বইপড়া – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

বইপড়া

ভূমিকা : মানুষ সামাজিক জীব। মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার অনুভূতি নিজের বুকে নিয়ে পাঠকের জন্য চির অপেক্ষমান হয়ে আছে বই। তাই এই মানবজীবনে সবচেয়ে বড়াে সম্পদ বই। বই পড়েই মানুষ অজানাকে জানতে পারে, অচেনাকে চিনতে পারে। বই অতীত ও বর্তমানের বহুমুখী জ্ঞানসম্পদের ধারক ও বাহক। 

প্রাচীন যুগ ও গ্রন্থপাঠ : বই পড়া সর্বকালে সর্বদেশের মানুষের শখ। বিভিন্ন রুচির মানুষ তাদের রুচিমাফিক বইয়ের পাতায় চোখ রেখে শখ চরিতার্থ করে। বই বা সাহিত্যসমাজ, মানবমনের দর্পণ-বিশেষ। মানুষের মনের প্রতিচ্ছবি হল সাহিত্য। তাই অনাদিকাল থেকেই গ্রন্থপাঠে মানুষ অনাবিল শান্তি লাভ করে আসছে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন,

“বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি।
বিশাল বিশ্বের আয়ােজন 
মাের মন জুড়ে থাকে অতিক্ষুদ্র তারই এক কোণ।” 

মানুষ ও সমাজকে সম্পূর্ণরূপে জানবার জন্যই বই পড়া দরকার। বই পড়া ছাড়া সাহিত্যপাঠ ও সাহিত্যচর্চার উপায়ান্তর নেই।

পাঠাগারের সাহিত্যভাণ্ডার : দেহের খাদ্য ভাত, রুটি; মনের খাদ্যের জোগান দেয় বই। মনের সুস্থতার ওপর অনেকাংশে দেহের সুস্থতা নির্ভরশীল। মনকে সুস্থ রাখার জন্য ভালাে বইয়ের সঙ্গ প্রয়ােজন। ভালাে বই পাঠককে সচেতন মানুষ রূপে গড়ে তােলে। ভালাে বই মানে ভালাে বন্ধু এবং যােগ্য শিক্ষক। মানুষের জীবনের চলার পথে যেমন ভালাে বন্ধুর প্রয়ােজন, তেমনি প্রয়ােজন ভালাে বই। গ্রন্থের দর্পণে নিজেকে পর্যালােচনা করে মানুষ তার চলার পথ ঠিক করতে পারে। বইকে যে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে, তার শত্রু অনেক কম। বই জ্ঞানের প্রতীক, বই আনন্দের প্রতীক। বইয়ের মাধ্যমে বিশ্বমানবের সঙ্গে যােগ ঘটে। বিখ্যাত ঔপন্যাসিক তলস্তয় বলেছিলেন— Three things are essential for life & these are books, books & books.’

আনন্দ এবং মানসিক সুস্থতা : বই মানুষকে চেতনাসম্পন্ন নাগরিকে পরিণত করে। বই আসলে মানুষের চৈতন্য ও মনীষার সৃষ্টি। লেখকের উপলদ্ধিজাত অভিজ্ঞতা বইতে লিপিবদ্ধ হয়। সুতরাং তার সঙ্গে পাঠকের পরিচয় ঘটলে তা মানুষকে সচেতন করে তােলে। এইভাবে মানুষ সচেতন নাগরিক হয়ে ওঠে। জীবনকে বুঝতে হলে, অভ্যাসের সংস্কারের বেড়া ভাঙতে হলে বইয়ের সঙ্গ অবশ্য প্রয়ােজন। প্রমথ চৌধুরী বলেছেন, “বৈঠকখানার দেওয়ালে হাজার টাকার একখানি নােট না ঝুলিয়ে, হাজার টাকা দামের একখানা ছবি ঝােলানােতে যে আর্থিক সুরুচির পরিচয় দেয়, তেমনি নানা আকারের নানা বর্ণের রাশি রাশি বই সাজিয়ে রাখাতে প্রমাণ হয় যে গৃহকর্তা একাধারে ধনী ও গুণী।” 

উপযােগিতা : বই হল আয়নার মতাে, যাতে আমাদের নিজেদের মনের প্রতিবিম্ব ধরা পড়ে। বইবিহীন জীবনকে আত্মবিহীন দেহের সঙ্গে তুলনা করা চলে। বই আলাের ও সত্যের পথ দেখায়। বলে দেয় নিজেকে বিশুদ্ধ করে গড়ে তােলার জন্য, বলে দেয় জীবনের যত দুঃখ, কষ্ট, হতাশা-বেদনা, ব্যর্থতা সবই তাদের জন্য যারা জ্ঞানহীন।

উপসংহার : বাংলায় একটি প্রবাদ আছে ধনবানে কেনে বই, গুণবানে পড়ে। এই প্রবাদটি আংশিক সত্য। যে প্রকৃত গুণবান, সে অনেক সময় নিজেকে নিঃস্ব করে বই কেনে। বই কেনা যেমন নেশা, তেমন বই পড়াও নেশা। বর্তমানে ‘বই হােক নিত্যসঙ্গী’ এই বাণী সকলের হওয়া উচিত।

আরো পড়ুন

তোমার প্রিয় ঋতু  – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

লেখাপড়ার অবসরে খেলা আর গল্পের বই – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

গ্রন্থাগার – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

দূরদর্শনের সুফল ও কুফল – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!