ছুটি গল্পে বিশ্বম্ভরবাবুর ভূমিকা আলোচনা করো । MARK 5 | Class 11 Bengali | ছুটি
উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্পে অপ্রধান চরিত্র হিসেবে বিশ্বম্ভরবাবুর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। গল্পের মুখ্য চরিত্র ফটিকের মামা তিনি। ফটিকের জীবনের বিভিন্ন ঘটনার সঙ্গে মামা বিশ্বম্ভরবাবুর ঘনিষ্ঠ যোগ আছে। ফটিকের জীবনের ভাবী পরিণতির জন্য এই চরিত্রটি বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে।
বিশ্বম্ভরবাবু অর্ধবয়সী, কাঁচা গোঁফ এবং পাকা চুল। নদীর ঘাটে নৌকা থেকে নেমে ফটিকের সঙ্গে তাঁর প্রথম আলাপ হয়। কিন্তু কেউ কাউকে চিনতে পারেনি। ফটিকদের বাড়িতে মা-ছেলেতে কলহ উপস্থিত হওয়ার সন্ধিক্ষণে বিশ্বম্ভরবাবু প্রবেশ করেন এবং জানা যায়, তিনি ফটিকের মায়ের দাদা অর্থাৎ ফটিকের মামা। বহুদিন কর্ম উপলক্ষ্যে তিনি পশ্চিমে ছিলেন। কলকাতায় ফিরে বোন ও ভাগ্নেদের দেখতে এসেছেন।
মামার উপস্থিতিতে ফটিকদের কয়েকদিন বেশ সমারোহে কেটেছিল। ছোটোবোনকে তিনি যথেষ্ট ভালোবাসতেন। তাই বোনের কাছ থেকে যখনই জানতে পারলেন যে, বড়ো ভাগ্নে ফটিক অবাধ্য, উচ্ছৃঙ্খল, দুরন্ত ও পাঠে অমনোযোগী, তিনি তখনই প্রস্তাব দিলেন ফটিককে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে তাঁর কাছে রেখে পড়াশোনা করাবেন। বিশ্বম্ভরবাবুর প্রস্তাবে ফটিক ও তার মা দুজনেই রাজি হয়ে যায়।
বিশ্বম্ভরবাবুর তিন সন্তান। দুর্মূল্যের বাজারে তিনি ফটিকের খাওয়া-পরা ও লেখাপড়ার দায়িত্ব নিজের একার আয়ের ওপর নির্ভর করে গ্রহণ করেছিলেন। ফটিককে তিনি অত্যন্ত স্নেহ করতেন। এখানে তাঁর মহৎ হৃদয় ও দয়ালু মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। কিন্তু তিনি নির্বিবাদী। ফটিকের আগমনে তাঁর স্ত্রী যে অসন্তুষ্ট ও ফটিকের সাথে নির্মম ব্যবহার করতেন তা জেনেও তিনি প্রতিবাদ করেননি।
শহর কলকাতা ফটিককে শান্তি দেয়নি। সে মায়ের কাছে ফিরে যেতে চাইলে বিশ্বম্ভরবাবু তাকে আশ্বস্ত করে বলেছিল, ‘স্কুলের ছুটি হোক।’ স্কুলের ছুটি হওয়ার আগেই ফটিক প্রবল জ্বরে আক্রান্ত হয়। চিকিৎসক ডাকেন বিশ্বম্ভরবাবু। ফটিকের মাকেও খবর দেন। ফটিক যখন চোখ লাল করে জিজ্ঞাসা করে ‘মামা আমার ছুটি হয়েছে!’ তখন বিশ্বম্ভরবাবু চোখ মুছে সস্নেহে ফটিকের শীর্ণ হাতটি নিজের হাতের ওপর তুলে নিয়েছিলেন। মানবিক হৃদয়ের নিদর্শন হিসেবে এখানে তাঁর সহানুভূতিশীল মনের পরিচয় পাওয়া যায়। স্তিমিত প্রদীপে রোগশয্যায় বসে ফটিকের মায়ের জন্য তিনি প্রতিটা মুহূর্ত অপেক্ষা করেছেন। মানবদরদী আদর্শ মানুষ হিসেবে গল্পে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
Read Also
‘ তেরো-চৌদ্দ বৎসরের ছেলের মতো পৃথিবীতে এমন বালাই আর নাই ।—মন্তব্যটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
“ তিনি ঈষৎ ক্ষুণ্ণ হইলেন । – কে, কার প্রতি ক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন ? তাঁর ক্ষুণ্ণ হওয়ার কারণ কী?
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।