ভারতের জলবায়ুর ঋতুকালীন বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলােচনা করাে | ভারতের জলবায়ুর ঋতুবৈচিত্র্য আলােচনা করাে।

ভারতের জলবায়ুর ঋতুকালীন বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলােচনা করাে। 
অথবা, ভারতের জলবায়ুর ঋতুবৈচিত্র্য আলােচনা করাে।  Class 10 | Geography | 5 Marks

উত্তর:-

ভারতের জলবায়ুর ঋতুকালীন বৈশিষ্ট্য :  মৌসুমি বায়ুর আগমন এবং প্রত্যাগমন, সারাবছরব্যাপী বৃষ্টিপাত, উয়তা ও বায়ুর চাপের পার্থক্য প্রভৃতি অনুসারে ভারতের জলবায়ুকে চারটি কাল বা ঋতুতে ভাগ করা যায়।

1. শীতকাল (ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি): (i) এই সময় সূর্য দক্ষিণ গােলার্ধে থাকায় সূর্যরশ্মি দক্ষিণ গােলার্ধে লম্বভাবে এবং উত্তর গােলার্ধে তির্যকভাবে পড়ে। (ii) শীতকালে মধ্য এশিয়ার শীতল স্থলভাগ বা উচ্চচাপ এলাকা থেকে শীতল ও শুষ্ক উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু ভারতের ওপর দিয়ে দক্ষিণে ভারত মহাসাগরের নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। (iii) উত্তর ভারতে এসময় তাপমাত্রা হয় গড়ে 10-15°সে। দক্ষিণ ভারতে এই উত্তাপ ক্রমশ বেড়ে তামিলনাড়ুতে গড়ে 25°সে হয়। (iv) উত্তর-পশ্চিম ভারত (পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রভাবে) ও তামিলনাড়ুর উপকূল (প্রত্যাগমনকারী মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে) ছাড়া শীতকালে ভারতের অন্যত্র বিশেষ বৃষ্টিপাত হয় না। 

2. গ্রীষ্মকাল (মার্চ থেকে মে): (i) মার্চের শেষভাগ থেকেই দক্ষিণ গােলার্ধে সূর্য তির্যকভাবে কিরণ দিতে থাকায় উষ্ণতা হ্রাস পেতে থাকে এবং উত্তর গােলার্ধে সূর্যরশ্মির লম্ব পতনের প্রভাবে ভারতে তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়তে শুরু করে। (ii) মে মাসে সূর্য উত্তরে ক্রমশ কর্কটক্রান্তিরেখার কাছে সরে আসে, ফলে উত্তর গােলার্ধে উষ্ণতা আরও বেড়ে যায়। মে মাসে মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাতের গড় তাপমাত্রা 38-40 °সে হয়। রাজস্থানের মরু অঞ্চলে তাপমাত্রা বেড়ে হয় প্রায়। 48°সে। (iii) উত্তর-পশ্চিম ভারতে প্রচণ্ড উষ্ণতার জন্য দিনেরবেলা গরম বাতাস লু প্রবাহিত হয়। (iv) গ্রীষ্মকালে দেশের বিভিন্ন অংশে কতকগুলি স্থানীয় নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হওয়ার কারণে অপরাহ্ন বা বিকালের দিকে ঝােড়াে বাতাস ও বজ্রবিদ্যুৎ-সহ সামান্য বৃষ্টিপাত হয়। এই ঝড়কে পশ্চিমবঙ্গে কালবৈশাখী, বিহার ও উত্তরপ্রদেশে আঁধি, অসমে বরদৈছিলা, কেরলে আল্মবৃষ্টি এবং কর্ণাটকে চেরি ব্লসম বলে। (v) এই ধরনের ঝড়-বৃষ্টি হলে তখন তাপমাত্রা 7-8°সে পর্যন্ত হ্রাস পায়।

3. বর্ষাকাল বা মৌসুমি বায়ুর আগমনকাল (জুন থেকে সেপ্টেম্বর): গ্রীষ্মকালে ভারতীয় উপদ্বীপ অঞ্চলে, বিশেষত উত্তর-পশ্চিম ভারতে যে গভীর নিম্নচাপ বলয়ের সৃষ্টি হয়, তার আকর্ষণে সুদূর ভারত মহাসাগর থেকে আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে ভারতে প্রবেশ করে, যথা— (A) আরব সাগরীয় শাখা এবং (B) বঙ্গোপসাগরীয় শাখা।

চিত্র : দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমনের তারিখ

(A) আরব সাগরীয় শাখা: [i] দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর এই শাখাটি আরব সাগর থেকে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পশ্চিমঢালে সরাসরি বাধা পায় ও পশ্চিম উপকূলে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। [ii] পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্বঢ়ালে অবস্থিত দাক্ষিণাত্যের অভ্যন্তরভাগে জলীয় বাম্পের অভাবে বৃষ্টিপাত কম হয় বলে এই অঞ্চলটিকে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল বলে l

(B) বঙ্গোপসাগরীয় শাখা: [i] দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর এই শাখাটি বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর পরিমাণ জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে। এই বায়ুপ্রবাহ পূর্ব হিমালয় ও পূর্ব ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে প্রথম বাধা পায় বলে ওই অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। [ii] মেঘালয়ের খাসি পাহাড়ের দক্ষিণ ঢালে অবস্থিত মৌসিনরামে পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হয়— বার্ষিক প্রায় 1187 সেমি। [ii] পূর্ব হিমালয়ে বাধা পেয়ে বৃষ্টিপাত ঘটানাের পর এই বায়ু ক্রমশ পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে বিহার, উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যান্য রাজ্যে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায়।

4. শরৎকাল বা মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাগমনকাল (অক্টোবর থেকে নভেম্বর): (i) বার্ষিক আপাত গতি অনুসারে এসময় সূর্য বিষুবরেখা পেরিয়ে মকরক্রান্তিরেখার দিকে সরতে থাকে। ফলে এসময় উত্তর গােলার্ধে স্থলভাগের ওপর উচ্চচাপ এবং ভারত মহাসাগরের জলভাগের ওপর নিম্নচাপ বিরাজ করে। (ii) এই সময় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুও ভারত থেকে প্রত্যাগমন করে। (iii) এই প্রত্যাবর্তনকারী বায়ুর প্রভাবে ভারতের উপকূল অঞ্চলে মাঝে মাঝে ঘূর্ণিঝড়-সহ বৃষ্টিপাত হয়, একে বলে সাইক্লোন (পশ্চিমবঙ্গে ‘আশ্বিনের ঝড়’)।

চিত্র : দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাগমনের তারিখ

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment