দশম শ্রেনী (মাধ্যমিক) Class 10 Geography বিভিন্ন প্রকার সাময়িক বায়ুপ্রবাহের পরিচয় দাও

বিভিন্ন প্রকার সাময়িক বায়ুপ্রবাহের পরিচয় দাও

উত্তর: বিভিন্ন প্রকার সাময়িক বায়ুপ্রবাহ 

সাময়িক বায়ু প্রধানত চারপ্রকার —

1. সমুদ্রবায়ু: জলভাগের তুলনায় স্থলভাগ দ্রুত উষ্ণ ও শীতল হয় বলে দিনেরবেলা সমুদ্র অপেক্ষা সংলগ্ন স্থলভাগ বেশি উষ্ণ হয়।এজন্য স্থলভাগের বায়ু দ্রুত হালকা ও প্রসারিত হয়ে ঊর্ধ্বগামী হয়। এর ফলে স্থলভাগের ওপর বায়ুচাপ হ্রাস পায় এবং সমুদ্রের ওপর বায়ুচাপ কিছুটা বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ স্থলভাগের ওপর সৃষ্টি হয়। নিম্নচাপ এবং সমুদ্রের ওপর উচ্চচাপ এর ফলে সমুদ্রের ওপর। থেকে অপেক্ষাকৃত শীতল যে বায়ু স্থলভাগের ওই নিম্নচাপ পূরণ করার জন্য স্থলভাগের দিকে ছুটে আসে, তাকে বলা হয় সমুদ্রবায়ু।

বৈশিষ্ট্য: সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞলে দিনেরবেলায় এই ধরনের বায়ু প্রবাহিত হয়।

2. স্থলবায়ু: রাতে স্থলভাগ দ্রুত তাপ বিকিরণ করে শীতল হলেও জলভাগ তখনও উয় থাকে। তাই স্থলভাগের ওপর তখন উচ্চচাপ এবং সমুদ্রের ওপর নিম্নচাপ বিরাজ করে। ওই নিম্নচাপ পূরণ করার জন্য স্থলভাগ থেকে অপেক্ষাকৃত শীতল যে বায়ু সমুদ্রের দিকে ছুটে যায়, তাকে বলা হয় স্থলবায়ু।

বৈশিষ্ট্য: এই বায়ু সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে মাঝরাতের পর বিশেষ করে শেষরাতের দিকে বা ভােরবেলা প্রবলভাবে প্রবাহিত হয়। 

3. মৌসুমি বা ঋতুভিত্তিক বায়ু: গ্রীষ্ম ও শীত ঋতুতে জলভাগ ও স্থলভাগের মধ্যে বায়ুর উন্নতা ও বায়ুচাপের পার্থক্যের জন্য যথাক্রমে জলভাগ থেকে স্থলভাগের দিকে এবং স্থলভাগ থেকে জলভাগের দিকে যে বায়ু প্রবাহিত হয় সেই বায়ুকে বলা হয়। ঋতুভিত্তিক বায়ু। মৌসুমি বায়ু হল এই ধরনের সাময়িক বায়ু বা ঋতুভিত্তিক বায়ু। প্রকৃতপক্ষে এই বায়ু সমুদ্রবায়ু ও স্থলবায়ুর। বৃহৎ সংস্করণ।

বৈশিষ্ট্য: ভারতে গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বা । গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বায়ু এবং শীতকালে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু। বা শীতকালীন মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়।

4. পার্বত্য ও উপত্যকা বায়ু: পার্বত্য অঞ্চলে রাতের বেলা পার্বত্য বায়ু এবং দিনের বেলা উপত্যকা বায়ু প্রবাহিত হয়। পার্বত্য বায়ু : শান্ত মেঘমুক্ত রাত্রিতে পর্বতের ওপর অংশের বায়ু দ্রুত তাপ বিকিরণ করে শীতল ও ভারী হয় এবং মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে পর্বতের ঢাল বরাবর নীচে নেমে উপত্যকার মধ্যভাগে সঞ্জিত হয়। একে বলে পার্বত্য বায়ু। ঢাল বরাবর নিম্নগামী এই পার্বত্য বায়ুকে ক্যাটাবেটিক বায়ু (Katabatic Wind, গ্রিক শব্দ Kata = down বা নীচের দিকে)-ও বলা হয়।

বৈশিষ্ট্য: [i] গতিবেগ: সাধারণত রাতের বেলা এই বায়ু প্রবাহিত হলেও ভােরবেলা এর গতিবেগ সবচেয়ে বেশি হয়। [ii] বৈপরীত্য উত্তাপ: এই নিম্নগামী শীতল বায়ুর প্রভাবে উপত্যকার উপরিভাগের তুলনায় নিম্ন অংশে শীতের তীব্রতা বাড়ে, ফলে সেখানে বৈপরীত্য উত্তাপ সৃষ্টি হয়।

উপত্যকা বায়ু : দিনের বেলা সূর্যতাপে উত্তপ্ত উপত্যকার দু-দিকের ঢালের ওপরের বায়ু যে পরিমাণ উত্তপ্ত হয়, উপত্যকার মধ্যভাগের বায়ু ততটা উত্তপ্ত হয় না। এই বায়ু শীতল থাকে এবং তার ফলে উচ্চচাপের সৃষ্টি করে ও ভারী হয়ে নীচের দিকে নামে। এই নিম্নগামী বায়ুর চাপে তখন উপত্যকার দুদিকের ঢালের বায়ু ওপরের দিকে প্রবাহিত হয়। এই ঊর্ধ্বটাল প্রবাহী বায়ুকে বলে উপত্যকা বায়ু। এর আর এক নাম অ্যানাবেটিক বায়ু (Anabatic Wind, গ্রিক শব্দ Ana = up বা ওপরের দিকে)।।

বৈশিষ্ট্য: [i] বিপরীতমুখী: উপত্যকা বায়ু হল পার্বত্য বায়ুর ঠিক বিপরীত। [ii] উচ্চ অংশে জনবসতি: ইউরােপের অনেক জায়গায় উপত্যকা বায়ুর প্রভাবে লােকবসতি ও কৃষিকাজ উপত্যকার নীচের। দিকে না হয়ে পর্বতের ওপরের ঢালে গড়ে ওঠে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!