বৃত্তিমুখী এবং কারিগরি শিক্ষার ধারণা | এই শিক্ষার পাঠক্রম ও কোঠারি কমিশনের সুপারিশগুলি উল্লেখ করাে।

বৃত্তিমুখী এবং কারিগরি শিক্ষার ধারণা ব্যক্ত করাে । এই প্রসঙ্গে ওই শিক্ষার পাঠক্রম ও কোঠারি কমিশনের সুপারিশগুলি উল্লেখ করাে। Class 12 | Education (কোঠারি কমিশন) | 8 Marks

উত্তর:-

বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষার ধারণা 

স্বাধীনতার আগে ভারতে বৃত্তি ও কারিগরি শিক্ষার ওপর তেমন গুরুত্ব আরােপ করা হয়নি। স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশের আর্থিক উন্নয়নের জন্য বৃত্তি ও কারিগরি শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরােপ করার প্রয়ােজনীয়তা অনুভূত হয়।

যে শিক্ষা কোনাে শিক্ষার্থীকে বিশেষ বৃত্তি সম্পর্কে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করে, সেই শিক্ষাকে বৃত্তিমুখী শিক্ষা বলে। উদাহরণস্বরূপ— কম্পিউটারের সাহায্যে বিভিন্ন কাজ করার জন্য বিশেষ শিক্ষাব্যবস্থা, যেমন-DOS, WINDOWS, BASIC, LOGO ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করা। যে শিক্ষার দ্বারা কোনাে শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নানান বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব প্রয়ােগ করে শিল্প, বাণিজ্য, কৃষি বা কলকারখানার যন্ত্রপাতির ব্যবহার সম্পর্কে অবহিত করানাে হয়, সেই শিক্ষাকে বলে কারিগরি শিক্ষা। যেমন লেদ মেশিন চালানাে, ওয়েল্ডিং ইত্যাদি। 

বৃত্তি ও কারিগরি শিক্ষার পাঠক্রম ও কোঠারি কমিশনের সুপারিশ 

কোঠারি কমিশনের মতে, শিক্ষার সঙ্গে উৎপাদন ক্ষমতার সামঞ্জস্যবিধানের প্রধান উপায় হল মাধ্যমিক শিক্ষার বৃত্তিমুখীকরণ। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয় যে, 1986 সালের মধ্যে নিম্ন মাধ্যমিক স্তরে মােট ছাত্রসংখ্যার 20% ও দশম শ্রেণির মােট ছাত্র-সংখ্যার 50% এর পুরাে বা আংশিক সময়ের বৃত্তি বা কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করা প্রয়ােজন। 

বৃত্তি ও কারিগরি শিক্ষার পাঠক্রম 

এই শিক্ষাক্রমে রয়েছে ভাষা বিভাগ, বিজ্ঞান বিভাগ, সাধারণ নির্বাচনীয় বিষয় বিভাগ এবং সক্রিয়তা বিভাগ। ভাষা বিভাগ রয়েছে মাতৃভাষা এবং ইংরেজি। সক্রিয়তা বিভাগে শিক্ষার্থীরা একটি সক্রিয়তামুলক  কার্যসূচিতে অংশগ্রহণ করে। এই বিভাগে কর্মশিক্ষা, শারীরশিক্ষা, এনসিসি এবং সমাজসেবাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে এই বিভাগের পরিবর্তে পরিবেশবিজ্ঞানকে বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।

গণিত ও বিজ্ঞান শিক্ষার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়। শিক্ষার মাধ্যম হবে আঞ্চলিক ভাষা, তাই ওই আঞ্চলিক ভাষায় পাঠ্যপুস্তক তৈরির জন্য ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়ােজন।

প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য নিকটবর্তী কলকারখানায় শিক্ষানবিশির ব্যবস্থা করা প্রয়ােজন। 

কোঠারি কমিশনের সুপারিশ:

কোঠারি কমিশনের সুপারিশগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল— 

[1] 1986 সালের মধ্যে নিম্নমাধ্যমিক স্তরে মােট ছাত্রসংখ্যার 20% ও দশম শ্রেণির মােট ছাত্রসংখ্যার 50% এর পুরাে বা আংশিক সময়ের বৃত্তি বা কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। 

[2] অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও কারিগরি শিক্ষা সম্পর্কে সচেতন করা প্রয়ােজন এবং এই সম্পর্কে তাঁদের উৎসাহিত করে তােলা

প্রয়ােজন। 

[3] স্কুল স্তরে শিক্ষা হবে চুড়ান্ত ধরনের (terminal in character)।বিশেষ কৃতিত্ব যারা দেখাবে,তারাই শুধু পরবর্তী উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযােগ পাবে। 

[4] দক্ষ ও কুশলী কর্মীসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য ITI-গুলিতে শিক্ষার সুযােগ বাড়াতে হবে। তাই চতুর্থ পরিকল্পনার মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির

আসন সংখ্যা বাড়ানাের কথা বলা হয়েছে। 

[5] যারা স্কুল ছেড়ে কাজ করতে বাধ্য হয়, তাদের আংশিক বৃত্তি ও কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।। 

[6] জুনিয়ার টেকনিকাল স্কুলগুলির নাম টেকনিকাল হাইস্কুল দিতে হবে৷ 

[7] ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষা ব্যাবহারিক কাজের ভিত্তিতে হবে ও শিল্প  অভিজ্ঞতা শিক্ষার অঙ্গরুপে যুক্ত হবে। 

[8] পলিটেকনিকগুলি শিল্পাঞ্চলে প্রতিষ্ঠা করতে হবে ও গ্রামাঞ্চলের পলিটেকনিকগুলিতে কৃষিবিদ্যা ও কৃষির সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার ব্যবহার করতে হবে। | 

[9] পলিটেকনিকগুলিতে শিক্ষক কলকারখানা থেকে নিয়ােগ করতে হবে। এর জন্য প্রয়ােজনে শিক্ষা-সংক্রান্ত নিয়ম শিথিল করতে হবে।     

[10] শিক্ষাকে উৎপাদনমুখী করতে হলে ছুটির সময় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের ব্যবহারের জন্য বা বিক্রির জন্য সাধারণ যন্ত্রপাতি তৈরি করবেন৷

[11] পলিটেকনিকে গণিত ও বিজ্ঞান শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া প্রয়ােজন। 

[12] যেখানে যে শিল্প আছে সেই অঞ্চলে সেইরকম পলিটেকনিক শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। 

[13] মেয়েদের যেসব বিষয়ে উৎসাহ আছে, নিম্নমাধ্যমিক শিক্ষায় মেয়েদের সেইসব বিষয়ে ডিপ্লোমা ও সার্টিফিকেট কোর্স পড়ার সুযােগ দেওয়া হবে। 

[14] বাছাই করা পলিকেটনিকগুলিতে শিক্ষা দেওয়ার জন্য দক্ষ টেকনিশিয়ানদের নিযুক্ত করতে হবে। 

[15] ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে শিক্ষার মানােন্নয়নের প্রয়ােজন। ইঞ্জিনিয়ারিং-এর কয়েকটি নির্দিষ্ট শাখা যেমন Electronics ও Instrumentation-এ মেধাবী ছাত্রদের সুযােগ দেওয়া প্রয়ােজন। 

[16] ওয়ার্কশপের কাজ হবে উৎপাদনভিত্তিক। বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ব্যাবহারিক শিক্ষাদান কারখানার সহযােগিতায় করতে হবে। 

[17] শিক্ষার পাঠক্রম বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে নিয়মিত পরিবর্তন করা প্রয়ােজন। 

[18] এই শিক্ষার মাধ্যম হবে আঞ্চলিক ভাষা ও ওই ভাষাতে পাঠ্যপুস্তক তৈরির জন্য লেখকদের উৎসাহিত করতে হবে৷ 

[19] কলকারখানাতে ব্যাবহারিক শিক্ষার সুযােগ বাড়ানাে দরকার। যেসব কারখানায় শিক্ষার্থীরা শিক্ষাগ্রহণ করছে, তাদের কেন্দ্র থেকে সাহায্য দেওয়া হবে৷ শুধুমাত্র শিল্পকেন্দ্রিক কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করলে হবে না, আমাদের দেশে কৃষি বিষয়ক শিক্ষার দিকেও নজর দেওয়া প্রয়ােজন। এই বিষয়ে সুপারিশগুলি হল-

[i] আমাদের জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় কৃষিবিদ্যা শিক্ষার ব্যবস্থা করা দরকার। 

[ii] কৃষিবিদ্যা শিক্ষার ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রযুক্তিবিদ্যার ব্যবহার ও গবেষণা  এবং কৃষকদের মধ্যে প্রযুক্তিবিদ্যার বিস্তারের জন্য প্রয়ােজন উপযুক্ত কৃষি শিক্ষাব্যবস্থা। 

[iii] কৃষি বিষয়ক টেকনিশিয়ানদের জন্য কৃষি পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠা করতে হবে। 

[iv] প্রগতিশীল কৃষকদের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বা কলেজের সঙ্গে এবং কৃষি বিষয়ক ও পলিটেকনিক কলেজগুলির সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। 

[v] কৃষি বিষয়ক শিক্ষা ও গবেষণার উন্নতি প্রয়ােজন।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment