ভারতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাব আলােচনা করাে।

ভারতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাব আলােচনা করাে।  Class 10 | Geography | 5 Marks

উত্তর:-

ভারতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাব :  ভারতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবগুলি হল— 

দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর অনুকুল প্রভাব :

1. জলবায়ুতে : ভারতের অধিকাংশ স্থান ক্রান্তীয়-উপক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থিত হলেও আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয় বলে উষ্ণতা খুব বেশি বাড়ে না। তাই ভারতের জলবায়ু উষ্ণ ও আর্দ্র প্রকৃতির। 

2. কৃষিকাজে : ভারতের অর্থনীতি কৃষির ওপর নির্ভরশীল। দেশের মােট জনসংখ্যার 70 শতাংশেরও বেশি প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। এই কৃষির সাফল্য বহুলাংশে নির্ভর করে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু নিয়ন্ত্রিত বৃষ্টিপাতের ওপর।

3. কৃষিভিত্তিক শিল্পে: দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু পরিমিত বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে ভারতের কৃষিকাজের ওপর প্রভাব বিস্তারের পাশাপাশি, দেশে কার্পাস বয়ন, পাট, চিনি, চা প্রভৃতি বিভিন্ন প্রকার কৃষিভিত্তিক শিল্পের গঠন ও উন্নতির পথও সহজ করেছে। 

অন্যান্য অনুকূল প্রভাব : 

1. বনভূমিতে: ভারতের অন্যতম প্রাকৃতিক সম্পদ বনভূমি। এই বনভূমির গঠন ও বৈচিত্র্য সৃষ্টিতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সংঘটিত বৃষ্টিপাত গুরুত্বপূর্ণ। 

2. জলবিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদনে: ভারতে জলবিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদনের পরিমাণ অনেকাংশে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সংঘটিত বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল। বৃষ্টিপাত পর্যাপ্ত হলে জলবিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন যেমন বাড়ে তেমনই বৃষ্টিপাত কম হলে জলবিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদনও হ্রাস পায়। 

3. সামগ্রিক অর্থনীতিতে : ভারতের কৃষিকাজ ও শিল্পোৎপাদন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রকৃত-পক্ষে সমগ্র দেশের অর্থনীতি তথা জনজীবনকেই নিয়ন্ত্রণ করে। 

4. জলসেচে: দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হলে জলাধারে জল সঞ্চয় করা হয়। এই সঞ্চিত জলের সাহায্যে সারাবছর জলসেচ করা যায়। কিন্তু বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হলে  জলসেচের পর্যাপ্ত জল পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। 

দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রতিকুল প্রভাব : 

1. বন্যা ও খরা সৃষ্টি: এই বায়ুর খামখেয়ালি আচরণ ভারতের অর্থনীতিকে মাঝে মাঝে বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দেয়। প্রকৃতপক্ষে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুসৃষ্ট বৃষ্টিপাত ঋতুভিত্তিক হলেও এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য অনিশ্চয়তা। কখনও সঠিক সময়ে আবার কখনও অসময়ে এই বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমন হয়, কখনও একটানা প্রবল বর্ষণে দেখা দেয় বন্যা, আবার কখনও বেশ কিছুদিন অনাবৃষ্টির ফলে সৃষ্টি হয় খরা।

2. ব্যয়বহুল সেচব্যবস্থা প্রবর্তন : দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর অনিয়মিত প্রকৃতির জন্য বৃষ্টিপাত অনিশ্চিত। ফলে ভারতের মতাে উন্নয়নশীল দেশকে কৃষিকাজের ক্ষেত্রে অত্যন্ত ব্যয়বহুল সেচব্যবস্থার প্রবর্তন করতে হয়েছে। 

3. শস্য ও জীবনহানি : বৃষ্টিপাতের অভাবেখরা এবং অতিবর্ষণে বন্যা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হওয়ায় ভারতে প্রায়শইশস্যহানি ও জীবনহানি হয়। এজন্য মাঝে মধ্যেই সরকারকে বিদেশ থেকে খাদ্যশস্য, ডাল, তৈলবীজ প্রভৃতি আমদানি করতে হয়। এর ফলে সরকারি কোশাগার তথা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেই বিরূপ প্রভাব পড়ে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!