Class 11 Class 11 Education বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো

বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো

বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো
অথবা, প্রাচীন ভারতের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।

উত্তর : 

প্রাচীন ভারতের শিক্ষাকেন্দ্র — বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয় : 

প্রাচীন ভারতের একটি উল্লেখযােগ্য উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান হল বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি যখন কিছুটা অস্তাচলে তখনই বিক্রমশীলা মহাবিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নীচে দেওয়া হল —

[1] অবস্থান : এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে। কারুর মতে, এটি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটবর্তী অংশে অবস্থিত ছিল। আবার কারুর মতে, এটি বিহারের ভাগলপুর জেলায় অবস্থিত। 

[2] প্রতিষ্ঠা : নবম শতাব্দীতে পাল যুগে সম্রাট ধর্মপাল এই বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপন করেন। ধর্মপালের নাম ছিল বিক্রমশীল। তার নামানুসারেই এটি বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিতি লাভ করে। এই বিশ্ববিদ্যালয়টির চারদিকে সুউচ্চ প্রাচীর ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝখানে ছিল মহাবােধির মূর্তি। 

[3] পরিকাঠামাে : বিক্রমশীলা মহাবিহারে ছিল মােট 108টি মঠ এবং 6টি মহাবিদ্যালয়। এর প্রত্যেকটিতে ছিলেন 108 জন করে শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছ-টি প্রধান দ্বার ছিল। প্রত্যেক দ্বারে থাকতেন একজন করে দ্বারপণ্ডিত। কুলপতি বা উপাচার্য হতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে জ্ঞানী বা পণ্ডিত ব্যক্তি। 

[4] পাঠক্রম : বিক্রমশীলা মহাবিহারে মহাযান বৌদ্ধ ধর্ম মতের অনুশীলন হত। তবে হীনযান বৌদ্ধ ধর্মমতেরও স্থান ছিল। এগুলি পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ ছাড়াও পাঠক্রমে ব্যাকরণ, ন্যায়শাস্ত্র, যােগশাস্ত্র, চিকিৎসাশাস্ত্র, জ্যোতিষশাস্ত্র, শিল্পবিদ্যা, জাদুবিদ্যা ইত্যাদি বিষয়কেও স্থান দেওয়া হয়েছিল। মােটকথা এখানকার পাঠক্রম নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রমের অনুরূপ ছিল।

[5] শিক্ষণ পদ্ধতি : বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতাে মৌখিক ও আবৃত্তি পদ্ধতিতে পাঠদান করা হত। আলােচনা ও বিতর্কের মাধ্যমেও শিক্ষাদানের ব্যবস্থা ছিল। শ্রেণিশিক্ষা ও ব্যক্তিগত শিক্ষা উভয়ই প্রচলিত ছিল। 

[6] মূল্যায়ন ও উপাধি : বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাক্রম শেষে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া হত। মূলত মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হত। সকল শিক্ষার্থীরা রাজার কাছ থেকে উপাধি লাভ করত। সাধারণত পণ্ডিত, মহাপণ্ডিত, উপাধ্যায় প্রভৃতি উপাধি দান করা হত। 

[7] অধ্যাপকমন্ডলী : বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু খ্যাতিমান অধ্যাপক অধ্যাপনা করতেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলেন—জ্ঞানপাদ, প্রভাকর মিত্র, জ্ঞানশ্রী মিত্র, অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান, অভয়কর গুপ্ত প্রমুখ।

[8] ব্যয়ভার : পালবংশীয় রাজারাই বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় ব্যয়ভার গ্রহণ করত। পঠনপাঠনের জন্য শিক্ষার্থীদের কোনােরূপ বেতন বা অর্থ প্রদান করতে হত না। 

[9] শূলা : বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে কঠোরভাবে শৃঙ্খলা মেনে চলা হত। সন্ধে হলেই মঠের প্রধান প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দেওয়া হত। ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপকগণ ছাত্রাবাসের নিয়মশৃঙ্খলা বজায় রাখার ব্যাপারে তৎপর হতেন।

[10] ধ্বংস : মুসলিম সেনাবাহিনীর আক্রমণে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়টিও ধ্বংস হয়।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

3 thoughts on “বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো”

  1. বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নাম কি ছিল?

    Reply

Leave a Comment

error: Content is protected !!