বচন ও বচনাকার কাকে বলে? নিরপেক্ষ ও সাপেক্ষ বচনের আকারগুলিকে উদাহরণ-সহ উল্লেখ করাে। 

বচন ও বচনাকার কাকে বলে? নিরপেক্ষ ও সাপেক্ষ বচনের আকারগুলিকে উদাহরণ-সহ উল্লেখ করাে। Class 12 | Philosophy (বচন) 8 Marks

উত্তর:-

বচন

মনের ভাবকে যখন ভাষার মাধ্যমে ব্যক্ত করা হয়, তখন তাকে বলে বাক্য। এই বাক্যকে যখন তর্কবিজ্ঞানসম্মত আকারে উপস্থাপিত করা হয় তখন তাকেই বলা হয় বচন। যেমন—মানুষ মরণশীল—এটি হল একটি বাক্য কিন্তু এর তর্কবিজ্ঞানসম্মত রূপ হিসেবে যে বচনের কথা বলা হয়, তা হল সকল মানুষ হয় মরণশীল। এই বচনই হল তর্কবিজ্ঞানের মূলভিত্তি। কারণ, তর্কবিজ্ঞানের মূল আলােচ্য বিষয় হল যুক্তি। আর এই যুক্তি গঠিত হয় বচন দিয়ে। 

বচনাকার 

তর্কবিদ্যায় বচনের ওপর সবিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হলেও, আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় বচনের আকারের ওপর। বচনের আকার (proposition form) হল বচনের একটি নির্দিষ্ট আকারের কাঠামাে—যার দ্বারা বচনটিকে একটি নির্দিষ্ট আকারে প্রকাশ করা হয়। বচনের এই আকারের একটি নির্দিষ্টতা ও সার্বজনীনতা আছে। সে কারণেই বচনের আকারের সত্যমূল্যের ক্ষেত্রে আমাদের একপ্রকার নিশ্চয়তা থেকে যায়। বচনগুলির বক্তব্য-বিষয়ের পরিবর্তন হলেও তার আকারের কোনাে পরিবর্তন হয় না। যেমন—সকল মানুষ হয় মরণশীল—এই বচনটির উদ্দেশ্য ও বিধেয় পরিবর্তিত হয়ে অন্য একটি বচনে পরিণত হতে পারে। অর্থাৎ, সকল মানুষ হয় মরণশীল না বলে, আমরা এটাও বলতে পারি যে, সকল কবি হয় দার্শনিক। কিন্তু এদের আকারটি হল সকল s হয় P—এর কোনাে পরিবর্তন নেই।

নিরপেক্ষ বচনের আকার

তর্কবিদ্যায় বচন হল মূলত দুপ্রকারের। [i] নিরপেক্ষ বচন এবং [2] সাপেক্ষ বচন। সুতরাং নিরপেক্ষ ও সাপেক্ষ—এই দু-প্রকার বচনেরই আকার পাওয়া যায়। নিরপেক্ষ বচন হিসেবে আমরা মােট চারপ্রকার বচনের উল্লেখ করতে পারি। এই চারপ্রকার বচন হল যথাক্রমে—[i] সামান্য সদর্থক বা সার্বিক না-বাচক বচন—যাকে সাংকেতিকভাবে বলা হয় A বচন। [ii] সামান্য নঞর্থক বা সার্বিক না-বাচক বচন—যাকে সাংকেতিকভাবে বলা হয় E বচন। [iii] বিশেষ সদর্থক বা বিশেষ হ্যা-বাচক বচন—যাকে সাংকেতিকভাবে বচন রূপে উল্লেখ করা হয়। [iv] বিশেষ নঞর্থক বা বিশেষ না-বাচক বচন যাকে সাংকেতিকভাবে বলা হয় O বচন। এখন এই চারটি নিরপেক্ষ বচন বা তাদের আকারকে পাশাপাশি উল্লেখ করা হল— 

[1] সামান্য সদর্থক বা সার্বিক হ্যাঁ-বাচক বচন ও তার আকার: সকল মানুষ হয় মরণশীল:

সকল মানুষ হয় মরণশীল। → A বচন
এর আকার হল: সকল S হয় P (A)

[2] সামান্য নঞর্থক বা সার্বিক না-বাচক বচন ও তার আকার: 

কোনাে মানুষ নয় পূর্ণ। → E বচন 
এর আকার হল: কোনাে S নয় P (E)

[3] বিশেষ সদর্থক বা বিশেষ হ্যা-বাচক বচন ও তার আকার: 

কোনাে কোনাে মানুষ হয় সৎ। → I বচন 
এর আকার হল: কোনাে কোনাে S হয় P (I) 

[4] বিশেষ নঞর্থক বা বিশেষ না-বাচক ৰচন ও তার আকার: 

কোনাে কোনাে মানুষ নয় শিক্ষিত। → O বচন। 
এর আকার হল: কোনাে কোনাে S নয় P (O) 

সাপেক্ষ বচনের আকার

নিরপেক্ষ বচনে কোনাে শর্ত না থাকলেও, সাপেক্ষ বচনে কিন্তু একটি শর্ত থাকে। এই সাপেক্ষ বচন আবার দু-প্রকারের—[i] প্রাকল্পিক বচন এবং [2] বৈকল্পিক বচন। ‘যদি…তবে’ দিয়ে গঠিত বচনকে বলা হয় প্রাকল্পিক বচন | আর “হয়…অথবা” দিয়ে গঠিত বচনকে বলা হয় বৈকল্পিক বচন। এখন এই প্রাকল্পিক ও বৈকল্পিক বচন দুটি ও তাদের আকারগুলিকে পাশাপাশি উল্লেখ করা হল— 

যদি মেঘ করে তবে বৃষ্টি পড়ে। → প্রাকল্পিক বচন 
এর আকার হল: যদি P তবে Q

হয় রাম কলকাতা যাবে অথবা দিল্লি যাবে। → বৈকল্পিক বচন
এর আকার হল: হয় P অথবা Q

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment