বিজ্ঞানসাধনায় ভারত – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
উত্তর:
বিজ্ঞানসাধনায় ভারত
আজ সভ্যতা যে স্তরে উন্নীত হয়েছে তার মূলে রয়েছে বিজ্ঞান। মানুষ তার অনুসন্ধিৎসা নিরসনের জন্য বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যাপৃত হয়েছিল। সেই গবেষণা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়তে থাকে নানা ক্ষেত্রে। বিজ্ঞানসাধনার ক্ষেত্রে সাধারণত আমরা পাশ্চাত্যের উন্নত দেশগুলির প্রাধান্যই লক্ষ করি। আধুনিক গবেষণায় আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া প্রভৃতি দেশের অগ্রগতি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়; কিন্তু আমাদের দেশ ভারতবর্ষও বিজ্ঞানসাধনায় পিছিয়ে নেই। ভারতে বিজ্ঞানচর্চার ঐতিহ্য সুপ্রাচীন, আধুনিক গবেষণার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকার মধ্য দিয়ে ঐতিহ্যের সেই ধারা এখনও অটুট রয়েছে।
প্রাচীন ভারতে বিজ্ঞানচর্চার একটি সমৃদ্ধ ধারা বর্তমান ছিল। গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিৎসাশাস্ত্র, স্থাপত্য, ধাতুবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রাচীন ভারতে ব্যাপক অনুশীলন হয়েছে। ভারতের আয়ুর্বেদশাস্ত্র ছিল যথেষ্ট উন্নত l চরক, সুশ্রুত, ধন্বন্তরি প্রমুখ ব্যক্তিত্ব চিকিৎসার ইতিহাসে স্মরণীয়। প্রাচীন ভারতে শল্যচিকিৎসার প্রচলনও ছিল। জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে প্রাচীন ভারতের একটি স্মরণীয় নাম আর্যভট্ট।
ভারতীয় বিজ্ঞানচর্চার এই প্রাচীন ও গৌরবময় ধারাটি নানা কারণে লুপ্ত হয়ে যায়। বহুকাল পরে পাশ্চাত্যের সংস্পর্শে ভারত আবার বিজ্ঞান সচেতন হয়ে ওঠে। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ভারতের বিজ্ঞানীরাও বিশিষ্ট স্থান অধিকার করতে শুরু করেন। জগদীশচন্দ্র বসু, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহা, সি ভি রমন, এইচ জি ভাবা প্রমুখের নাম শুধু ভারতে নয়, সমগ্র বিশ্বেই আজ কীর্তিত। মহাকাশ, পরমাণু, সমুদ্র, উদ্ভিদ ও প্রাণীজগৎ, চিকিৎসা, খনিজ, ইলেকট্রনিকস্ এবং আরও বহু ক্ষেত্রে ভারত বৈজ্ঞানিক গবেষণায় নিমগ্ন। এগুলির মধ্যে মহাকাশ, পরমাণু ও সমুদ্র—এই তিনটি ক্ষেত্রে ভারতবর্ষের অগ্রগতি বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
মহাকাশ গবেষণায় ভারতের অগ্রণী ভূমিকা লক্ষ করা যাচ্ছে। বর্তমানে Indian Space Research Organisation বা সংক্ষেপে ISRO নামে যে। মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি গঠিত হয়েছে, তার তত্ত্বাবধানে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান মহাকাশবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজ করে চলেছে। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ভারত প্রথম ‘আর্যভট্ট’ নামে একটি কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করে। ভারতের দ্বিতীয় উপগ্রহ ‘ভাস্কর’ উৎক্ষিপ্ত হয় ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে। দুটি। ক্ষেত্রেই রাশিয়া বিশেষভাবে সাহায্য করেছিল। সম্পূর্ণ ভারতীয় প্রচেষ্টায় ‘রােহিণী’ নামের উপগ্রহটি উৎক্ষিপ্ত হয় ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে। এর পর থেকে নানা সময়ে বিভিন্ন কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করেছে ভারত। শুধু কৃত্রিম উপগ্রহ নয়, মহাকাশে মানুষও পাঠিয়েছে ভারত। মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে ভারতের উদ্যোগ ও সাফল্য বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
পারমাণবিক গবেষণাতেও ভারত আজ যথেষ্ট এগিয়ে। কেবল পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি নয়, পারমাণবিক শক্তিকে বিভিন্ন কল্যাণমূলক কাজে কীভাবে ব্যবহার করা যায়, তা নিয়েও অবিরাম কাজ করে চলেছেন ভারতীয়। বিজ্ঞানীরা। রােগ নিরাময়ের ক্ষেত্রেও এই শক্তির প্রয়ােগ ঘটানাে হচ্ছে। ভারত যুদ্ধ চায় না, কিন্তু সে আত্মরক্ষার জন্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতেও পিছিয়ে নেই। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় স্থাপিত হয়েছে পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র। এক্ষেত্রে সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য কেন্দ্রটি স্থাপিত হয়েছে। মহারাষ্ট্রের তারাপুরে।
সমুদ্রের আর-এক নাম রত্নাকর। রত্নগর্ভা সমুদ্র সম্পর্কে প্রাচীনকাল থেকেই ভারতের আগ্রহ সর্বজনবিদিত। আধুনিক ভারতের বিজ্ঞানীরাও সমুদ্রবিজ্ঞান নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আধুনিক গবেষণায় সমুদ্র সম্পর্কে পাওয়া যাচ্ছে প্রচুর তথ্য, পাওয়া যাচ্ছে সমুদ্রগর্ভ থেকে মূল্যবান সম্পদ উদ্ধারের সূত্র। সামুদ্রিক প্রাণী, সামুদ্রিক উদ্ভিদ, সমুদ্রজাত আরও নানান জিনিস সম্পর্কে ক্রমাগত নানান তথ্য আবিষ্কার করে চলেছেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা।
বহুকাল পূর্বে ভারত বিজ্ঞানসাধনায় সমৃদ্ধ ছিল। আজ আবার তাকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখাতেই ভারতীয় বিজ্ঞানীরা আজ তাঁদের কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছেন। ভারত এখনও বিজ্ঞানসাধনায় পাশ্চাত্যের উন্নত দেশগুলির সমকক্ষ হয়ে উঠতে না পারলেও আমাদের দৃঢ় প্রত্যয় একদিন সে ‘জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে’।
আরো পড়ুন
সর্বশিক্ষা অভিযান – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
অবকাশযাপন | মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
ভারতের জাতীয় সংহতি | মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
উন্নয়ন বনাম পরিবেশ | মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
প্রয়াত বাঙালি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখােপাধ্যায় – জীবনীমূলক প্রবন্ধ রচনা
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।
Please make this answer shorter
😭😭