ছাত্রজীবনে শিষ্টাচারের উপযোগিতা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

ছাত্রজীবনে শিষ্টাচারের উপযোগিতা

শিষ্টাচার কাকে বলে : “শিষ্টাচার’ কথাটির অর্থ হল ‘সদাচার’ অর্থাৎ সকলের সঙ্গে ভালাে ব্যবহার করা। আমরা যাকে বলি ‘ভদ্রতা, ‘সৌজন্য’ বা মিষ্টি ব্যবহার, শিষ্টাচার এদের থেকে পৃথক কিছু নয়। কিন্তু একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে, এই আচরণটি ওদের থেকে একটুখানি বেশি। এই ব্যবহারটি হল আন্তরিক। এর ভিতর রয়েছে সংস্কৃতির ছোঁয়া। ধনরত্নের প্রাচুর্য, বিদ্যার বৈভব এবং বুদ্ধির বৈদগ্ধ্য দিয়ে শিষ্টাচারকে অর্জন করা যায় না। এটি হল মানুষের সহজাত। সহজাত হলেও বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেখবার সময় এটিকে আত্মস্থ করতে হয়।

লেখাপড়ার সঙ্গে শিষ্টাচারের অভ্যাস : প্রাচীন কালে আমাদের তপােবন শিক্ষার সময় শােনা গিয়েছিল, অধ্যয়নই হল ছাত্রদের তপস্যা’। সাধুসন্ত এবং মুনিঋষিরা যেমনভাবে তপস্যা করে ইষ্টদেবতাকে লাভ করতেন, ছাত্ররাও সেইভাবে তাদের বিদ্যাকে পাওয়ার জন্য একমনে লেখাপড়া করুক। এই উপদেশটি একমাত্র সত্য। এখন যেহেতু তপােবনের মাঝে ছাত্রদের বিদ্যাচর্চা হয় না, লেখাপড়া শিখতে হয় সমাজে বসে, তাই সামাজিকভাবে বাঁচতে গেলে আচার-ব্যবহারেও আমাদের কিছু পাঠ নিতে হবে। এই পাঠ্য তালিকায় প্রথম পাঠটি হল “শিষ্টাচার’। সকলের সঙ্গে মিলেমিশে ভালাে ব্যবহার করা।

ছাত্রসংখ্যার আধিক্য হেতু সকলের জন্য শিষ্টাচার: ইদানীং কালে শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপক প্রসারের ফলে আমাদের দেশে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা অনেক। আমাদের দেশে এরাই জাতির ভবিষ্যৎ। এই ছাত্ররা বিভিন্ন পরিবেশ থেকে এসেছে শিক্ষার আঙিনায়। এদের কেউ নগরবাসী, কেউ-বা প্রত্যন্ত গ্রামের অধিবাসী। এদের অনেকেরই জাতি ও ধর্ম আলাদা। এদের ভিতরে কেউ উগ্র, কেউ নম্র। কেউ মৃদুভাষী, কেউ কর্কশভাষী। কিন্তু শিক্ষার অঙ্গনে সকলে সমান। বৈচিত্র্য বজায় রেখে শিক্ষা তাদের এমন এক সংস্কৃতিতে দীক্ষা দেয়, যার ভিতর ‘শিষ্টাচার’ হল প্রধান। এই শিষ্টাচার রপ্ত হলে বিভিন্ন সমাজ-পরিবেশ থেকে আসা ছাত্ররা এক মিলনসূত্রে গাঁথা হয়ে যায়। পরস্পরের ভিতর একটি সখ্যের বন্ধন তৈরি হয়। 

বিদ্বেষ, বিভেদের পরিবর্তে শিষ্টাচার : ছাত্ররা অনেক সময় সহজাত শিষ্টাচার বর্জন করে অশিষ্ট, অভদ্র হয়ে ওঠে। একজন যখন আর একজনকে গালাগালি করে তখন তাদের ভাষা হয় অমার্জিত, কর্কশ এবং মেজাজ হয় প্রতিহিংসাপরায়ণ। এই অসংযত ব্যবহারের কারণ হয় নানারকম। এর পিছনে থাকে জাতিবিদ্বেষ, ধর্মবিদ্বেষ অথবা প্রাদেশিকতা। ইদানীং এই বিদ্বেষের আর একটি নতুন ইন্ধন হল ‘রাজনীতি’ | এই রাজনীতির ভেদাভেদ এতই ব্যাপক যে, তা সবরকম নীতিবােধকে টলিয়ে দেয়। হারিয়ে যায় তখন সবরকম ভদ্রতা, সদাচার। বিসর্জিত হয় সৌজন্যবােধ। আমাদের দেশের ছাত্রসমাজ এখন এই ভয়ংকর ব্যাধিতে আক্রান্ত। এ যেন কুসুম কাননে দুষ্ট পােকার আক্রমণ। এই দুষ্ট পােকা কেবল ফুলগুলি নষ্ট করে না, নষ্ট করে খেতের পর খেত, কাননের পর কানন, ধ্বংস করে গােটা দেশ। সত্যের পথিকরূপে অন্তরের স্বরূপকে প্রকাশ করে ছাত্রছাত্রীদের সুজন ও সদাচারী হয়ে ওঠা সমাজের পক্ষে একান্ত প্রয়ােজন।

উপসংহার: ‘শিষ্টাচার’ হল উন্নত ও সভ্য মানুষের চরিত্রধর্ম। ছাত্রদের কাছে উন্নত জীবনে পৌঁছােনাের সােপান হল এই শিষ্টাচার। ফুলের মধ্যে যেমন মধু, এটি হল তেমনি আমাদের ভিতর ভালােবাসার মাধুর্য। ছাত্রজীবনেই এর জন্ম, এখানেই এর উৎকর্ষ। মানুষে মানুষে এটি হল এক অটুট মেলবন্ধন। তাই ছাত্রজীবনে শিষ্টাচারের চর্চা করা খুবই জরুরি।

আরো পড়ুন

শিক্ষা বিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

সামাজিক জীবনে মেলার প্রয়োজনীয়তা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

রক্তদান জীবনদান – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

জীবনচরিত পাঠের প্রয়োজনীয়তা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

দেশ ভ্রমণের উপযোগিতা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment