প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা এই আর্টিকেলে আমরা Class 6 এর চিঠি কবিতার প্রশ্ন উত্তর নিয়ে এসেছি। তোমাদের ষষ্ঠ শ্রেনীর পাঠ্যবইতে জসীমউদ্দিন এর লেখা চিঠি কবিতা রয়েছে। কবিতার শেষে যে সব প্রশ্নপত্র গুলি রয়েছে তার সমাধান আমরা এখানে করে দিলাম। আশা করি সবার ভালো লাগবে।
চিঠি
জসীমউদ্দিন
কবি পরিচিতি
কবি জসিমউদ্দিনের জন্ম ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি, বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলায়। তাঁর শিক্ষা শুরু হয় গ্রামের পাঠশালায়। তিনি ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে আই. এ এবং বি. এ পাশ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম. এ পাশ করেন। তিনি কিছুদিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। তারপর পাকিস্তানের তথ্য ও প্রচার বিভাগে চাকরি করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি কিছুদিন অধ্যাপনা করেন। দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘কবর’ প্রকাশিত হয়। তাঁর প্রধান কাব্যগ্রন্থগুলি হল—নক্শি কাঁথার মাঠ, সোজনবাদিয়ার ঘাট, রাখালী, বালুচর, ধানক্ষেত, বেদের মেয়ে, মাটির কান্না, পদ্মাপার, রঙ্গিলা নায়ের মাঝি, মাগো জ্বালিয়ে রাখিস আলো প্রভৃতি। কবিতা ছাড়াও তিনি গল্প, উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনি লিখেছেন। কবি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাম্মানিক ডি-লিট উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির একুশে পদক দ্বারা সম্মানিত হয়েছেন। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের ১৪ মার্চ তাঁর মৃত্যু হয়।
হাতে কলমে
১.১ কবি জসীমউদ্দিনকে বাংলা কাব্য জগতে কোন্ অভিধায় অভিহিত করা হয়েছে?
উত্তর : কবি জসীমউদ্দিনকে বাংলা কাব্য জগতে ‘পল্লিকবি’ অভিধায় অভিহিত করা হয়েছে।
১.২ তাঁর লেখা দুটি কবিতার বইয়ের নাম লেখো।
উত্তর : কবি জসীমউদ্দিনের লেখা দুটি কবিতার বইয়ের নাম—’রাখালী’ এবং ‘নক্সী কাঁথার মাঠ’।
২. নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও :
২.১ কবি কার কার থেকে চিঠি পেয়েছেন ?
উত্তর : কবি লালমোরগ, চখাচখি, বাবুই পাখি, কোড়াকুড়ী এবং সবশেষে খোকা ভাইয়ের চিঠি পেয়েছেন।
২.২ লাল মোরগের পাঠানো চিঠিটি কেমন ?
উত্তর : লাল মোরগের চিঠিটি ভোর জাগানোর সুর আর উষার রঙিন হাসি ভরা।
২.৩ চখাচখি কেমন চিঠি পাঠিয়েছে?
উত্তর : বালুচরের ঝিকিমিকি, ঢেউয়ে ঢেউয়ে বর্ষা বালুচরে বার্তা লিখে রাখার খবর জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে।
২.8 গাশালিক তার চিঠিতে কী বলেছে?
উত্তর : গাঙশালিক তার চিঠিতে কবিকে ‘গাঙের পাড়ের মোড়ল’ হবার কথা লিখেছে।
২.৫ বাবুই পাখির বাসার থেকে আসা চিঠিটি কেমন?
উত্তর : ধানের পাতায় তালের পাতায় বুনট-করা নক্শা আঁকা চিঠি পাঠিয়েছে বাবুই পাখি।
২.৬ কোড়াকুড়ীর পাঠানো চিঠিটির বর্ণনা দাও।
উত্তর : বর্ষাকালের ফসলের ক্ষেত, জলধারায় সবুজ পাতার নাচানাচি, গুরু গুরু মেঘের ডাক যা কান্নার মতো শোনাচ্ছে, উদাস বাতাসের কথা কোড়াকুড়ির পাঠানো চিঠিতে আছে।
২.৭ কার চিঠি পাওয়ায় কবির মনে হয়েছে নিখিল বিশ্ব তাঁকে চিঠি পাঠিয়েছে?
উত্তর : ছোটো ভাই-এর পাঠানো চিঠিকে কবির মনে হয়েছে নিখিলবিশ্ব তাঁকে চিঠি পাঠিয়েছে।
২.৮ এই কবিতায় কোন্ ঋতুর প্রসঙ্গ রয়েছে?
উত্তর : এই কবিতায় প্রধানত বর্ষা ঋতুর প্রসঙ্গ আছে। আবার ছোটো ভাইয়ের চিঠির প্রসঙ্গে শীতঋতুর কথা এসেছে।
২.৯ কবিতায় অন্য ঋতুর পটভূমি সত্ত্বেও খোকাভাই-এর চিঠির লেখনখানি শীতের ভোরের রোদের মতো মিঠে মনে হওয়ার তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।
উত্তর : কবিতায় বর্ষা ঋতুর পটভূমি থাকা সত্ত্বেও কবির কাছে তাঁর খোকাভাইয়ের চিঠিটি শীতের ভোরের রোদের মতো’ মনে হয়েছে। কেননা শীতের ভোরের রোদ যেমন নরম কিন্তু আরামদায়ক, তেমনি কবির ছোটোভাইয়ের চিঠিখানিও তাঁর কাছে ভালোবাসার উয় পরশ নিয়ে এসেছে।
২.১০ ‘খুশির নূপুর ঝুমুর ঝামুর বাজছে আমার নিরালাতে’—পঙক্তিটির অর্থ বুঝিয়ে দাও।
উত্তর : কবি নানা জনের কাছ থেকে নানা চিঠি পেয়েছেন। সেসব চিঠি প্রকৃতির নানা খবরে সমৃদ্ধ। কবির মনে আনন্দের নূপুর বাজছে। যে নূপুরের আওয়াজে কবির মনে খুশির বান ডেকেছে।
৩. কবিতা থেকে এমন তিনটি শব্দ খুঁজে বের করো যা কোনও ধ্বনির অনুকরণে তৈরি। একটি উদাহরণ দেওয়া হলো। যেমন—কল কল ।
উত্তর : ১. গুরুগুরু, ২. ঝুমুর-ঝামুর, ৩. কিচিরমিচির।
8. শব্দ ঝুড়ি থেকে ঠিক শব্দ নিয়ে শূন্যস্থানে বসাও।
উত্তর : রঙ্গিন রঙিন। গঙ্গা—গাঙ। স্রোতে – সোঁতে। ক্রন্দন—কাঁদন ।
৫. ‘ঢেউ-এ ঢেউ-এ’ এখানে ‘ঢেউ-এ’শব্দটি পরপর দু’বার ব্যবহার হওয়ায় অর্থ দাঁড়িয়েছে অজস্র ঢেউ-এ’। অর্থাৎ একই শব্দ পরপর দু’বার ব্যবহারে বহু বচনের ভাব তৈরি হয়েছে। এই কবিতাটি থেকে আরও তিনটি অংশ উদ্ধৃত করো যেখানে এমন ঘটেছে।
উত্তর : ১. মেঘের কাঁদন গুরুগুরু, ২. পাখিরা সব ঝাঁকে ঝাঁকে, ৩. খুশির নূপুর ঝুমুর-ঝুমুর।
৬. ‘গাঙের পাড়ের মোড়ল’—শব্দবন্ধটিতে পরপর দু’বার ‘-এর’ সম্বন্ধ বিভক্তিটি এসেছে। কবিতা থেকে এমন আরও শব্দবন্ধ খুঁজে বের করো যেখানে পরপর দু’বার ‘র’ বা ‘এর’ বিভক্তি প্রয়োগে সম্বন্ধ পদ তৈরি হয়েছে
উত্তর : ১. পাখির বাসার থেকে, ২. কোড়াকুড়ীর বর্ষাকালের ফসল-ক্ষেতে, ৩. শীতের ভোরের রোদের মতো।
৭. ‘কর্তা-কর্ম-ক্রিয়া’—পদক্রম অনুসারে নীচের বাক্যগুলিকে আবার লেখো :
৭.১ লিখে গেছে গাঙশালিকে গাঙের পাড়ের মোড়ল হ’তে।
উত্তর : গাঙশালিকে গাঙের পাড়ের মোড়ল হ’তে লিখে গেছে।
৭.২ ইহার সাথে পেলুম আজি খোকা ভাই-এর একটি চিঠি।
উত্তর : (আমি) একটি চিঠি পেলুম।
৭.৩ সবুজ পাতার আসরগুলি নাচছে জল-ধারায় মেতে।
উত্তর : সবুজ পাতার আসরগুলি জল-ধারায় মেতে নাচছে।
৭.৪ উদাস বাতাস আছড়ে বলে কে যেন বা চাইছে কাকে।
উত্তর : উদাস বাতাস কে যেন বা চাইছে কাকে আছড়ে বলে।
৭.৫ শীতের ভোরের রোদের মতো লেখনখানি লাগছে মিঠি।
উত্তর : লেখনখানি মিঠি লাগছে।
৮. নীচের বাক্যগুলিকে ভেঙে দুটি বাক্যে পরিণত করো :
৮.১ চিঠি পেলুম লাল মোরগের ভোর-জাগানোর সুরভরা।
উত্তর : অ) লাল মোরগের চিঠি পেলুম। আ) মোরগের চিঠিখানি ভোর-জাগানোর সুরভরা।
৮.২ সবুজ পাতার আসরগুলি নাচছে জল-ধারায় মেতে।
উত্তর : অ) সবুজ পাতার আসরগুলি নাচছে। আ) আসরগুলি জল-ধারায় মেতে নাচছে।
৮.৩ শীতের ভোরের রোদের মতো লেখনখানি লাগছে মিঠি।
উত্তর : অ) লেখনখানি শীতের ভোরের রোদের মতো। আ) লেখনখানি লাগছে মিঠি।
৮.৪ আকাশ জুড়ে মেঘের কাঁদন গুরু গুরু দেয়ার ডাকে।
উত্তর : অ) আকাশ জুড়ে মেঘের কাঁদন। আ) গুরুগুরু দেয়ার ডাকে মেঘের কাঁদন।
৮.৫ লিখে গেছে গাঙশালিকে গাঙের পাড়ের মোড়ল হ’তে।
উত্তর : অ) লিখে গেছে গাঙশালিকে। আ) লিখে গেছে গাঙের পাড়ের মোড়ল হ’তে।
৯. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :
৯.১ কবি প্রকৃতির কোন্ কোন্ প্রতিনিধির কাছ থেকে কেমন সমস্ত চিঠি পেয়েছিলেন, বিশদে লেখো।
উত্তর : ১. কবি লাল মোরগের ভোর জাগানোর সুর ভরা চিঠি পেলেন। তার চিঠি যেন ঊষার প্রথম আলোয় রঙিন ২. চখাচখির চিঠি পেলেন যেখানে বালুচরের ঝিকিমিকিতে ঢেউ-এ ঢেউ-এ বর্ষা কত কিছু লিখে গেছে। গাঙশালিকের চিঠিতে কবিকে গাঙের পাড়ের মোড়ল হবার কথা লিখেছে। ৩. বাবুই পাখির বাসা থেকে কবি যে চিঠি পেলেন তা ধানের পাতায় তালের পাতায় বুনট নক্শা কাটা। ৪. কোড়াকুড়ীর চিঠিতে বর্ষাকালের ফসলক্ষেতের সবুজ পাতার আসরগুলো জলধারায় মেতে নাচছে তা জানিয়েছে। আকাশ জুড়ে মেঘের গুরু গুরু ডাক শুনে কবির মনে হলো তাঁকে যেন আজ প্রকৃতি ডাকছে। প্রকৃতির প্রতিনিধিদের ডাকে কবি একেবারে দিশেহারা।
৯.২ খোকা ভাই-এর চিঠিটির প্রসঙ্গে কবি যে সমস্ত উপমা ও তুলনাবাচক শব্দ ব্যবহার করেছেন তাদের ব্যবহারের সার্থকতা বুঝিয়ে দাও।
উত্তর : কবি নিজের খোকা-ভাইয়ের চিঠি পেয়ে খুবই আনন্দিত হয়ে পড়েছেন। তার চিঠিটা যেন তাঁর কাছে শীতের ভোরের রোদের মতো নরম মিষ্টি লাগছে। তাঁর ভাইয়ের হাতে লেখা চিঠিটা যেন পাখিদের সমবেত কলধ্বনির ন্যায় বোধ হচ্ছে। কবি নানাবিধ উপমা দ্বারা তাঁর ভাইয়ের লেখা চিঠিখানিকে উপমিত করেছেন। তিনি ভাইয়ের চিঠিকে শীতের রোদ বলেন কারণ শীতের নরম উত্তাপ যেমন মানুষের প্রাণ জুড়োয় ঠিক তেমনি কবি ভাইয়ের চিঠিও কবির প্রাণে আরাম এনে দিয়েছে। বালক ভাইয়ের হাতের লেখা হরফখানি যেন পাখিদের সমবেত কলধ্বনির মতো বোধ হচ্ছে। এসবই কবি তাঁর ভাইয়ের চিঠির প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন।
৯.৩ তোমার প্রিয় বন্ধুকে তোমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের ঘটনাটি জানিয়ে একটি চিঠি লেখো।
উত্তর :
কাঁথি, ১৬/১২/২০১৫
প্রিয় সুবিনয়,
অনেক দিন তোর কোনো চিঠি পাইনি। তোকে চিঠি লিখব লিখব করেও লেখা হয়ে ওঠে নি। আজ এক বিশেষ আনন্দের খবর জানিয়ে তোকে চিঠি লিখছি। তুই তো জানিস, আমি চতুর্থ শ্রেণি থেকে প্রথম হওয়ার জন্য খুবই চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু এর আগে বিভিন্ন ক্লাসে দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় হয়ে এসেছি। কিন্তু ষষ্ঠ শ্রেণিতে আমি প্রথম হতে পারলাম। আজই আমাদের রেজাল্ট বেরোল। এই খুশির খবরটা তোকেই প্রথম জানালাম। এটা অবশ্যই আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের ঘটনা।
এবার আমি কয়েকটা পদ্ধতি অনুসরণ করেছিলাম। তার ফলেই প্রথম হতে পারলাম। সাক্ষাতে তোকে সেই পদ্ধতির কথা জানাব। তুই তা অনুসরণ করলে নিশ্চয়ই ফল পাবি। যাক্, এবার বল তোর রেজাল্ট কি এখনও বের হয় নি? রেজাল্ট বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে অবশ্যই জানাস। তুই ভালোবাসা নিস। জ্যেঠু জ্যেঠিমাকে আমার প্রণাম জানাস।
ইতি
তোর বন্ধু মৃণাল
আরো পড়ুন
বাঘ কবিতার প্রশ্ন উত্তর | Class 6 Bengali Bagh Question Answer
ভরদুপুরে কবিতা | নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী | প্রশ্ন ও উত্তর | ষষ্ঠ শ্রেণীর বাংলা
শঙ্কর সেনাপতি গল্পের প্রশ্ন উত্তর | শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়
খোলামেলা দিনগুলি গল্পের প্রশ্ন উত্তর | শান্তিসুধা ঘোষ
পাইন দাঁড়িয়ে আকাশে নয়ন তুলি কবিতার প্রশ্ন উত্তর | হাইনরিখ হাইনে
ঘাসফড়িং কবিতার প্রশ্ন উত্তর | অরুণ মিত্র
হাট কবিতার প্রশ্ন উত্তর | যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।