বৃত্তিমূলক শিক্ষার উপযােগিতাগুলি বর্ণনা করাে । ভারতবর্ষে কারিগরি শিক্ষার সমস্যাগুলি উল্লেখ করাে ।

বৃত্তিমূলক শিক্ষার উপযােগিতাগুলি বর্ণনা করাে। ভারতবর্ষে কারিগরি শিক্ষার সমস্যাগুলি উল্লেখ করাে ।
অথবা, বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করাে। ভারতবর্ষে কারিগরি শিক্ষার সমস্যাগুলি উল্লেখ করাে । Class 12 | Education (কোঠারি কমিশন) | 8 Marks

উত্তর:-

বৃত্তিমূলক শিক্ষার উপযোগিতা বা বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা 

ব্যক্তির জীবিকা অর্জনের সঙ্গে এই শিক্ষা বিশেষভাবে জড়িত। উপযুক্ত জীবিকা অর্জনের জন্য শিক্ষার্থীকে বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষায় অংশ নিতে হয়। হার্টস্রোন এই প্রকার শিক্ষার গুরুত্ব বােঝাতে গিয়ে বলেছেন— Vocational education is an education of most effective kind, for lack of which, those who merely go to school, suffer all their lives. অর্থাৎ বৃত্তিমূলক শিক্ষা হল এমনই এক ধরনের কার্যকরী শিক্ষা যা গ্রহণ না করলে শিক্ষার্থীকে সারাজীবন দুঃখ ভােগ করতে হয়। এই শিক্ষার গুরুত্ব বা উপযােগিতা গুলি নীচে আলােচনা করা হল— 

[1] শিক্ষার্থীকে স্বনির্ভর হতে সাহায্য করে: বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষা শিক্ষার্থীকে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে হাতে কলমে কাজ করার সুযােগ করে দেয়, যার ফলে সে ওই বিশেষ বিষয়ে অভিজ্ঞ হয়ে ওঠে। ফলে ভবিষ্যৎ জীবনে সে ওই বিষয়ে চাকরি করতে পারে বা স্বনিযুক্ত কাজে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। অর্থাৎ, এই ধরনের শিক্ষাগ্রহণের ফলে শিক্ষার্থী স্বনির্ভর হতে পারে।

[2] শিক্ষার্থীকে আর্থিক স্বচ্ছলতা দান করে: এই শিক্ষা উৎপাদনের পরিমাণ ও গুণগত মান বৃদ্ধি করে। অধিক উৎপাদন কেবলমাত্র ব্যক্তির স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি করে তাই নয়, সমাজ ও দেশের আর্থিক উন্নয়নেও সাহায্য করে। 

[3] শ্রমের প্রতি মর্যাদাদানে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেয়: বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষা শিক্ষার্থীদের শ্রমের প্রতি মর্যাদা উপলদ্ধি করতে সাহায্য করে। সমাজের বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে অভিযােজনে এবং নৈতিক চরিত্র গঠনেও এইপ্রকার শিক্ষার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। 

[4] শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীর ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে সাহায্য করে: পুঁথিগত, নিরস সাধারণ শিক্ষা শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক ক্লান্তি এনে দেয়। বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষায় ব্যাবহারিক এবং হাতে কলমে কাজ করার সুযােগ থাকায় তা সহজে একঘেয়ে হয়ে যায় না। 

[5] বৃত্তিশিক্ষা গ্রহণকালে অর্থ উপার্জনের সুযােগ করে দেয়: অনেকক্ষেত্রে বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা গ্রহণকালে কিছু অর্থ উপার্জন করা যায়। ওই অর্থ পড়ার খরচ চালাতে সাহায্য করে। সেই দিক থেকে এইপ্রকার শিক্ষার উপযােগিতা সাধারণ শিক্ষার তুলনায় অনেক বেশি। 

[6] ব্যতিক্রমী শিক্ষার্থীদের জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভে সাহায্য করে: ব্যতিক্রমী বা প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের জন্য বৃত্তিমূলক শিক্ষা বিশেষভাবে প্রয়ােজনীয়। এদের মধ্যে অনেকেই সাধারণধর্মী শিক্ষায় খুব একটা পারদর্শিতা অর্জন করতে পারে না। এর পরিবর্তে কোনাে বিশেষ বৃত্তিমূলক শিক্ষা নিলে হাতে-কলমে তারা কিছু উৎপাদন করতে পারে এবং অর্থ উপার্জনে সক্ষম হয়ে ওঠে।

[7] কর্মসংস্থানের সুযােগ সৃষ্টি করে: বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত কর্মপ্রার্থীদের চাকরির বাজার অপেক্ষাকৃত ভালাে। দক্ষ ব্যক্তির চাকরির কোনাে অভাব নেই। চাকরি না পেলেও ব্যক্তি নিজেই নিজের কর্মসংস্থান করতে পারে। 

[8] জাতির উন্নয়নে সাহায্য করে: শিল্পের জন্য প্রয়ােজন হয় দক্ষ কারিগরের। বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমেই দক্ষ কারিগর তৈরি করা সম্ভব। 

ভারতবর্ষে কারিগরি শিক্ষার সমস্যা 

আমাদের দেশে স্বাধীনতার পর দ্রুত শিল্প প্রসারের লক্ষ্যে কারিগরি শিক্ষার বিকাশ ঘটলেও সমস্যাও অনেক আছে। কারিগরি শিক্ষার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা নীচে আলােচনা করা হল— 

[1] পরিকল্পনার অভাব: ভারতে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অপরিকল্পিতভাবে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কী পরিমাণ দক্ষ শ্রমিক বা কারিগর প্রয়ােজন তার সঙ্গে সংগতি রেখে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা উচিত। কিন্তু এ বিষয়ে সঠিক পরিকল্পনার অভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে যে পরিমাণ ইনস্ট্রাকটর, ডিপ্লোমাধারী, এমনকি ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থী প্রতি বছর উৎপন্ন হচ্ছে তাদের সকলের চাকরির সুযােগ নেই। আবার কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে প্রয়ােজনের তুলনায় কম সংখ্যায় কারিগর তৈরি হওয়ায় সে ক্ষেত্রে চাহিদা থেকেই যাচ্ছে। 

[2] সংযােগের অভাব: কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই শিল্পমহলের সরাসরি সংযােগ না থাকায় কী ধরনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী শিল্পের জন্য প্রয়ােজন তা জানা সম্ভব হয় না। ফলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হলেও চাকরির জগতে অনেকেই ব্রাত্য থেকে যায়।

[3] সুষ্ঠু পরিচালনার অভাব: ভারতে এ যাবৎ ব্যুসংখ্যক কারিগরি শিক্ষার প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও পরিচালন ব্যবস্থা বা প্রশাসনিক ত্রুটির ফলে সেগুলি বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় ভুগছে। যেমন—যােগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ইত্যাদি। 

[4] উপযুক্ত শিক্ষকের অভাব: বর্তমানে উচ্চ বেতন এবং অন্যান্য সুযােগসুবিধার আশায় কারিগরি বিদ্যায় উচ্চশিক্ষিত ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষকতা বা প্রশিক্ষণ দানের কাজে যুক্ত না থেকে, বৃহৎ কলকারখানা বা শিল্প সংস্থায় যােগদান করছে। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি উপযুক্ত প্রশিক্ষক বা শিক্ষকের অভাবে ভুগছে। উপযুক্ত শিক্ষকের অভাবে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাদান প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। 

[5] অর্থাভাব: কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে তত্ত্বগত জ্ঞানের সঙ্গে প্রয়ােজন বিভিন্ন যন্ত্রপাতির ব্যাবহারিক জ্ঞান। এর জন্য দরকার উন্নতমানের ওয়ার্কশপ ও উপযুক্ত মানের ল্যাবরেটরি। কিন্তু আজকের দিনে আমাদের দেশের বহু কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপযুক্ত মানের যন্ত্রপাতি নেই। অর্থের অভাবে ওইসব যন্ত্রপাতি নিয়ে উপযুক্ত ওয়ার্কশপের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। ফলে শিক্ষার্থীরা তত্ত্বমূলক জ্ঞান পেলেও ব্যাবহারিক জ্ঞানের সুযােগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এটি এই শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। স্বাধীনতার পর আমাদের দেশে কারিগরি শিক্ষার দ্রুত অগ্রগতি ঘটলেও নানা কারণে আজও এই শিক্ষা সমস্যা-জর্জরিত৷ এই সব সমস্যার সমাধান করতে না পারলে ভবিষ্যতে এই শিক্ষা ব্যবস্থায় আমরা পিছিয়ে থাকব।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment