উদাহরণসহ বিভিন্ন প্রকার বৃষ্টিপাত সংক্ষেপে আলােচনা করাে। অথবা, বিভিন্ন ধরনের বৃষ্টিপাতের প্রক্রিয়া বর্ণনা করাে।

উদাহরণসহ বিভিন্ন প্রকার বৃষ্টিপাত সংক্ষেপে আলােচনা করাে। অথবা, বিভিন্ন ধরনের বৃষ্টিপাতের প্রক্রিয়া বর্ণনা করাে। Class 10 | Geography | 5 Marks

উত্তর: বিভিন্ন প্রকার বৃষ্টিপাত উৎপত্তি ও বৈশিষ্ট্যগত তারতম্যের ভিত্তিতে বৃষ্টিপাতকে তিনভাগে ভাগ করা যায়, যথা—

1. পরিচলন বৃষ্টিপাত :

ধারণা: ভূপৃষ্ঠ উয় হলে পরিচলন পদ্ধতিতে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু প্রবলবেগে ওপরে উঠে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে যে বৃষ্টিপাত ঘটায়, সেই বৃষ্টিপাত পরিচলন বৃষ্টিপাত নামে পরিচিত। 

পদ্ধতি: ভূপৃষ্ঠের যে সমস্ত স্থানে জলভাগ বেশি সেখানে দিনের বেলায় প্রখর সূর্যকিরণে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু হালকা ও প্রসারিত হয়ে দ্রুত অনেক ওপরে উঠে গিয়ে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে প্রথমে মেঘের সৃষ্টি করে। পরে ওই মেঘে উপস্থিত জলকণাগুলি পরস্পর যুক্ত হয়ে ক্রমশ বড়াে হয় ও পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে ভূপৃষ্ঠে পরিচলন বৃষ্টিরুপে নেমে আসে। 

উদাহরণ: নিরক্ষীয় অঞলে সারাবছর ধরে বিকেলের দিকে এই বৃষ্টি হয়।

2. শৈলােৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত: ধারণা: জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু পর্বতের গায়ে প্রতিহত হয়ে পর্বতের গা বেয়ে ওপরে উঠে গিয়ে ক্রমশ শীতল ও ঘনীভূত হয়ে পর্বতের প্রতিবাত ঢালে যে বৃষ্টিপাত ঘটায়, সেই বৃষ্টিপাত শৈললাৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত নামে পরিচিত। 

পদ্ধতি: জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু ভূপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় পর্বতে বাধা পেলে পর্বতের ঢাল বেয়ে ওপরের দিকে ওঠে এবং ওপরে উঠে প্রসারিত ও শীতল হয়। এর ফলে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে পর্বতের প্রতিবাত ঢালে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। এরপর পর্বত অতিক্রম করে ওই বায়ু বিপরীত দিকের অনুবাত ঢাল বেয়ে ওপর থেকে নীচে নামে বলে উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন করে জলীয় বাম্প ধারণ করার ক্ষমতাও বেড়ে যায়। এজন্য পর্বতের অনুবাত ঢালে ও এর সংলগ্ন এলাকায় বৃষ্টিপাত খুব কম হয় এবং বৃষ্টিচ্ছায় অঞল তৈরি হয়। 

উদাহরণ: [i] দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়র। প্রভাবে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পশ্চিম ঢালে প্রচুর পরিমাণে শৈলােৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত হয়। তবে এই পর্বতমালার পূর্ব ঢাল এবং সন্নিহিত এলাকাসমূহে বৃষ্টিচ্ছায় অল সৃষ্টি হয়েছে। [ii] মেঘালয়ের খাসি পাহাড়ের দক্ষিণ ঢালে অবস্থিত চেরাপুঞ্জি, মৌসিনরামে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে প্রবল। শৈলােৎক্ষেপ বৃষ্টি হলেও খাসি পাহাড়ের উত্তর দিকে অর্থাৎ অনুবাত ঢালে অবস্থিত শিলং বৃষ্টিচ্ছায় অঞলে পরিণত হয়েছে ।

3. ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত: 

ধারণা : বাতাসের ঘূর্ণন গতির জন্যে। জলীয় বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র বায়ু ওপরে উঠে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে যে বৃষ্টিপাত ঘটায়, সেই বৃষ্টিপাত ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত নামে পরিচিত।

পদ্ধতি :

[i] ক্রান্তীয় অঞ্চলের ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত: ক্রান্তীয় অঞলে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হলে চারপাশের উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে শীতল ও ভারী বায়ু নিম্নচাপের কেন্দ্রের দিকে ছুটে আসে। কিন্তু কেন্দ্রে প্রবেশ করার আগেই ওই বায়ু কুণ্ডলাকারে ঘুরতে। ঘুরতে প্রবলবেগে ওপরে উঠে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে এই প্রকার বৃষ্টিপাত ঘটায়। 

উদাহরণ: সমুদ্রসংলগ্ন ক্রান্তীয় অঞ্চলে এই ধরনের বৃষ্টিপাত হয়। 

[i] নাতিশীতোষ্ণ অঞলের ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত : নাতিশীতোষ্ণ অঞলে শীতল ও উবায়ু পরস্পরের অভিমুখে প্রবাহিত হলে উয় বায়ু হালকা হওয়ায় শীতল বায়ুর ওপর উঠে যায় এবং দুটিভিন্নধর্মী বায়ুর মাঝে সীমান্ত (Front) তৈরি হয়। উয় বায়ু ক্রমাগত ওপরে উঠতে থাকায় বায়ুর মধ্যে থাকা জলীয় বাষ্প শীতল ও | ঘনীভূত হয় এবং সীমান্ত বরাবর ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত ঘটায়।

উদাহরণ : উষ্ণ নাতিশীতােষ্ণ অঞ্চলে এই প্রকার বৃষ্টিপাত হয়।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment