্যমে কৃষিজমিতে সারাবছরই জলসেচ করা যায়। 
অঞ্চল: তুষারগলা জলে পুষ্ট উত্তর ভারতের নদীগুলি নিত্যবহ বলে উত্তর ভারতেই নিত্যবহ খাল বেশি দেখা যায়, যেমন— উত্তরপ্রদেশের উচ্চগঙ্গা খাল, পাঞ্জাবের পশ্চিম যমুনা খাল ও উচ্চ বারি দোয়াব খাল, পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর খাল, ইডেন খাল, হিজলি খাল, ওড়িশা উপকূল খাল এবং দামােদর-ময়ূরাক্ষী-কংসাবতী পরিকল্পনার সেচখালসমূহ। এইরূপ খালের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি সেচকাজ হয় উত্তরপ্রদেশে। 

2. কূপ ও নলকূপ: ভারতের যেসব অঞ্চলের মাটি পলিগঠিত এবং ভূগর্ভের জল বা ভৌমজল খুব বেশি গভীরতায় থাকে না, সেইসব স্থানে কূপ ও নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ জল তুলে সেচের কাজে ব্যবহার করা হয়। কূপ ও নলকূপের গভীরতা জলস্তরের উচ্চতার ওপর নির্ভর করে। 
সাধারণ কুপ: ভূমিতে প্রায় 20-25 মিটার গভীরতা পর্যন্ত মাটি খুঁড়ে কুপ তৈরি করা হয়। কুপের চারপাশ সাধারণত বাঁধিয়ে নেওয়া হয় এবং তার মধ্যে 10-15 মিটার নীচে জল থাকে। কপিকল বা গােরু, উট প্রভৃতি পশুর সাহায্যে কূপ থেকে জল তােলা হয়। অনেকসময় এজন্য অনেকগুলি বালতি লাগানাে পারস্যের চাকাও ব্যবহৃত হয়। কোনাে পশুর সাহায্যে চাকাটি ঘুরিয়ে জল তােলা হয়।
নলকূপ: দু-ধরনের নলকূপ দেখা যায়—
[i] সাধারণ নলকূপ: সাধারণ নলকূপ অগভীর হয় এবং হাত দিয়ে পাম্প করে জল তােলা হয়।
[ii] বৈদ্যুতিক নলকূপ: গভীর নলকূপ থেকে বৈদ্যুতিক পাম্প বা ডিজেল চালিত পাম্পের সাহায্যে জল তােলা হয়। এতে স্বল্প সময়ে প্রচুর জল তােলা যায়। অঞ্চল: উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চলের পাঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশ, পূর্ব ভারতের বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের অসমে কূপ ও নলকূপের প্রচলন বেশি। কূপের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি সেচ হয় উত্তরপ্রদেশে। বর্তমানে পশ্চিম ভারতের রজত্থান ও গুজরাত রাজ্যে কূপ,ও নলকূপের দ্বারা সেচের ব্যবহার বেড়েছে। এ ছাড়াও তামিলনাড়ুর দক্ষিণাংশ ও কেরলে কূপ ও নলকূপের মাধ্যমে সেচকাজ করা হয়।

3. জলাশয় বা পুকুর: দাক্ষিণাত্য মালভূমিতে মাটির নীচে অধিকাংশ জায়গায় অপ্রবেশ্য শিলাস্তর থাকায় বৃষ্টির জল ভূগর্ভে বিশেষ সতি হয় না। এখানকার ভূপৃষ্ঠ তরঙ্গায়িত বলে বর্ষার জল সহজেই নিম্নভূমিতে ধরে রাখা যায়। এ ছাড়া, ভারতের যেসব অঙ্কুলে নিয়মিত বৃষ্টিপাত হয় না, সেখানে জলাশয় নির্মাণ করে জল জমিয়ে রাখা হয়। পরবর্তী সময়ে ওই জল সেচের কাজে ব্যবহৃত হয়। যেমন—তেলেঙ্গানা, কাথিয়াবাড় উপদ্বীপের দক্ষিণাংশ।
অঞ্চল: দক্ষিণ ভারতের অপ্রদেশ, কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুতে এই পদ্ধতির প্রচলন বেশি। মধ্যপ্রদেশে, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, ওডিশা, অসম, বিহার, ঝাড়খণ্ড প্রভৃতি রাজ্যে এই পদ্ধতিতে সামান্য জলসেচ করা হয়। জলাশয় বা পুকুরের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি সেচকাজ হয় তামিলনাড়ু রাজ্যে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!