চুয়াড় বিদ্রোহ সম্পর্কে আলােচনা করাে । অথবা, চুয়াড় বিদ্রোহের প্রেক্ষাপট ও গতিপথ বর্ণনা করাে। ৫ + ৩ | Class 10 | 8 Marks
উত্তর:
ভূমিকা : মেদিনীপুর, বীরভূম, বাঁকুড়া, ঘাটশিলায় চুয়াড় উপজাতির কৃষকেরা ১৭৬৮ থেকে ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় সাতবার যে বিদ্রোহ করেছিল, তা চুয়াড় বিদ্রোহ নামে পরিচিত। এগুলির মধ্যে ১৭৯৮-১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে দুর্জন সিংহের নেতৃত্বে পরিচালিত বিদ্রোহ ছিল দ্বিতীয় পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ।
বিদ্রোহের কারণ : চুয়াড় বিদ্রোহের কারণগুলি হল—
[১] জমি দখল : কৃষিকাজ ও পশুপালন ছিল চুয়াড়দের প্রধান। জীবিকা। বাংলায় কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠার পর কোম্পানির কর্তৃপক্ষ এই অঞ্চলের জমিদারদের জমি দখল করে তার ওপর অত্যন্ত চড়া হারে ভূমিরাজস্ব ধার্য করলে জমিদাররা এবং তাদের পাইক চুয়াড়রা এর বিরােধিতা করে।
[২] জীবিকা সমস্যা : সরকার কর্তৃক নিষ্কর জমি (পাইকান) দখল, চুয়াড় বিদ্রোহের অন্যতম কারণ। জমি-নির্ভর চুয়াড়দের অধিকাংশ জমি কোম্পানি দখল করে নিলে তারা জীবিকাহীন হয়ে পড়লে চুয়াড়রা বিদ্রোহের সূচনা করে।
চুয়াড় বিদ্রোহের ব্যাপ্তি : দ্বিতীয় পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ শুরু হলে রায়পুরের পূর্বতন জমিদার দুর্জন সিংহ, মেদিনীপুরের জমিদার। রাণি শিরােমণি এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসেন। এই বিদ্রোহ রায়পুর, তমলুক, রামগড়, শালবনী, বাসুদেবপুর প্রভৃতি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। দুর্জন সিং-এর নেতৃত্বে অন্তত ৩০টি গ্রামের সর্দার ও পাইকরা দল বেঁধে লুটপাট চালায় ও হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে। এই বিদ্রোহের উল্লেখযােগ্য নেতা ছিলেন গােবর্ধন দিকপতি, লাল সিং মােহনলাল প্রমুখ।
বিদ্রোহর দমন : ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে দুর্জন সিংহের নেতৃত্বে চুয়াড় বিদ্রোহে মেদিনীপুরের শান্তি বিঘ্নিত হলে প্রথমত, লর্ড ওয়েলেসলি দুটি সেনাদলের সাহায্যে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে বিদ্রোহীদের চূড়ান্তভাবে পরাজিত করেন। দ্বিতীয়ত, সেনাবাহিনী বিদ্রোহীদের গ্রেপ্তার করে গাছে ঝুলিয়ে ফাঁসি দিয়ে তাদের ঘাঁটিগুলি জ্বালিয়ে, তাণ্ডব চালিয়ে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করে এই বিদ্রোহ দমন করে। তৃতীয়ত, বিভাজন নীতির আশ্রয় নিয়ে চুয়াড় ও পাইকদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে এবং জমিদারদের নানাভাবে আশ্বস্ত করে কৌশলে চুয়াড় বিদ্রোহের অবসান ঘটানাে হয়।
গুরুত্ব : চুয়াড় বিদ্রোহের বেশ কটি গুরুত্ব ছিল, যেমন—
1) কৃষক চৈতন্য : প্রাণশক্তি নিপীড়িত কৃষকরা বুঝেছিল যে, জমিদারদের নিপীড়নের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া অপেক্ষা ব্রিটিশ শাসনের অবসান বেশি জরুরি।
2) ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম : জমিদার ও কৃষকরা মিলিত হয়ে এই বিদ্রোহ সংগঠিত করেছিল যা অত্যন্ত বিরল ঘটনা।
3) অনুপ্রেরণাস্থল : বিদ্রোহীদের আত্মত্যাগ ও ন্যায্য অধিকার রক্ষার সংগ্রাম পরবর্তীকালে আরও বৃহত্তর সংগ্রামের দিশারি ছিল।
4) স্বতঃস্ফূর্ত বিদ্রোহ : অধ্যাপক নরহরি কবিরাজ বলেছেন যে চুয়াড় বিদ্রোহ ছিল নিম্নশ্রেণির মানুষদের স্বতঃস্ফূর্ত অথচ ব্যাপক বিদ্রোহ।।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।