ভারতের জলবায়ুর নিয়ন্ত্রকগুলির ভূমিকা আলােচনা করাে। | ভারতের জলবায়ুর নিয়ন্ত্রকগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

ভারতের জলবায়ুর নিয়ন্ত্রকগুলির ভূমিকা আলােচনা করাে।
অথবা, ভারতের জলবায়ুর নিয়ন্ত্রকগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।   Class 10 | Geography | 5 Marks

উত্তর:-

ভারতের জলবায়ুর নিয়ন্ত্রকসমূহ : যেসব উপাদান ভারতের জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে সেগুলি হল—

1. অবস্থান ও অক্ষাংশগত বিস্তৃতি : ভূপৃষ্ঠের তাপমণ্ডল অনুসারে ভারতের বেশিরভাগ স্থান উষ্ণমণ্ডলে অবস্থিত। এজন্য ভারতের জলবায়ু প্রধানত উষ্ণ ও আর্দ্র প্রকৃতির। আবার, অক্ষাংশগত বিস্তৃতি বিচার করলে দেখা যায়, ভারত নিরক্ষরেখার উত্তরে 8°4’ উত্তর থেকে 37°6’ উত্তর অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থিত এবং কর্কটক্রান্তিরেখা (23°30’ উত্তর অক্ষরেখা) ভারতের প্রায় মাঝখান দিয়ে বিস্তৃত হয়েছে। তাই অক্ষাংশ অনুসারে ভারতের দক্ষিণাংশ ক্রান্তীয় ও উত্তরাংশ উপক্রান্তীয় ও নাতিশীতােষ্ণু অঞ্চলের অন্তর্গত, অর্থাৎ দক্ষিণাংশের তুলনায় উত্তরাংশের উষ্ণতা কম।

2. হিমালয় পর্বতের অবস্থান : উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা প্রাচীরের মতাে দাঁড়িয়ে থেকে আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুকে বাধা দেয় বলে বর্ষাকালে উত্তর ভারতে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়। আবার, শীতকালে মধ্য এশিয়ার কনকনে ঠান্ডা বায়ুপ্রবাহকে এই হিমালয় পবর্তমালা প্রতিহত করে বলে উত্তর ভারত তীব্র ঠান্ডার প্রকোপ থেকে রক্ষা পায়। 

3. ভূপ্রকৃতি : উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে অধিক উচ্চতার জন্য গ্রীষ্মকাল মনােরম, কিন্তু উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ ভারতের সমভূমি অঞ্চলের গ্রীষ্মকাল খুবই কষ্টদায়ক। 

4. সমুদ্র সান্নিধ্য : তিনদিক সমুদ্রবেষ্টিত হওয়ায় দক্ষিণ ভারতের জলবায়ু অনেকটা সমভাবাপন্ন। কিন্তু সমুদ্র থেকে অনেক দূরে অবস্থিত বলে উত্তর ভারতের অভ্যন্তরভাগে শীত ও গ্রীষ্মের মধ্যে উষ্ণতার পার্থক্য খুব বেশি, অর্থাৎ জলবায়ু চরমভাবাপন্ন।  

5. মৌসুমি বায়ু : আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এবং শুষ্ক উত্তর পূর্ব মৌসুমি বায়ু—প্রধানত এই দুটি মৌসুমি বায়ু ভারতের জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে। আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবেই ভারতে বর্ষাকালের আগমন ঘটে, সারা দেশে বৃষ্টিপাত হয়। আবার, শীতল ও শুষ্ক উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের বেশিরভাগ অংশের তাপমাত্রা হ্রাস পায়, শীতল ও শুষ্ক অবস্থা বিরাজ করে। এ ছাড়া, এই দুই মৌসুমি বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমনের ওপর ভিত্তি করেই ভারতের জলবায়ুকে চারটি ঋতুতে ভাগ করা হয়েছে। 

অন্যান্য নিয়ন্ত্রক : 

1. জেট বায়ু : ভারতের ওপর শীতকালে উপক্ৰান্তীয় পশ্চিমা জেট বায়ু এবং বর্ষাকালে ক্রান্তীয় পুবালি জেট বায়ুর বিশেষ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। শীতকালে উপক্রান্তীয় পশ্চিমাজেট বায়ু তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে যতই দক্ষিণে সরে আসে ততই ভারতের শীতের তীব্রতা বাড়ে। আবার, বর্ষাকালে ক্রান্তীয় পুবালি জেট বায়ু তার স্বাভাবিক অবস্থানের তুলনায় বেশি উত্তরে সরে গেলে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর ছেদ ঘটে। ফলে বৃষ্টিপাত হ্রাস পায়, খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। 

2. ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত ও পশ্চিমি ঝঞ্জা : শরৎকালে প্রত্যাগমনকারী মৌসুমি বায়ুর সঙ্গে সামুদ্রিক বায়ুর সংঘর্ষে আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরের ওপর যেসব ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়, তার মাধ্যমে দেশের উপকূল অঞ্চলে ব্যাপক ঝড় বৃষ্টি হয়। আবার, শীতকালে মাঝে মাঝে ভূমধ্যসাগর অঞ্চল থেকে আসা পশ্চিমি ঝার জন্য উত্তর-পশ্চিম ভারতে বৃষ্টিপাত এবং হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে তুষারপাত হয়।

3. এল নিনাে ও লা নিনার প্রভাব : ক্রান্তীয় প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব প্রান্তে পেরু ইকুয়েডরের পশ্চিম উপকূল দিয়ে কোনাে কোনাে বছর ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে, বিশেষত বড়ােদিনের সময় শীতল সমুদ্রস্রোতের পরিবর্তে দক্ষিণমুখী একটি উষ্ণ সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয়। একে এল নিনাে নামে অভিহিত করা হয়। লক্ষ করে দেখা গেছে, এল নিনাে আবির্ভাবের বছরগুলিতে  ভারত-সহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং তার ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও কমে যায়। এজন্য তখন খরাজনিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং দাবানলের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। আবার বিপরীত দিকে কোনাে কোনাে বছর এল নিনাে অন্তর্হিত হলে প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম প্রান্তে গভীর নিম্নচাপ ও ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয় এবং তখন পূর্ব প্রান্তে গভীর উচ্চচাপ ও শান্ত আবহাওয়া বিরাজ করে। এল নিনাের ঠিক বিপরীত এই পর্যায়টিকে লা নিনা নামে অভিহিত করা হয়। লা নিনার বছরগুলিতে ভারতে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টিপাত হয় ও বেশি সংখ্যক ঘূর্ণবাতের আগমন ঘটে। ফলে বন্যা, ভূমিধসও বাড়ে এবং শীতকালে কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া সৃষ্টি হয়।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

2 thoughts on “ভারতের জলবায়ুর নিয়ন্ত্রকগুলির ভূমিকা আলােচনা করাে। | ভারতের জলবায়ুর নিয়ন্ত্রকগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।”

Leave a Comment