প্রাচীন গ্রিসের পলিস গুলির বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো

উত্তরঃ-

উঃ গ্রিসে ধ্রুপদি যুগে (খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম থেকে চতুর্থ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে। এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলিকে গ্রিক ভাষায় পলিস (Polis) বলা হয়। গ্রিক শব্দ Polis-এর অর্থ হল স্বশাসিত রাষ্ট্র বা নগররাষ্ট্র। এগুলি ছিল এক-একটি স্বাধীন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। তবে পলিস বা নগররাষ্ট্রের সংজ্ঞা নির্ণয় একটি জটিল বিষয়। কারণ- প্লেটো, অ্যারিস্টটল-সহ অন্যান্য প্রাচীন গ্রিক চিন্তাবিদদের লেখায় পলিসের উল্লেখ থাকলেও তার সংজ্ঞা সম্পর্কে কিছু উল্লেখ করা হযনি। ‘ সাধারণভাবে পলিস বলতে বোঝায়, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভূখণ্ডে ঐক্যবদ্ধ ও দায়িত্ব সহকারে কর্তব্যপরায়ণ কর্মরত একটি জনগোষ্ঠী। এই জনগোষ্ঠী ছিল একই ধর্ম ও ঐতিহ্য সমন্বিত ।

পলিসের বৈশিষ্ট্যসমূহ :

এডওয়ার্ড বার্কার-এর মতে, পলিসগুলি সংখ্যায় অনেক হলেও সেগুলির মধ্যে কয়েকটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। যথা-

১)ক্ষুদ্রত্ব ও অখণ্ডতাঃ পলিসের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল তার ক্ষুদ্র পরিধি, যাকে ঐতিহাসিক ভিক্টর এরেনবার্গ ‘narrowness of space’ বা স্থানের সংকীর্ণতা বলে অভিহিত করেছেন। কিটো তাঁর দ্য গ্রিকস গ্রন্থে বলেছেন যে, পলিসের পরিধি ক্ষুদ্র হলেও এর তাৎপর্য ছিল ব্যাপক। পলিসগুলির মধ্যে কোনো কোনোটির আয়তনে তুলনামূলকভাবে বড়ো হলেও বেশিরভাগ ছিল ছোটো ছোটো।

২) জনসংখ্যার স্বল্পতা: জনসংখ্যার স্বল্পতা পলিসগুলির অপর একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য। আয়তনে ছোটো হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই পলিসগুলির জনসংখ্যা ছিল খুব কম। প্লেটো তাঁর রিপাবলিক নামক গ্রন্থে বলেছেন যে, আদর্শ রাষ্ট্রের নাগরিক সংখ্যা হবে ৫ হাজার। অ্যারিস্টটল-এর মতে, একটি নগরের পক্ষে ১০ জন মানুষ যেমন কম তেমনি ১০ হাজার মানুষ খুব বেশি। 

৩) শাসনকাঠামো: গ্রিসে পলিসের উদ্ভবের আগে রাজতন্ত্র,একনায়কতন্ত্র, গোষ্ঠীতন্ত্র, গণতন্ত্র ইত্যাদি শাসনকাঠামো ধাপে ধাপে পরিবর্তনের মাধ্যমে সুসংহত রূপ লাভ করে। স্পার্টায় ব্যতিক্রমধর্মী (অভিজাততান্ত্রিক) শাসনকাঠামো থাকলেও বেশিরভাগ পলিসেই প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক শাসন গড়ে ওঠে।

শাসনকাঠামোর অঙ্গ হিসেবে সমিতি, পরিষদ এবং ম্যাজিস্ট্রেটের অস্তিত্ব অধিকাংশ পলিসে লক্ষণীয়। এথেন্সে গণ আদালতরূপে হেলাইয়া গড়ে ওঠে।

৪) নাগরিক-অনাগরিক বৈষম্য : প্রতিটি পলিসে বসবাসকারী জনগণ নাগরিক ও অনাগরিক- এই দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। অনাগরিক জনগণ বলতে বিদেশি, মহিলা ও দাসদের বোঝাত। নাগরিকরা সমস্ত সুযোগসুবিধা ও অধিকার ভোগ করত। অনাগরিকরা এই সকল সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল।

৫) স্বয়ংক্রিয়তা ও স্বাধীনতা দান : গ্রিক পলিসগুলির অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল স্বয়ংক্রিয়তা ও স্বাধীনতা দান। শুধুমাত্র সরকারি ব্যবস্থা হিসেবে নয়, পলিস ছিল একটি সংঘের মতো। রাজনৈতিক ও সামাজিক দিক থেকেও পলিসগুলি ছিল স্বয়ংক্রিয়। এই ব্যবস্থা নাগরিকদের লোকালয়ের সর্বত্র অবাধ আলোচনা ও পরামর্শের সুযোগ ও স্বাধীনতা প্রদান করেছিল।

৬) ধর্মীয় ঐক্যঃ পলিসগুলির অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে ঐক্যবোধ পরিলক্ষিত হলেও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পলিসগুলি ছিল পরস্পরবিরোধী। তবে ধর্মীয় ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম লক্ষ করা যায়। ধর্মীয় উৎসব-অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে পলিসগুলির মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠত। জিউস, এথেনা, হেরা, অ্যাপোলো প্রমুখ দেবদেবী গ্রিকদের উপাস্য ছিল।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!