বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন স্নাতকোত্তর শিক্ষণ ও গবেষণা প্রসঙ্গে যেসব গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করে, তা আলােচনা করাে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন স্নাতকোত্তর শিক্ষণ ও গবেষণা প্রসঙ্গে যেসব গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করে, তা আলােচনা করাে। Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 8 Marks

উত্তর:

স্নাতকোত্তর শিক্ষা ও গবেষণা প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন কলা এবং বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকোত্তর শিক্ষণ ও গবেষণা প্রসঙ্গে যেসব গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করে, সেগুলি হল— 

[1] এমএ, এমএসসি কোর্স

 i. এমএ এবং এমএসসি ডিগ্রি অর্জনের জন্য পাস কোর্সের স্নাতকদের দু বছর এবং অনার্স কোর্সের স্নাতকদের তিন বছর পড়াশােনা করতে হবে।

ii. স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশােনার ক্ষেত্রে শিক্ষাদানের কাজ পরিচালিত হবে নিয়মিত লেকচার ও সেমিনারের মাধ্যমে। 

iii. ব্যাবহারিক বিষয়গুলির জন্য নিয়মিত বীক্ষণাগার ব্যবহারের ব্যবস্থা করতে হবে।

iv. কোনাে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে উন্নততর শিক্ষা এবং গবেষণা পদ্ধতি (research methodology) শিক্ষার বিষয়ও কোর্সের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। 

v. দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধার ভিত্তিতে ভারতের যে-কোনাে রাজ্যের শিক্ষার্থী ভরতি হতে পারবে। vi. প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। 

[2] পিএইচডি ডিগ্রি :

i. পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের কমপক্ষে দু বছর অধ্যয়ন করতে হবে। 

ii. পিএইচডি স্তরের শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের গভীরতা ও প্রসারতা যাচাই করে তবেই তাদের ডিগ্রি দান করতে হবে। 

iii. পিএইচডি স্তরের মূল্যায়নের জন্য শিক্ষার্থীদের ‘থিসিস’ জমা দিতে হবে এবং থিসিসের ওপর মৌখিক পরীক্ষারও ব্যবস্থা থাকবে। 

iv. পিএইচডি স্তরে শিক্ষার্থী ভরতি নেওয়ার সময় খুবই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং সর্বভারতীয় ভিত্তিতে রিসার্চ স্কলার গ্রহণ করতে হবে। 

[3] গবেষণামূলক শিক্ষণ :

i. যে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদানের কাজ চলে, সেখানে প্রতিটি শাখাতে গবেষণামূলক শিক্ষণের জন্য প্রয়ােজনীয় পরিকাঠামাে গড়ে তুলতে হবে। 

ii. যে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় কেবলমাত্র অনুমােদন দান করে থাকে, সেই সমস্ত অনুমােদনধর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ে ধীরে ধীরে স্নাতকোত্তর গবেষণার জন্য প্রয়ােজনীয় পরিকাঠামাে গড়ে তুলতে হবে। 

[4] ফেলােশিপের ব্যবস্থা : 

i. পিএইচডি স্তরে পাঠরত শিক্ষার্থী তথা রিসার্চ স্কলারদের জন্য ফেলােশিপের ব্যবস্থা করতে হবে। 

ii. ফেলােশিপের ব্যবস্থা থাকলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা গবেষণায় উৎসাহী

হবে। 

[5] ডিলিট ও ডিএসসি ডিগ্রি : কোনাে পিএইচডি ডিগ্রিধারী ব্যক্তি উচ্চমানের মৌলিক গবেষণা করলে, তার প্রকাশিত বিষয়ের (published Work) জন্য কলা বিভাগে ডিলিট ডিগ্রি প্রদান করা হবে এবং বিজ্ঞান বিভাগে ডিএসসি ডিগ্রি প্রদান করা হবে। 

[6] বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক :

i. বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে পাঠদানে নিযুক্ত শিক্ষকদের কতকগুলি গুণাবলি থাকবে। তারা নিষ্ঠাবান হবেন, তাদের নিয়মানুবর্তিতা শিক্ষার্থীদের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে। 

ii. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গবেষণার ক্ষেত্রে নতুন নতুন পদ্ধতি এবং ধারণা সৃষ্টি করে শিক্ষার্থীদের বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করবেন। 

[7] গবেষণার উপাদান: কমিশনের মতে, ভারতে ভাষা, সাহিত্য, দর্শন, ধর্ম, ইতিহাস, ললিতকলা প্রভৃতি বিষয়ে গবেষণার জন্য অফুরন্ত উপাদান। রয়েছে, গবেষকরা যা কাজে লাগিয়ে গবেষণায় নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করবে।

[8] বিজ্ঞানচর্চার ব্যবস্থা: বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে প্রতিভাবান বিজ্ঞান শিক্ষক এবং বিজ্ঞান চেতনায় উদ্বুদ্ধ কর্মী (scientific manpower)-এর চাহিদাপূরণের জন্য বিজ্ঞানচর্চার ওপর বেশি নজর দিতে হবে।

[9] শিক্ষার্থী নির্বাচন :

i. বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে বিশেষ করে এমএসসি, পিএইচডি প্রভৃতি কোর্সের জন্য মেধাবী শিক্ষার্থী নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত শিক্ষার্থী নির্বাচনি সংস্থা গড়ে তুলতে হবে। 

ii. বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তিদানের ব্যবস্থা করতে হবে। 

[10] বিজ্ঞান বিভাগকে শক্তিশালী করা :

i. বিশ্ববিদ্যালয়গুলির বিজ্ঞান বিভাগকে অধিক শক্তিশালী করার জন্য | উপযুক্ত সংখ্যক শিক্ষক নিয়ােগ করতে হবে। 

ii. শিক্ষক নির্বাচনের ক্ষেত্রে কেবল সংখ্যাবৃদ্ধির পরিবর্তে প্রতিভাবান ও গুণী শিক্ষক নিয়ােগের ব্যবস্থা করতে হবে।

[11] গবেষণায় অগ্রাধিকার :

i. গবেষণার ক্ষেত্রে মৌলিক গবেষণাকেই প্রাধান্য দিতে হবে। 

ii. কেবল ডিগ্রি অর্জনের পরিবর্তে নতুন কিছু আবিষ্কারের জন্য যাতে। গবেষকরা কাজ করেন, সে বিষয়ে নজর দিতে হবে। 

iii. বিজ্ঞান বিষয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থ মঞ্জুর করতে হবে। 

[12] সুযােগ সৃষ্টি :

i. জীববিজ্ঞান বিষয়ে গবেষণার জন্য কমপক্ষে 5 টি সামুদ্রিক জীববিজ্ঞান কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। 

ii. জীবরসায়ন, জীবপদার্থবিদ্যা, জিয়ােকেমিস্ট্রি, জিয়ােফিজিক্স প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষাদানের জন্য ও গবেষণার জন্য প্রয়ােজনীয় পরিকাঠামাে গড়ে তুলতে হবে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment