ভারতীয় সংবিধানে দুর্বল শ্রেণি বলতে কাদের বােঝায়? এদের পিছিয়ে পড়ার কারণ কী? 3 + 5 Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 8 Marks
উত্তর:-
ভারতীয় সংবিধানে দুর্বল শ্রেণি : ভারতীয় সংবিধানে দুর্বল শ্রেণি বলতে প্রধানত তিনটি সম্প্রদায়কে বােঝানাে হয়। যেমন—
[1] তপশিলি জাতি, [2] তপশিলি উপজাতি এবং [3] অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (Other Backward Classes)। সংবিধানের 46 নং ধারাতে এই তিন শ্রেণির শিক্ষা এবং আর্থিক উন্নতির ব্যবস্থা করার এবং এদেরকে সব ধরনের সামাজিক অবিচার ও শােষণ থেকে রক্ষা করার কথা বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং বৃত্তির ক্ষেত্রে এদের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন সংরক্ষণের নির্দেশও রয়েছে। এদের পিছিয়ে পড়ার কারণ আলােচনার পূর্বে জানা দরকার এরা কারা?
[1] তপশিলি জাতি: ভারতীয় সংবিধানে যেসব অনগ্রসর শ্রেণির মানুষকে পৃথকভাবে নির্দিষ্ট তপশিলে নথিভুক্ত করা হয়েছে, তাদের তপশিলি জাতি (Schedule Castes) নামে অভিহিত করা হয়। পূর্বে এই সম্প্রদায়ের মানুষদের অস্পৃশ্য বলে মনে করা হত এবং দীর্ঘকাল ধরে এরা সামাজিক ও ধর্মীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে এসেছে। দেশের প্রায় 15% মানুষ এই সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক।
[2] তপশিলি উপজাতি : দেশ স্বাধীন হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির নির্দেশে বিভিন্ন রাজ্যের অনগ্রসর উপজাতির মানুষদের একটি তালিকা (Schedule) প্রস্তুত করা হয়। ওই তালিকায় যেসব উপজাতির নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তাদের তপশিলি উপজাতি বা নথিভুক্ত উপজাতি (Scheduled Tribes) নামে অভিহিত করা হয়। দেশের প্রায় ৪% মানুষ এই সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। দীর্ঘদিনের বিচ্ছিন্নতা ও বঞ্চনার ফলে এই সম্প্রদায়ের মানুষেরা সমাজের মূলস্রোত থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
[3] অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি : তপশিলি উপজাতি এবং তপশিলি জাতির অন্তর্ভুক্ত সম্প্রদায় ছাড়াও যেসব সম্প্রদায়ের মানুষ শিক্ষাদীক্ষায় পিছিয়ে রয়েছে তাদের অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (Other Backward classes) অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
দুর্বল শ্রেণির পিছিয়ে পড়ার কারণ : দুর্বল শ্রেণির মানুষেরা বিভিন্ন কারণে সমাজের মূলস্রোত থেকে পিছিয়ে রয়েছে। এদের পিছিয়ে পড়ার কারণগুলি সংক্ষেপে আলােচনা করা হল —
[1] উচ্চ সম্প্রদায়ের বঞ্চনা : শিক্ষার অভাবে দুর্বল শ্রেণির মানুষেরা বহুক্ষেত্রেই উচ্চ সম্প্রদায়ের অসৎ ব্যক্তির দ্বারা বঞ্চিত হয়েছে। প্রচলিত জাতিভেদ ও অস্পৃশ্যতার কারণে তারা সাধারণ সমাজের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেনি।
[2] দারিদ্র্য : পূর্বে তপশিলি জাতি, উপজাতি এবং অন্যান্য পশ্চাৎপদ শ্রেণির মানুষেরা দারিদ্র্য সীমার নীচে বসবাস করত। আর্থিক কারণে তারা তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে পারত না!
[3] বিচ্ছিন্নতা : পূর্বে উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষরা এমন সব অঞ্চলে বসবাস করত, যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খুবই অভাবছিল সেই কারণেশিক্ষার ব্যাপারে এরা সমাজের অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষের থেকে পিছিয়ে পড়ে।
[4] শিক্ষার প্রতি অনীহা : পশ্চাৎপদ বা দুর্বল শ্রেণির বয়স্কদের অধিকাংশ নিরক্ষর হওয়ায়, তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে তেমন উৎসাহ নয়।
[5] শিক্ষোপকরণের অভাব : পশ্চাৎপদ সম্প্রদায়গুলির নিজেদের ভাষায় পাঠ্যপুস্তক না রচিত হওয়ায়, তারা পঠনপাঠনে আগ্রহ হারায়। পুস্তকের অভাবে তাদেরকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ভাষায় পঠন পাঠন করতে হয়।
[6] অন্যান্য কারণ : উল্লিখিত কারণ ছাড়াও দুর্বল শ্রেণির মানুষেরা অস্পৃশ্যতা, সাধারণ মানুষের সহযােগিতার অভাব, উপযুক্ত কর্মসূচির অভাব প্রভৃতি কারণে শিক্ষা থেকে পিছিয়ে পড়েছে।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।