ভারতীয় জনজীবনে হিমালয়ের প্রভাব বর্ণনা করাে।
অথবা, ভারতীয় জনজীবনে হিমালয়ের গুরুত্ব আলােচনা করাে। Class 10 | Geography | 5 Marks
উত্তর:-
ভারতীয় জনজীবনে হিমালয়ের প্রভাব : ভারতীয় জনজীবনে হিমালয়ের গুরুত্ব অপরিসীম –
1. জলবায়ুগত প্রভাব :
(i) তীব্র ঠান্ডা থেকে রক্ষা : হিমালয় পর্বতমালা ভারতের উত্তর ও পূর্ব দিকে প্রাকৃতিক প্রাচীরের (natural barrier) মতাে বিরাজ করায় শীতকালে মধ্য এশিয়ার তীব্র ঠান্ডা বায়ুকে ভারতে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। এজন্য উত্তর ভারত তীব্র ঠান্ডার থেকে রক্ষা পায়।
(ii) বৃষ্টিপাত : গ্রীষ্মকালীন দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু হিমালয়ে বাধা পায় বলে সারা ভারতে বৃষ্টিপাত হয়।
2. ভূমিরূপগত প্রভাব :
(i) নদনদীর উৎসস্থল : সুউচ্চ হিমালয়ের বিভিন্ন হিমবাহ থেকে গঙ্গা, যমুনা, তিস্তা প্রভৃতি বহু বরফগলা জলে পুষ্ট নদীর সৃষ্টি হয়েছে। এইসব নদী পার্বত্য প্রবাহে বিভিন্ন ধরনের বৈচিত্র্যপূর্ণ ভুমিরুপ গঠন করেছে, যেমন—গিরিখাত, জলপ্রপাত প্রভৃতি।
(iii) বিস্তৃত সমভূমি গঠন : হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল থেকে পলি বয়ে এনে নদীগুলি উত্তর ভারতে বিস্তীর্ণ উর্বর সমভূমির সৃষ্টি করেছে। ফলে এই সমভূমি অঞ্চলে কৃষিকার্য ও পরিবহণ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় এখানে জনবসতির ঘনত্ব বেশি।
3. অর্থনৈতিক প্রভাব :
(i) জলবিদ্যুৎ উৎপাদন : পার্বত্য অঞ্চলের নদীগুলি খরস্রোতা এবং সারাবছর বরফগলা জল পায় বলে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের উপযােগী।
(ii) বনজসম্পদ উৎপাদন : পশ্চিম হিমালয়ের বিক্ষিপ্ত অল্পবিস্তৃত তৃণভূমিগুলি মেষপালন এবং বিস্তীর্ণ সরলবর্গীয় অরণ্যগুলি কাষ্ঠ সম্পদ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত।
(iii) ভেষজ উদ্ভিদ সম্পদ উৎপাদন : পার্বত্য ঢালে প্রচুর পরিমাণে ভেষজ উদ্ভিদ, চা, সিঙ্কোনা এবং বিভিন্ন ফল (আপেল, কমলালেবু প্রভৃতি) উৎপন্ন হয়।
(iv) সুক্ষ্ম যন্ত্রপাতি শিল্পের উন্নতি : এখানকার জলবায়ু সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি (যেমন—ঘড়ি), শাল, কার্পেট, সূক্ষ্ম কারুশিল্প ও মৃৎশিল্পের উন্নতির পক্ষে বিশেষভাবে উপযােগী।
(v) পর্যটন শিল্পের বিকাশ : হিমালয়ের মনােরম প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভােগ করার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে অনেক পর্যটক আসেন, যা হােটেল শিল্প তথা পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটিয়েছে।
4. সাংস্কৃতিক প্রভাব :
(i) বৈচিত্র্যপূর্ণ সামাজিক গােষ্ঠীর আবাসস্থল : পার্বত্য অঞ্চলে পৃথক পৃথক সামাজিক গােষ্ঠী বসবাস করে। এদের প্রত্যেকের নিজস্ব ঐতিহ্যবিশিষ্ট সভ্যতা গড়ে উঠেছে।
(ii) বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা : প্রাচীনকাল থেকেই হিমালয় পর্বতমালা প্রাচীরের মতো অবস্থান করে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে ভারতকে রক্ষা করে এসেছে (কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া), যা ভারতের নিজস্ব সভ্যতা ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য গড়ে তুলতে ও বজায় রাখতে সাহায্য করেছে।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।