ছুটি গল্পে ফটিকের মামীর চরিত্র বিশ্লেষণ করো

ছুটি গল্পে ফটিকের মামীর চরিত্র বিশ্লেষণ করো । MARK 5 | Class 11 Bengali | ছুটি

উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্পে অপ্রধান চরিত্র হিসেবে বিশ্বম্ভরবাবুর স্ত্রী অর্থাৎ ফটিকের মামীর চরিত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গল্পে তাঁকে আমরা বিশ্বম্ভরবাবুর বিপরীতধর্মী চরিত্র হিসেবে দেখতে পাই। তার চরিত্রের বিশেষ কিছু দিক আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

স্বার্থপরতা : বিশ্বম্ভরবাবুকে গল্পে যেমন আদর্শ দয়ালু মানুষ হিসেবে পাই তাঁর স্ত্রী তেমন নন। তাঁর মধ্যে ছিল চরম স্বার্থপরতা। তিনি নিজের সন্তান ছাড়া কিছুই বুঝতেন না। তেরো বছরের ফটিক মামীর স্নেহ পেলে নিজেকে ধন্য মনে করত। কিন্তু ‘মামীর স্নেহহীন চক্ষে সে যে একটা দূর্গ্রহের মতো প্রতিভাত হইতেছে,’ এ কথা ভেবে ফটিক দুঃখ ও কষ্ট পেয়েছে।

মাতৃত্বের অভাব : বিশ্বম্ভরবাবুর তিনটি সন্তান থাকা সত্ত্বেও তিনি ফটিকের লেখাপড়ার জন্য অনাবশ্যকভাবে তাঁর বাড়িতে নিয়ে গেলে মামী অসন্তুষ্ট হন। এমনকি বিশ্বম্ভরবাবুর প্রতিও রুষ্ট হন। ফটিককে তিনি নিজের সন্তানদের মতো মনে করতে পারেননি। ফটিকের মতো ‘অপরিচিত অশিক্ষিত পাড়াগেঁয়ে ছেলে বাড়িতে থাকলে যে বিপ্লবের সম্ভাবনা উপস্থিত হতে পারে সেই সংশয় ছিল মামীর মধ্যে। তাই ফটিকের প্রতি যে নির্মমতা, নিষ্ঠুরতা ও অবিচারমূলক আচরণ তিনি করেছেন তাতে তাঁর মাতৃভাবের অভাব প্রকট হয়। ফটিকের প্রতি সামান্যতম ভালোবাসা, স্নেহ, মমতা তাঁর ছিল না। 

বৈমাত্রেয়সুলভ আচরণ : ফটিকের কাছে মামী হলেন মাতৃসমান। কিন্তু ফটিকের স্বাভাবিক অনিবার্য ত্রুটি মামী সহ্য করতে পারতেন না। ফটিক মামীকে কিছু সাহায্য করার চেষ্টা করলে মামী তা উপেক্ষার সঙ্গে পরিহার করতেন। মামীর ধারণা হয়েছিল ফটিক তাদের বাড়িতে আসার পর তাঁদের অর্থনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হয়। একবার স্কুলের একটি বই হারিয়ে ফেলায় মামী বিরক্তির স্বরে বলেছিলেন, “বেশ করেছ, আমি তোমাকে মাসের মধ্যে পাঁচবার করে বই কিনে দিতে পারিনে।” মাতৃসমা মামীর থেকে সে মায়ের মতো আচরণ পায়নি । 

নির্দয়তা : ফটিকের প্রতি মামী ছিলেন নির্দয়। শ্রাবণের বৃষ্টিধারায় অসুস্থ ফটিককে পুলিশের লোক গাড়ি থেকে নামালে বিশ্বম্ভরবাবু প্রায় কোলে করে ফটিককে অন্তঃপুরে নিয়ে যান। কিন্তু মামীর তাতে কোনো দুঃখ বা সহানুভূতি ছিল না। বরং রেগে গিয়ে বলেন, ‘কেন বাপু, পরের ছেলেকে নিয়ে কেন এ কর্মভোগ। দাও ওকে বাড়ি পাঠিয়ে দাও।’ অসুস্থ ফটিককে নিয়ে তার মামার মধ্যে যে দুশ্চিন্তা তার সামান্যতম মামীর মধ্যে দেখা যায় না । এমন নির্দয় চরিত্রের মানুষ ছিলেন ফটিকের মামী।

Read Also

‘ উৎসাহে তাহার রাত্রে নিদ্রা হয় না ।—উদ্দিষ্টের উৎসাহের ‘পিছনে লেখক যে ট্র্যাজিক আভাস দিয়েছেন তা বর্ণনা করো ।

‘ তেরো-চৌদ্দ বৎসরের ছেলের মতো পৃথিবীতে এমন বালাই আর নাই ।—মন্তব্যটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

‘ উৎসাহে তাহার রাত্রে নিদ্রা হয় না ।—উদ্দিষ্টের উৎসাহের ‘পিছনে লেখক যে ট্র্যাজিক আভাস দিয়েছেন তা বর্ণনা করো ।

“ তিনি ঈষৎ ক্ষুণ্ণ হইলেন । – কে, কার প্রতি ক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন ? তাঁর ক্ষুণ্ণ হওয়ার কারণ কী?

‘বিধবা এ প্রস্তাবে সহজেই সম্মত হইলেন ।—বিধবার কাছে কে, কী প্রস্তাব করেছিলেন? তিনি তাতে সম্মত হয়েছিলেন কেন?

‘কিন্তু অন্যান্য পার্থিব গৌরবের ন্যায় ইহার আনুষঙ্গিক যে বিপদের সম্ভাবনাও আছে, তাহা তাহার কিম্বা আর-কাহারও মনে উদয় হয় নাই । — রচনার নামোল্লেখ-সহ উদ্ধৃতাংশের প্রসঙ্গ নির্দেশ করো। উক্তিটি ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দাও ।

এই অকাল-তত্ত্বজ্ঞানী, মানব সকলপ্রকার ক্রীড়ার অসারতা সম্বন্ধে নীরবে চিন্তা করিতে লাগিল । — বক্তা কোন্ প্রসঙ্গে এই উক্তি করেছেন? উক্তিটির অর্থ লেখো

পূর্বাপেক্ষা আর-একটা ভালো খেলা মাথায় উদয় হইয়াছে — পূর্বের খেলাটি কী ছিল? এখনকার খেলাটিই-বা কী এবং তার পরিণতি কী হয়েছিল ?

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!