ভারতে অসম জনবণ্টনের কারণ আলােচনা করাে

ভারতে অসম জনবণ্টনের কারণ আলােচনা করাে
অথবা, ভারতের জনবসতির ঘনত্ব সর্বত্র সমান নয় কেন?
অথবা, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে জনবণ্টনের তারতম্যের কারণগুলি আলােচনা করাে। Class 10 | Geography (ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ) | 5 Marks

উত্তর:-

ভারতে অসম জনবণ্টনের কারণ 

ভারতে জনসংখ্যার অসম বণ্টন লক্ষ করা যায়, অর্থাৎ জনসংখ্যা কোথাও বেশি, কোথাও কম। ভারতের বিভিন্ন অংশে এই অসম জনবণ্টনের অনেকগুলি কারণ আছে, যেমন— 

A) প্রাকৃতিক কারণ:

1. ভূপ্রকৃতি: হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল, উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ ভারতের পাহাড়ি অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি বন্ধুর ও তরঙ্গায়িত বলে কৃষিকাজের অনুপযুক্ত। ওইসব অঞ্চল তাই জনবিরল। অপরদিকে, উত্তর ভারতের সমভূমি এবং উপকূলীয় সমভূমি কৃষি, পরিবহণ ও যােগাযােগ ব্যবস্থা এবং শিল্পে উন্নত। তাই ওইসব অঞ্চলের জনঘনত্ব বেশি।

2. জলবায়ু: উত্তর ও পূর্ব ভারতের সমভূমি অঞ্চলে অনুকূল জলবায়ুর জন্য জনঘনত্ব বেশি। অপরদিকে, রাজস্থানের মরু অঞ্চলে বা গুজরাতের কচ্ছ অঞ্চলে শুষ্ক এবং হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে শীতল জলবায়ুর জন্য জনঘনত্ব কম। 

3. নদনদী: উত্তর ভারতের গঙ্গা, সিন্ধু ও ব্রক্ষ্মপুত্র এবং দক্ষিণ ভারতের মহানদী, গােদাবরী, কৃষ্ণা, কাবেরী প্রভৃতি নদী উপত্যকায় জনঘনত্ব বেশি। কারণ এইসব নদী থেকে জলসেচ, জলনিকাশ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, জলপথে পরিবহণ, পানীয় জল সরবরাহ, মৎস্য চাষ প্রভৃতি নানারকমের সুবিধা পাওয়া যায়। 

4. মৃত্তিকা: ভারতের যেসব স্থানের মৃত্তিকা উর্বর ও চাষযােগ্য সেখানে জনবসতির ঘনত্ব অপেক্ষাকৃত বেশি। যেমন— দাক্ষিণাত্যের লাভাগঠিত অঞ্চলে উর্বর কৃষ্ণ মৃত্তিকার জন্য এবং সিন্ধু, গঙ্গা, ব্রম্মপুত্র, গােদাবরী, কৃষ্ণা, কাবেরী প্রভৃতি নদী উপত্যকা এবং বদ্বীপ অঞ্চলে উর্বর পলিমাটির জন্য কৃষির ব্যাপক উন্নতি ঘটায় জনঘনত্ব বেশি। 

5. অরণ্য: পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢালে এবং পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে গভীর অরণ্য থাকায় লােকবসতি কম।

6. খনিজ সম্পদ: মৃত্তিকা অনুর্বর হলেও দাক্ষিণাত্য এবং ছােটোনাগপুর মালভূমি অঞ্চলে খনিজ সম্পদ উত্তোলনকে কেন্দ্র করে ঘন জনবসতি দেখা যায়। 

B) অপ্রাকৃতিক কারণ:

1. পরিবহণ ব্যবস্থা: উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা জনবসতিকে প্রভাবিত করে। যেমন—উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চলে সড়কপথ, রেলপথ, জলপথ প্রভৃতির মাধ্যমে যাতায়াতের সুবিধা আছে, তাই এখানে জনবসতিও ঘন। আবার, মধ্যপ্রদেশ বা ওড়িশার অনেক জায়গা উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থার অভাবে অত্যন্ত জনবিরল। 

2. শিল্প ও শিল্পাঞ্চল: শিল্পকেন্দ্র বা শিল্পাঞ্চলে বহু মানুষের জীবিকার সংস্থান হয়। তাই কলকাতা শিল্পাঞ্চল বা আসানসােল শিল্পাঞ্চলের জনঘনত্ব বেশি। 

3. অন্যান্য কারণ: বিশেষ কতকগুলি অবস্থানগত অনুকূল পরিবেশের কারণে স্থানীয়ভাবে অধিক জনঘনত্ব দেখা যায়। যেমন— [i] পর্যটন কেন্দ্র (শ্রীনগর, দার্জিলিং); [ii] যােগাযােগের কেন্দ্র (নাগপুর); [iii] স্বাস্থ্যকেন্দ্র (ভেলাের); [iv] সীমান্তবর্তী শহর (শিলিগুড়ি); [v] ঐতিহাসিক স্থান (লখনউ, আগ্রা); [vi] শিক্ষাকেন্দ্র (কোটা); [vii] ধর্মস্থান (আজমের); [viii] সামরিক শহর (গােয়ালিয়র) প্রভৃতি এক্ষেত্রে উল্লেখযােগ্য। এ ছাড়াও রাজনৈতিক অস্থিরতা (দেশভাগজনিত কারণে শরণার্থীদের পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিমবঙ্গে চলে আসা প্রভৃতি) এবং [x] অস্থায়ী পরিব্রাজন (যেমন—যােশীমঠের জনঘনত্ব বছরে ছয় মাসের জন্য বেড়ে যায়) প্রভৃতি কারণেও কোনাে কোনাে অঞ্চলের জনঘনত্ব স্থায়ী বা সাময়িকভাবে বেড়ে যায় বা কমে যায়।

এইভাবে প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতিক পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান কখনও এককভাবে, কখনও সম্মিলিতভাবে ভারতের জনসংখ্যা বণ্টনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!