বুনিয়াদি শিক্ষার প্রবর্তক কে? এই শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে আলােচনা করাে।
উত্তর:
বুনিয়াদি শিক্ষার প্রবর্তক :
বুনিয়াদি শিক্ষার প্রবর্তক ছিলেন মােহনদাস করমচাঁদ গান্ধি। যিনি ছিলেন জাতির জনক।
তিনি ভারতবাসীর কাছে পরিচিত ছিলেন মহাত্মা গান্ধি বা গান্ধিজি রুপে।
বুনিয়াদি শিক্ষাব্যবস্থা :
গান্ধিজির শিক্ষাদর্শন ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় এক বিরাট পরিবর্তন এনেছে। ভারতের আর্থসামাজিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে বুনিয়াদি শিক্ষা পরিকল্পনাটি রচিত হয়েছিল। নীচে বুনিয়াদি শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলােচনা করা হল –
[1] গুরত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য : গান্ধিজি প্রবর্তিত নঈ-তালিম শিক্ষা বা বুনিয়াদি শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ দিক হল- (i) সাত থেকে চোদ্দো বছর বয়সি ছেলেমেয়েরা শিক্ষালাভ করে। (ii) এই শিক্ষাক্রম হবে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক। (iii) এই শিক্ষা শিল্পনির্ভর ও উৎপাদনমুখী হবে। (iv) মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া হবে।
[2] শিক্ষা স্তর : বুনিয়াদি বা নঈ-তালিম শিক্ষার চারটি স্তর হল- (i) 7 বছরের কমবয়সিরা শিক্ষালাভ করবে। (ii) 7 থেকে 14 বয়সিরা শিক্ষালাভ করবে। (iii) 14 বয়সের বেশিরা শিক্ষালাভ করবে। (iv) প্রাপ্তবয়স্করা এই স্তরে শিক্ষালাভ করবে।
[3] শিক্ষার পাঠক্রম : বুনিয়াদি শিক্ষার পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলি হল— (i) মূল হস্তশিল্প (Basic craft) — যা স্থানীয় সমাজজীবনের সঙ্গে সম্পর্ক আছে। যথা— কৃষিকাজ, তাঁত বােনা, সুতা কাটা, ধাতুর কাজ, কাঠের কাজ ইত্যাদি। (ii) গণিত যা দৈনন্দিন জীবনে প্রয়ােজন। (iii) সাধারণ বিজ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার জ্ঞান। (iv) ছবি আঁকা ও সংগীত। (v) গার্হস্থ্য বিজ্ঞান কেবল মেয়েদের জন্য।
[4] পাঠদান পদ্ধতি : বুনিয়াদি শিক্ষাব্যবস্থার পাঠদানের মূল কথা হল— একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে অন্যান্য বিষয়ের শিক্ষা। যেমন— এ শিক্ষাব্যবস্থায় হস্তশিল্পকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী ইতিহাস, ভূগােল, জ্যামিতির ধারণা সম্পর্কে শিক্ষা অর্জন করে।
বুনিয়াদি বা নঈ-তালিম শিক্ষার গুণাবলি বা সাফল্য :
বুনিয়াদি শিক্ষার গুণগুলি হল— (i) এই শিক্ষার কেন্দ্রে রয়েছে শিল্প, যা আত্মসক্রিয়তার মধ্য দিয়ে লাভ করবে। (ii) এটি পুরােপুরি সামাজিক মূল্যবােধের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। (i) এই শিক্ষার মধ্য দিয়ে শিশুর শ্রমের প্রতি মর্যাদাদানের ক্ষমতা গড়ে উঠবে। (iv) এই ব্যবস্থায় শিক্ষার্থী কোনাে একটি বৃত্তিকে কেন্দ্র করে সেই বিষয়ে শিক্ষালাভ করত। (v) বুনিয়াদি শিক্ষালাভের পর শিক্ষার্থীরা যে অভিজ্ঞতা লাভ করত তাকে কাজে লাগিয়ে তারা বিভিন্ন ধরনের কর্মজগতে অনেক সহজে প্রবেশ করতে পারবে।
বুনিয়াদি শিক্ষার ব্যর্থতার দিক বা ত্রুটি :
বুনিয়াদি শিক্ষার অসফলতার মূল কারণগুলি হল- (i) শিক্ষার যে-কোনাে স্তরে অর্থ উপার্জনের ভাবনা যুক্তিযুক্ত নয়। (ii) বুনিয়াদি শিক্ষায় এই শিল্পের ওপর গুরুত্ব দেওয়ায় সাধারণ শিক্ষা অনেকাংশে অবহেলিত হয়েছে। (iii) গ্রামের দরিদ্র মানুষের উপযােগী হলেও শহরে তা জনপ্রিয় হয়নি। (iv) সঠিক উপলব্ধি ছাড়া শিল্পের মাধ্যমে শিক্ষালাভ বিজ্ঞানসম্মত নয়। (v) যােগ্য, প্রশিক্ষিত, শিক্ষক ও পরিকাঠামাের অভাব এই শিক্ষা ব্যর্থতার জন্য অনেকাংশে দায়ী। (vi) শিল্পবিপ্লব, দ্রুত আধুনিক প্রযুক্তির উন্নতি — এই সবের সাপেক্ষে একটিমাত্র শিল্পকেন্দ্রিক শিক্ষা বুনিয়াদি শিক্ষায় ব্যর্থ হতে থাকে।
উপসংহার : তৎকালীন ভারতবর্ষ ছিল দরিদ্রক্লিষ্ট, দুঃখদুর্দশাপূর্ণ। বুনিয়াদি শিক্ষার সাফল্য ও ব্যর্থতা পর্যালােচনা করে বলা যায় বুনিয়াদি বা নঈ-তালিম শিক্ষা হল ভারতবাসীর ভবিষ্যৎ জীবন গঠনের ভিত্তিভূমি ও গণতান্ত্রিক আদর্শের মূল চাবিকাঠি।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।
This note is very nice and simple.
Thanks
Thank you so march dada
Vai
Simple note