Class 11 Class 11 Education বৌদ্ধ শিক্ষাব্যাবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো

বৌদ্ধ শিক্ষাব্যাবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো

বৌদ্ধ শিক্ষাব্যাবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো

উত্তর :

বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য : 

প্রাচীন ভারতে হিন্দু জীবনদর্শনের ভিত্তিতে যেমন ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল, তেমনি বৌদ্ধ জীবনদর্শনের ভিত্তিতে বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল। বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থা সর্বজনীন হওয়ায় শুধু ভারতে নয়, ভারতের বাইরের বহু দেশের মানুষের কাছে তা গ্রহণযােগ্য হয়ে উঠেছিল। নীচে বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি আলােচনা করা হল —

[1] শিক্ষার লক্ষ্য : বৌদ্ধ শিক্ষার লক্ষ্য ছিল জাগতিক সবধরনের বন্ধনের অবসান ঘটিয়ে পরিনির্বাণ লাভ করা। এই শিক্ষার মূল আদর্শ হল জীবন ও জগৎ থেকে মুক্তিলাভ করা। ভিক্ষুত্ব, নৈতিকতা, বন্ধনহীন বিহার জীবনের শৃঙ্খলা ও সেবাধর্মকেই প্রকৃত শিক্ষা বলে মনে করা হয়। 

[2] শিক্ষা শুরু অনুষ্ঠান : বৌদ্ধ শিক্ষা শুরু হত ‘প্রব্রজ্যা’ নামক এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। বৌদ্ধধর্মে জাতবিচার ছিল না। তাই যে-কোনাে বর্ণের মানুষই ‘প্রব্রজ্যা’ গ্রহণ করতে পারত। তবে আট বছরের চেয়ে কম বয়সে এবং পিতা-মাতার অনুমতি ছাড়া ভিক্ষু বিহারে প্রবেশ বা প্রব্রজ্যা গ্রহণ নিষিদ্ধ ছিল। বৌদ্ধ শিক্ষার্থী উপাধ্যায়ের কাছে এসে বিনয়ের সঙ্গে তাকে আধ্যাত্মিক জীবনের পথ দেখানাের জন্য অনুরােধ জানাত এবং ত্রিশরণ মন্ত্র আবৃত্তি করত। এরপর উপাধ্যায় তাকে বিহারে প্রবেশের অনুমতি দিতেন। 

[3] শিক্ষার পাঠক্রম : বৌদ্ধ বিহারে ভিক্ষুদের অবশ্যপাঠ্য ছিল সূত্র, ধর্ম ও বিনয়। এ ছাড়া ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাক্রমের কিছু কিছু বিষয়ও বৌদ্ধ পাঠক্রমের সঙ্গে সংযােজিত হত। যেমন—বেদ, ইতিহাস, পুরাণ, ছন্দ, ধ্বনি, কাব্য, ব্যাকরণ, জ্যোতির্বিদ্যা ইত্যাদিও বৌদ্ধ পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এই শিক্ষাব্যবস্থায় গৃহীদের জন্য শিক্ষা এবং গণশিক্ষারও ব্যবস্থা ছিল। 

[4] শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক : বৌদ্ধ বিহারগুলিতে দু-ধরনের শিক্ষক শিক্ষাদান করতেন। উপাধ্যায়রা ধর্মতত্ত্ব বিষয় আলােচনা করতেন এবং আচার্য বা কর্মাচার্যরা নৈতিক জীবনের বিষয়ে পাঠদান করতেন। শিষ্যরা গুরুসেবায় নিজেদের নিয়ােজিত করত। গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক ছিল মধুর। উভয়ই পরস্পরের প্রতি কর্তব্য পালন করত। 

[5] শিক্ষাদান পদ্ধতি : বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থায় প্রথম পর্যায়ে শিক্ষাপদ্ধতি ছিল মূলত আবৃত্তিমূলক। তা ছাড়া গল্পের মাধ্যমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থাও ছিল। পরবর্তী পর্যায়ে আলােচনা, ব্যাখ্যা, সমালােচনা, বিতর্কসভা ইত্যাদিরও ব্যবস্থা করা হত। 

[6] শিক্ষার সর্বজনীনতা : বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল শিক্ষার সর্বজনীনতা। জাতিধর্মবর্ণনির্বিশেষে সব ধরনের মানুষই উপযুক্ত মেধা থাকলে বৌদ্ধ শিক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারত। তবে রােগাক্রান্ত ও অপরাধী ব্যক্তিদের বৌদ্ধ বিহারে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হত না। 

[7] নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলা : বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থায় বিহারবাসী ভিক্ষুদের সংঘ বা বিহারের নিয়মকানুন কঠোরভাবে মেনে চলতে হত। প্রতিটি ভিক্ষুকে দশটি শীল এবং অষ্টাঙ্গিক মার্গ অনুসরণ করতে হত। কোনাে ভিক্ষু অপরাধমূলক কাজ করলে দশজন ভিক্ষু মিলে অপরাধীর দণ্ডবিধান করতেন। অপরাধের প্রকৃতি অনুযায়ী প্রায়শ্চিত্ত করতে হত। 

[8] মূল্যায়ন ও উপাধিদান : বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থায় ভিক্ষু জীবনে বারাে বছরব্যাপী আবাসিক শিক্ষাগ্রহণের পর। উপসম্পদা নামক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার সমাপ্তি ঘােষণা করা হত। ভিক্ষুকে সভাস্থলে নানানভাবে পরীক্ষা করার পর তার যােগ্যতা সম্পর্কে সন্তুষ্ট হলে সভার অভিমত নিয়েই তাকে স্নাতক হিসেবে ঘােষণা করা হত। উপসম্পদা হিসেবে দশ বছর কাটানাের পর উপযুক্ত বলে বিবেচিত হলে তাকে উপাধ্যায় স্তরে উন্নীত করা হত। 

[9] বিহার বা সংঘভিত্তিক শিক্ষা : বৌদ্ধ বিহার বা সংঘকে কেন্দ্র করেই বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থা প্রসার লাভ করেছিল। প্রকৃতপক্ষে বিহার বা সংঘই ছিল বৌদ্ধ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান। এখানে শিক্ষার্থীরা আবাসিক জীবনযাপন করত। 

[10] বৃত্তি ও নারী শিক্ষা : বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থায় নিজেদের প্রয়ােজন মেটানাের তাগিদে সুতাে-কাটা, কাপড়-বােনা, দর্জির কাজ প্রভৃতি কতকগুলি বৃত্তিকে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছিল। প্রথম দিকে নারীশিক্ষার অধিকার না-থাকলেও মাতা গৌতমী ও শিষ্য আনন্দের আহ্বানে বুদ্ধদেব নারীদেরও নিয়মনিষ্ঠা মেনে সংঘে প্রবেশের অনুমতি দেন। ফলে নারীশিক্ষার প্রসার ঘটতে শুরু করে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!