বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার কাঠামাে প্রসঙ্গে রাধাকৃষ্ণন কমিশনে বক্তব্য কী? বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার পাঠক্রম সম্পর্কে কমিশনে সুপারিশগুলি আলােচনা করাে। Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 8 Marks
উত্তর:
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার কাঠামাে প্রসঙ্গে রাধাকৃষ্মণ কমিশনের বক্তব্য
রাধাকৃষণ কমিশনের মতে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার উন্নতি সাধন করতে। মাধ্যমিক শিক্ষারও উন্নয়ন ঘটাতে হবে। বিদ্যালয় এবং ইনটারমিডিয়েট ছয় বারাে বছর পাঠ শেষ করে সকল শিক্ষার্থী যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠন জন্য না আসে, তার জন্য দেশের বিভিন্ন অংশে যথেষ্ট সংখ্যক বৃত্তিশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে। কলা ও বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি। নিয়মকানুনের মধ্যে সংগতি বজায় রাখতে হবে। পাস কোর্সে স্নাতক ডিগিক জন্য দুবছর এবং অনার্স কোর্সে স্নাতক ডিগ্রির জন্য শিক্ষার্থীদের তিন বছর। অধ্যয়ন করতে হবে। গ্রামাঞ্চলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি, জনশিক্ষা, গ্রামােন্নয়ন, সমাজ উন্নয়ন প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার পাঠক্রম সম্পর্কে কমিশনের সুপারিশসমূহু
রাধাকৃষ্ণণ কমিশন তৎকালীন ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে প্রচলিত। সাধারণ শিক্ষার (যথা কলা বিভাগ ও বিজ্ঞান বিভাগ) এবং বিভিন্ন পেশাগত। শিক্ষার পাঠক্রম পর্যালােচনা করে, কতকগুলি সুপারিশ করেছে। এখানে। সেগুলির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ উল্লেখ করা হল।
[1] কলা ও বিজ্ঞান বিভাগের পাঠক্রম সম্পর্কিত সুপারিশ
i. বিদ্যালয়ে বারাে বছর অর্থাৎ, দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাগ্রহণের পর শিক্ষার্থীরা কলা ও বিজ্ঞান বিভাগে ভরতি হতে পারবে| বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভরতির জন্য শিক্ষার্থীদের দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় বা সমতুল্য অন্য। কোনাে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
ii. স্নাতক স্তরে পাস ও অনার্স কোর্সে তিন বছরের পাঠক্রম পড়তে হবে৷ অনার্স কোর্সের শিক্ষার্থীরা তিন বছর এবং পাস কোর্সের শিক্ষার্থীরা। দুবছর পর স্নাতক ডিগ্রি লাভ করবে।
iii. মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে সাধারণ শিক্ষার তত্বগত এবং ব্যাবহারিক দিক সম্পর্কে পঠনপাঠনের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষার্থীরা যাতে নিজেদের পছন্দমতাে বিভিন্ন বিষয়ে পাঠগ্রহণের এবং ডিগ্রি লাভের সুযােগ পায়, সেজন্য উপযুক্ত পাঠক্রম প্রণয়ন করতে হবে।
iv. যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিক্ষার মূলনীতি স্থির করতে হবে এবং সেটিকে বাস্তবায়িত করার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে৷ ইনটারমিডিয়েট এবং স্নাতক স্তরে অতিরিক্ত পাঠের বােঝা হালকা করতে হবে।
v. সাধারণধর্মী শিক্ষা ও বিশেষধর্মী শিক্ষার মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে।
[2] পেশাগত শিক্ষার পাঠক্রম সম্পর্কিত সুপারিশ : রাধাকৃষণ কমিশনে পেশাগত শিক্ষার ক্ষেত্রে কৃষি, বাণিজ্য, শিক্ষাবিজ্ঞান, কারিগরি ও প্রযুক্তিবিদ্যা, আইন এবং চিকিৎসাশাস্ত্র—এই ছয়টি বিষয়ের পাঠক্রম। সম্পর্কে যে সুপারিশ করা হয়, তা হল
i. কৃষি: শিক্ষার সকল স্তরে কৃষি বিষয়টির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরােপ করতে হবে। কৃষি মহাবিদ্যালয়গুলির পরিকাঠামাের উন্নয়ন ঘটাতে। হবে এবং সেগুলিকে গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। অধিক সংখ্যক কৃষিখামার স্থাপন করতে হবে এবং কৃষি বিষয়ক গবেষণার ক্ষেত্রে আরও বেশি নজর দিতে হবে।
ii. বাণিজ্য : বাণিজ্য বিভাগে পাঠরত শিক্ষার্থীরা যাতে হাতেকলমে কাজ শেখার সুযােগ পায়, তার জন্য বিভিন্ন ফার্মে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে | স্নাতকোত্তর পর্যায়ের বাণিজ্যশিক্ষা যাতে কেবল পথিকেন্দ্রিক না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
iii. শিক্ষাবিজ্ঞান: শিক্ষাবিজ্ঞান বা শিক্ষাতত্ত্বের পাঠ্যক্রমকে নতুনভাবে প্রণয়ন করতে হবে। বিদ্যালয়ে শিক্ষাদানের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য উপযুক্ত বিদ্যালয়ের সাহায্য গ্রহণ করতে হবে।
iv. কারিগরি ও প্রযুক্তিবিদ্যা: কারিগরি এবং প্রযুক্তিবিদ্যার ক্ষেত্রে সমস্ত শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য প্রথম বর্ষের পাঠক্রম একই ধরনের হবে| মহাবিদ্যালয়ে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠনের পাশাপাশি তারা যাতে কর্ম অভিজ্ঞতা লাভের সুযােগ পায়, তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
v. আইন; আইন নিয়ে পড়াশােনা করতে হলে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তিন বছরের স্নাতক কোর্স পাস করতে হবে। আইন বিষয়ের স্নাতক কোর্সের সময়কাল হবে তিন বছর। শেষ বছরে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে কোনাে অ্যাডভােকেটের অধীনে কাজ করে ব্যাবহারিক জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
vi. চিকিৎসাশাস্ত্র : চিকিৎসাশাস্ত্রের যে বিষয়গুলিতে শিক্ষাদানের জন্য হাসপাতালের সহায়তা দরকার, সেই বিভাগ-গুলিকে হাসপাতালসংলগ্ন করতে হবে | চিকিৎসাশাস্ত্রের অর্ধ-স্নাতক ও স্নাতক পর্যায়ে কোনাে গ্রামীণ কেন্দ্রে শিক্ষাগ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে। পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং এবং নার্সিং কোর্সগুলির ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য 10টি করে শয্যা থাকবে। চিকিৎসাশাস্ত্রের প্রথম স্নাতক কোর্সে ভারতীয় প্রণালী-সহ। ভেষজশাস্ত্রের ইতিহাস পড়ানাের ব্যবস্থা করতে হবে।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।