ভারতের প্রধান নদনদীগুলি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করাে। Class 10 | Geography | 5 Marks‘
উত্তর:-
ভারতের প্রধান নদনদীসমূহ : ভারতের নদনদীগুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা—
উত্তর ভারতের নদনদী :
1. গঙ্গ :
দৈর্ঘ্য: গঙ্গা নদীর মােট দৈর্ঘ্য 2525 কিমি।
উৎপত্তিস্থল: গঙ্গোত্রী হিমবাহের গােমুখ তুষারগুহা থেকে গঙ্গা নদীর উৎপত্তি হয়েছে।
মােহানা: গঙ্গা নদী বঙ্গােপসাগরে এসে মিশেছে।
গতিপথে অবস্থিত রাজ্য: উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মধ্য দিয়ে গঙ্গা নদী প্রবাহিত হয়েছে।
উপনদী: গঙ্গার বামতীরের উপনদীগুলি হল—ঘর্ঘরা, রামগঙ্গা, গণ্ডক, কোশী এবং ডানতীরের উপনদীগুলি হল—যমুনা, শােন প্রভৃতি।
শাখানদী: গঙ্গার শাখানদী হল—পদ্মা ও ভাগীরথী-হুগলি। ভাগীরথী-হুগলির কয়েকটি শাখানদী হল ভৈরব, জলঙ্গী, বিদ্যাধরী।
নদীতীরবর্তী প্রধান শহর: গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত শহরগুলি হল—হৃষীকেশ, হরিদ্বার, কানপুর, এলাহাবাদ, বারাণসী, পাটনা, ভাগলপুর, কলকাতা।
2. সিন্ধু :
দৈর্ঘ্য: সিন্ধু নদের মােট দৈর্ঘ্য 2880 কিমি কিন্তু ভারতে মােট দৈর্ঘ্য 1114 কিমি।
উৎপত্তিস্থল: তিব্বতের মানস সরােবর হ্রদের কাছে সেঙ্গেখাবাব । প্রস্রবণ থেকে এই নদের উৎপত্তি হয়েছে।
মােহানা: সিন্ধু নদ আরব সাগরে এসে মিশেছে।
গতিপথে অবস্থিত রাজ্য: ভারতে কেবল জম্মু-কাশ্মীর এবং লাডাকের মধ্য দিয়ে সিন্ধু নদ প্রবাহিত হয়েছে।
উপনদী: সিন্ধুর বামতীরের উপনদীগুলি হল—বিতস্তা, চন্দ্রভাগ শতদ্রু, ইরাবতী, বিপাশা এবং ডানতীরের উপনদীগুলি হল—শিয়ক গিলগিট, শিগার প্রভৃতি।
নদীতীরবর্তী প্রধান শহর: সিন্ধু নদের তীরে অবস্থিত শহরগুলি হল—স্কার্টু, বুঞ্জি, চিলাস প্রভৃতি।
3. ব্রম্মপুত্র :
দৈর্ঘ্য: ব্রম্মপুত্র নদের মােট দৈর্ঘ্য 2900 কিমি কিন্তু ভারতে মােট দৈর্ঘ্য 916 কিমি।
উৎপত্তিস্থল: মানস সরােবরের কাছে চেমায়ুং দুং হিমবাহ থেকে এই নদের উৎপত্তি হয়েছে।
মােহানা: ব্ৰম্মপুত্র নদ বঙ্গোপসাগরে এসে মিশেছে।
গতিপথে অবস্থিত রাজ্য: ভারতে কেবল অরুণাচল প্রদেশ ও অসম রাজ্যের মধ্য দিয়ে ব্রম্মপুত্র নদ প্রবাহিত হয়েছে।
উপনদী: ব্রম্মপুত্রের বামতীরের উপনদীগুলি হল—বুড়ি ডিহিং, কোপিলি, ধানসিরি (দক্ষিণ) এবং ডানতীরের উপনদীগুলি হলসুবনসিরি, সংকোশ, মানস, তিস্তা প্রভৃতি।
নদীতীরবর্তী প্রধান শহর: ব্রম্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত শহরগুলি হল—ডিব্ৰুগড়, তেজপুর, গুয়াহাটি, গােয়ালপাড়া, ধুবরি।
দক্ষিণ ভারতের নদনদী :
1. মহানদী :
দৈর্ঘ্য: মহানদীর মােট দৈর্ঘ্য 851 কিমি।
উৎপত্তিস্থল: ছত্তিশগড়ের সিহাওয়ার উচ্চভূমি থেকে এই নদীর উৎপত্তি হয়েছে।
মােহানা: ছত্তিশগড় রাজ্যের হিসাওয়ার উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে মহানদী বঙ্গােপসাগরে পড়েছে।
গতিপথে অবস্থিত রাজ্য: ছত্তিশগড় ও ওডিশা রাজ্যের মধ্য দিয়ে মহানদী প্রবাহিত হয়েছে।
উপনদী: শিওনাথ, হাসদো, ইব, ব্রাম্মণী, বৈতরণী প্রভৃতি হল মহানদীর উপনদী।
শাখানদী: মহানদীর শাখানদীগুলি হল—কুশভদ্র, ভাগবী প্রভৃতি।
নদীতীরবর্তী প্রধান শহর: মহানদীর তীরে অবস্থিত শহরগুলি হল—সম্বলপুর, টিকারপাড়া, কটক।
2. গােদাবরী :
দৈর্ঘ্য : গােদাবরী নদীর মােট দৈর্ঘ্য 1465 কিমি।
উৎপত্তিস্থল: পশ্চিমঘাট পর্বতের ত্রিম্বকেশ্বর শৃঙ্গ (নাসিক) থেকে এই নদীর উৎপত্তি হয়েছে।
মােহানা: গােদাবরী বঙ্গোপসাগরে এসে মিশেছে।
গতিপথে অবস্থিত রাজ্য: মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা, ছত্তিশগড় ও অপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যের মধ্য দিয়ে এই নদী প্রবাহিত হয়েছে।
উপনদী: ইন্দ্রাবতী, প্রাণহিতা, মঞ্জিরা প্রভৃতি হল গােদাবরীর উপনদী।
শাখানদী: গৌতমী, বশিষ্ট, বৈনতেয় প্রভৃতি গােদাবরীর শাখানদী।
নদীতীরবর্তী প্রধান শহর: গােদাবরী নদীর তীরে নাসিক, নানদেদ, ভদ্ৰাচলম, রাজামুন্দ্রি, আদিলাবাদ, করিমনগর, নরসাপুরম প্রভৃতি শহর অবস্থিত।
3. কৃষ্ণা :
দৈর্ঘ্য: কৃষ্ণা নদীর মােট দৈর্ঘ্য 1400 কিমি।
উৎপত্তিস্থল: পশ্চিমঘাট পর্বতের মহাবালেশ্বর শৃঙ্গ থেকে এই নদীর উৎপত্তি হয়েছে।
মােহানা: কৃষ্ণা নদী বঙ্গোপসাগরে এসে মিশেছে।
গতিপথে অবস্থিত রাজ্য: মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের মধ্য দিয়ে এই নদী প্রবাহিত হয়েছে।
উপনদী: ভীমা, কয়না, মালপ্রভা, তুঙ্গভদ্রা, ঘাটপ্রভা, মুসি প্রভৃতি হল কৃষ্ণার উপনদী।
শাখানদী: নাগবতী, ভামসাধারা প্রভৃতি হল কৃষ্ণার শাখানদী।
নদীতীরবর্তী প্রধান শহর: সানগ্নি, বিজয়ওয়াড়া হল কৃষ্ণা নদীর তীরে অবস্থিত শহর।
4. কাবেরী :
দৈর্ঘ্য: কাবেরী নদীর মােট দৈর্ঘ্য 800 কিমি।
উৎপত্তিস্থল: পশ্চিমঘাট পর্বতের ব্ৰম্মগিরি পাহাড় থেকে এই নদীর উৎপত্তি হয়েছে।
মােহানা: কাবেরী নদী বঙ্গোপসাগরে এসে মিশেছে।
গতিপথে অবস্থিত রাজ্য: কর্ণাটক ও তামিলনাড়ু রাজ্যের মধ্য দিয়ে এই নদী প্রবাহিত হয়েছে।
উপনদী: হেমবতী, অর্কবতী, ভবানী, অমরাবতী প্রভৃতি হল কাবেরীর উপনদী।
শাখানদী: কোলেরুন কাবেরীর উল্লেখযােগ্য শাখানদী।
নদীতীরবর্তী প্রধান শহর: শ্রীরঙ্গম, তিরুচিরাপল্লি, ইরােড হল কাবেরী নদীর তীরে অবস্থিত শহর।
5. নর্মদা :
দৈর্ঘ্য: নর্মদা নদীর মােট দৈর্ঘ্য 1312 কিমি।
উৎপত্তিস্থল: মৈকাল পর্বতের অমরকন্টক শৃঙ্গ থেকে এই নদীর উৎপত্তি হয়েছে।
মােহানা: নর্মদা নদী খাম্বাত উপসাগরে এসে মিশেছে।
গতিপথে অবস্থিত রাজ্য: মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও গুজরাত প্রভৃতি রাজ্যের মধ্য দিয়ে নর্মদা নদী প্রবাহিত হয়েছে।
উপনদী: বর্ণা, ওরসাং প্রভৃতি হল নর্মদার উপনদী।
নদীতীরবর্তী প্রধান শহর: ওমকারেশ্বর, হােসাঙ্গাবাদ, ভারুচ প্রভৃতি এই নদীর তীরে অবস্থিত শহর।
6. তাপ্তী :
দৈর্ঘ্য: তাপ্তী নদীর মােট দৈর্ঘ্য 724 কিমি।
উৎপত্তিস্থল: সাতপুরা পর্বতের মুলতাই উচ্চভূমি থেকে এই নদীর উৎপত্তি হয়েছে।
মােহানা: তাপ্তী নদী খাম্বাত উপসাগরে এসে মিশেছে।
গতিপথে অবস্থিত রাজ্য: মহারাষ্ট্র ও গুজরাত প্রভৃতি রাজ্যের মধ্যে দিয়ে এই নদী প্রবাহিত হয়েছে।
উপনদী: গিরনা, পূর্ণা, ভাগুর, পাঞ্জারা প্রভৃতি হল তাপ্তীর উপনদী।
নদীতীরবর্তী প্রধান শহর: বুরহানপুর, ভুসাওয়াল, সুরাত প্রভৃতি এই নদীর তীরে অবস্থিত শহর।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।