চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত সম্পর্কে আলোচনা করো | এর ফলাফল কি ছিল

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত সম্পর্কে আলোচনা করো | এর ফলাফল কি ছিল Class 12 | History 8 Marks

উত্তর:

ভূমিকা : ভারতে সাম্রাজ্য বিস্তারের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে থাকে। লর্ড ক্লাইভ দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা চালু করলে সারা বাংলা জুড়ে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় ফলে 1772 সালে দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটানো হয় এবং ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা থেকে স্থায়ী আয় সুনিশ্চিত করতে লর্ড কর্নওয়ালিস 1793 সালে 22 শে মার্চ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেন।

শর্তাবলী : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের যে সমস্ত শর্তাবলী গুলি আছে সেগুলি হল,যথা —

১) চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত অনুসারে জমিদাররা স্থায়ীভাবে জমির মালিকানা ভোগ করার অধিকার পায়।

২) নির্দিষ্ট দিনের সূর্য অস্ত যাবার আগে জমিদারকে খাজনা প্রদান করতে হতো তা না হলে তার জমিদারি বাজেয়াপ্ত করা হতো। একে বলা হত সূর্যাস্ত আইন।

৩) কোন অবস্থাতেই রাজস্ব মুকুব বা পরিবর্তন করা হবে না।

৪) জমিদারদের দ্বারা আদায় করা রাজস্বের 9/10 ভাগ সরাসরি কোষাগারে জমা দিতে হতো।

   চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথম পরীক্ষামূলক ভাবে বাংলা,বিহার ও ওড়িশাতে চালু করা হয়। ধীরে ধীরে তা অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে দেওয়া হয় কোম্পানির একটি আয় সূত্র গড়ে উঠবে এই আশায়।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলাফল :  তবে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলাফল সম্পর্কে ঐতিহাসিকরা পরস্পর বিরোধী মত প্রকাশ করেছেন। মার্শম্যান এটিকে একটি সাহসী ও বিচক্ষণ পদক্ষেপ বলে বর্ণনা করেছেন,অন্যদিকে হোমস এই ব্যবস্থাকে একটি দুঃখজনক ভ্রান্তি বলে বর্ণনা করেছেন। তাই এই ফলাফলকে দুই দিক থেকে আলোচনা করা যেতে পারে যেমন—

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুফল : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের যে সমস্ত সুফল গুলি আছে সেগুলি হল যথা —

বাৎসরিক আয়ের হিসাব : স্থায়ী রাজস্বের পরিমাণ নির্দিষ্ট হওয়াই সরকারের বাৎসরিক আয় ও বাজেট সঠিক করা সম্ভব।

গ্রামীণ উন্নতি : ব্রিটিশদের এই প্রথায় জমিদাররা নিযুক্ত হয়ে গ্রামের উন্নতির ক্ষেত্রে অনেক বিদ্যালয়,চিকিৎসালয়,রাস্তাঘাট,নির্মাণ করে।

কৃষি সম্প্রসারণ : জমির ওপর জমিদারদের শর্ত দান করাই তারা কৃষি ব্যবস্থায় বেশি করে মূলধন বিনিয়োগ করে কৃষির উন্নতি ঘটায়।

ব্রিটিশের অনুগত : এই ব্যবস্থার ফলে জমিদার শ্রেণীর অস্তিত্ব ব্রিটিশের অনুগত ও নির্ভরশীল হয়ে ওঠে।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কুফল : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের যে সমস্ত কুফল গুলি আছে সেগুলি হল যথা —

১) এই ব্যবস্থায় জমি জরিপ না করে রাজস্ব ধার্য করা হতো ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজস্বের হার বেশি হয়ে যায়।

২) এই বন্দোবস্তের চুক্তি হয়েছিল কোম্পানির সাথে জমিদারদের এখানে কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে কৃষকদের ভাগ্য সম্পূর্ণ নির্ভর করত জমিদারদের ইচ্ছার ওপর।

৩) চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে জমিদারদের আয় বৃদ্ধি পেলেও কোম্পানির আয় সেভাবে বৃদ্ধি পায়নি ফলে কোম্পানি ভূমি রাজস্ব নিয়ে নতুন করে চিন্তা ভাবনা করতে থাকে।

৪) চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা ছিল সূর্যাস্ত আইন অর্থাৎ নির্দিষ্ট দিনে সূর্য অস্ত যাবার আগে জমিদারকে ইংরেজদের কাছে রাজস্ব প্রদান করতে হতো আর সময়মত রাজস্ব জমা না দিতে পারলে জমিদারি বাজেয়াপ্ত করা হতো। আইনের কবলে পড়ে বহু বনেদি জমিদার তাদের জমি হারায়।

৫) 1799 সালে রেগুলেশন আইন জারি করে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে জমিদারদের কৃষকদেরকে জমি থেকে উৎখাত করার অধিকার দেওয়া হয়। ফলে খুব সামান্য কারণেই জমিদাররা কৃষককে তাদের জমি থেকে উৎখাত করতে পারত।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুফল গুলি শুধুমাত্র ইংরেজদের জন্যই ছিল। অন্যদিকে,এর কুফল গুলি পরেছিল ভারতীয় জনসমাজের উপর। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে ভারতীয় কৃষকদের কোন দুঃখমোচন হয়নি বরং তাদের দুঃখ বেড়েছিল তাই সিরাজুল ইসলাম চিরস্থায়ী বন্দোবস্তকে ব্রিটিশ ভারতের প্রথম কালাকানুন বলে বর্ণনা করেছেন।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

6 thoughts on “চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত সম্পর্কে আলোচনা করো | এর ফলাফল কি ছিল”

Leave a Comment