প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীরা,এখানে সপ্তম শ্রেণির বাংলা বইয়ে থাকা সুকান্ত ভট্টাচার্যের লেখা চিরদিনের কবিতার প্রশ্ন উত্তর তুলে ধরা হয়েছে। কবিতাটির শেষে হাতে-কলমে অংশের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ ভাষায় লিখে দেওয়া হয়েছে। এই উত্তরগুলো মন দিয়ে পড়লে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া সহজ হবে।
চিরদিনের
সুকান্ত ভট্টাচার্য
চিরদিনের কবিতার প্রশ্ন উত্তর
শব্দার্থ : বৃষ্টিমুখর—বৃষ্টিপতনের ধ্বনিপূর্ণ। ঘোষিত—প্রচারিত। আত্মদান—পরার্থে নিজের জীবন দান। ঢেঁকি—ধান ভানবার যন্ত্রবিশেষ। মজা নদী—বুজে যাওয়া নদী। দাওয়া—বারান্দা, রোয়াক। সান্ধ্য—সন্ধ্যাকালীন। আকাল—দুর্ভিক্ষ, দুঃসময়। কিষান-কৃষাণ,কৃষক, চাষি। দিশাহারা—দিগ্ভ্রান্ত, কিংকর্তব্যবিমূঢ়। জনমত—সাধারণ বা অধিকাংশ লোকের অভিমত। ধ্বনি—শব্দ, রব।
১. নীচের শব্দগুলির অন্তত দুটি অর্থ লেখো এবং দুটি পার্থক্য বাক্যে প্রয়োগ করো :
কাঁটা, তাল, জোড়া, সারি, মজা, পাশ।
উত্তর :
কাঁটা (কন্টক, রোমাঞ্চ)
কন্টক – গোলাপ গাছে কাঁটা থাকে।
রোমাঞ্চ- ভূতের গল্প শুনলে গায়ে কাঁটা দেয়।
তাল (দলা বা পিন্ড, গাছবিশেষ)
দলা বা পিন্ড – একতাল কাদা দিয়ে সে মূর্তি তৈরি করে।
গাছবিশেষ – তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে।
জোড়া (যুক্ত, দুটি)
যুক্ত- আঠা দিয়ে ছেঁড়া বইটি জোড়া লাগানো হলো।
দুটি – রামবাবু একজোড়া জুতো কিনেছেন।
সারি (শ্রেণি, মাঝি মল্লাদের গান বিশেষ)
শ্রেণি- বাগানে সারি সারি আমগাছ।
মাঝি মাল্লাদের গান বিশেষ- সারিগানের সুরে নদীতে সন্ধ্যা নামে।
মজা (আনন্দ, বুজে যাওয়া)
আনন্দ- ছুটির দিনে খুব মজা করল অনিক।
বুজে যাওয়া – মজা নদীতে নৌকো চলে না।
পাশ (উত্তীর্ণ, নৈকট্য)
উত্তীর্ণ – অংকিতা মাধ্যমিক পাশ করেছে।
নৈকট্য – বাবা মা পাশে থাকলে কোনো ভয় নেই।
২. নীচের শব্দযুগলের অর্থ পার্থক্য নির্দেশ করে দুটি আলাদা বাক্য তৈরি করো :
কাঁটা পার জড়ো সব দীপ
কাটা পাড় জড় শব দ্বীপ
উত্তর :
কাঁটা (কন্টক) – খালি পায়ে হাঁটলে পায়ে কাঁটা ফুটতে পারে।
কাটা(ছেদন করা)- অকারণে গাছ কাটা উচিত নয়।
পার( কিনারা) – নদীর পারে কাশবন।
পাড় (বস্ত্রের প্রান্ত) – নকশা করা শাড়ির পাড়
জড়ো(একত্র) – মিছিলে অনেক লোক জড়ো হয়েছে।
জড়(প্রাণহীন পদার্থ) – ইট একটি জড় পদার্থ।
সব(সমস্ত) – সব কাজ আজকের মধ্যে শেষ করতে হবে।
শব(মৃতদেহ) – শবদেহটার সৎকার করা উচিত।
দীপ(প্রদীপ) – দীপাবলিতে ঘরে ঘরে দীপ জ্বলে।
দ্বীপ (জলবেষ্টিত স্থলভাগ) – আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে পুজোর ছুটিতে ঘুরতে যাবো।
৩. ঠিক বানানটি বেছে নাও:
ব্যাস্ত/ব্যস্ত, সান্ধ্য/সান্ধ, দূর্ভিক্ষ /দুর্ভিক্ষ, বধু/বধূ, ধ্বনি/ধনি, সুবর্ণ/সুবর্ন।
উত্তর : ব্যস্ত, সান্ধ্য, দুর্ভিক্ষ, বধূ, ধ্বনি, সুবর্ণ ।
৪. নীচের শব্দগুলির কোনটি বিশেষ্য এবং কোনটি বিশেষণ বাছাই করে আলাদা দুটি স্তম্ভে সাজাও। এরপর বিশেষ্যগুলির বিশেষণের রূপ এবং বিশেষণগুলির বিশেষ্যের রূপ লেখো :
লাজুক, ব্যস্ত, মাঠ, সন্ধ্যা, গ্রাম, ঘর, ঘোষিত, চাষি, জল, ফসল।
উত্তর :
বিশেষ্য | বিশেষণ |
লাজ | লাজুক |
ব্যস্ততা | ব্যস্ত |
মাঠ | মেঠো |
সন্ধ্যা | সান্ধ্য |
গ্রাম | গ্রাম্য |
ঘর | ঘরোয়া |
ঘোষণা | ঘোষিত |
চাষি | চাষাড়ে |
জল | জলীয় |
ফসলি | ফসল |
৫. বিপরীতার্থক শব্দ লেখো :
মুখর, অহংকারী, অন্ধকার, একটানা, বিচিত্র।
উত্তর : মুখর- মৌন, অহংকারী- নিরহংকারী, অন্ধকার- আলো, একটানা- বিরাম যুক্ত, বিচিত্র- সরল।
📝Class 7 বাংলা অন্যান্য অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর
সুকান্ত ভট্টাচার্য (১৯২৬-১৯৪৭) : বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রতিভাধর ও জনপ্রিয় কবি। ‘কিশোর কবি’ নামে পরিচিত। বাংলা কবিতায় তিনি সাম্যবাদী চেতনার বিস্তার ঘটান। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ ‘ছাড়পত্র’, ‘ঘুম নেই’, ‘পূর্বাভাস’, ‘মিঠে কড়া’। ‘চিরদিনের’ কবিতাটি তাঁর ‘ঘুম নেই’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।
৬. ‘ঘড়ির কাঁটা’— এখানে ‘ঘড়ি’ আর ‘কাঁটা’, এই দুটি শব্দের মধ্যে সম্বন্ধ তৈরি করেছে ‘র’বিভক্তিটি, ‘ঘড়ির কাঁটা’-কে আমরা তাই বলবো সম্বন্ধ পদ। এই কবিতায় এই রকম আরো ক’টি উদাহরণ খুঁজে পাচ্ছো, লেখো।
একটি করে দেওয়া হল – তালের সারি।
উত্তর : পাখির গান, গ্রামের লোক, ঘড়ির কাঁটা, ক্ষেতের চাষি, দুর্ভিক্ষের আঁচল প্রভৃতি।
৭. সন্ধিবিচ্ছেদ করো :
বৃষ্টি, অহংকার, স্বাগত, পরস্পর, দুর্ভিক্ষ।
উত্তর : বৃষ্টি = বৃষ্ + তি, অহংকার = অহম্+কার, স্বাগত = সু+আগত, পরস্পর = পরঃ+পর, দুর্ভিক্ষ = দুঃ+ভিক্ষ ।
৮. নিম্নরেখ পদগুলির কারক ও বিভক্তি নির্ণয় করো :
৮.১ রাত্রি এখানে স্বাগত সান্ধ্য শাঁখে।
উত্তর :
🔹 পদ: শাঁখে
🔹 কারক: করণকারক
🔹 বিভক্তি: ‘এ’ বিভক্তি।
৮.২ এখানে সকাল ঘোষিত পাখির গানে।
উত্তর :
🔹 পদ: সকাল
🔹 কারক: অধিকরণকারক
🔹 বিভক্তি: ‘শূন্য’ বিভক্তি।
৮.৩ এ গ্রামের পাশে মজা নদী বারো মাস।
উত্তর :
🔹 পদ: বারো মাস
🔹 কারক: অধিকরণকারক
🔹 বিভক্তি: ‘শূন্য’ বিভক্তি।
৮.৪ ঠাকুমা গল্প শোনায় যে নাতনিকে।
উত্তর :
🔹 পদ: নাতনিকে
🔹 কারক: কর্মকারক
🔹 বিভক্তি: ‘কে’ বিভক্তি।
৫. কৃষক-বধূরা ঢেঁকিকে নাচায় পায়ে।
উত্তর:
🔹 পদ: কৃষক-বধূরা
🔹 কারক: কর্তৃকারক
🔹 বিভক্তি: ‘শূন্য’ বিভক্তি।
৯. বাক্য বাড়াও :
৯.১ চলে গেল লোক। (কখন? কেন? কোথায় ? )
উত্তর : গত বছর দুর্ভিক্ষের জন্য লোক গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে গেল।
৯.২ আজ বিদ্রোহ বুঝি করে। (কে? কখন?)
উত্তর : মজা নদী বর্ষায় আজ বুঝি বিদ্রোহ করে।
৯.৩ ঘোমটা তুলে দেখে নেয় কোনোমতে। (কে? কী? কোথায় ?)
উত্তর : কৃষক বধূ জল আনবার পথে ঘোমটা তুলে কোনোমতে দেখে নেয় সবুজ খেত।
৯.৪ এ গ্রাম সবুজ ঘাঘরা পরে। (কেমন ? কীসের ?)
উত্তর : এ গ্রাম ঘাসের নতুন সবুজ ঘাগরা পরে।
৯.৫ দীপ জ্বলে। (কোথায়? কখন ?)
উত্তর : প্রতি সন্ধ্যায় এই গ্রামে দীপ জ্বলে।
১০. একটি বাক্যে উত্তর দাও:
১০.১ ব্যস্ত ঘড়ির কাঁটা কোথায় গিয়ে থেমে গেছে?
উত্তর : সুকান্ত ভট্টাচার্য রচিত ‘চিরদিনের’ কবিতায় ব্যস্ত ঘড়ির কাঁটা বৃষ্টিমুখর লাজুক গাঁয়ে গিয়ে থেমে গেছে।
১০.২ তালের সারি কোথায় রয়েছে?
উত্তর : সুকান্ত ভট্টাচার্য রচিত ‘চিরদিনের’ কবিতায় জোড়া দিঘির পাড়ে তালের সারি রয়েছে।
১০.৩ কিষানপাড়া নীরব কেন?
উত্তর : সুকান্ত ভট্টাচার্য রচিত ‘চিরদিনের’ কবিতায় কিষাণপাড়ায় শহরের মতো কোলাহলমুখরতা নেই, এছাড়াও সম্প্রতি দুর্ভিক্ষের কারণে অনেক মানুষ পাড়া ছেড়ে চলে গেছে, তাই কিষাণপাড়া নীরব।
১০.৪ বর্ষায় কে বিদ্রোহ করে ?
উত্তর : সুকান্ত ভট্টাচার্য রচিত ‘চিরদিনের’ কবিতায় বর্ষায় গ্রামের পাশের মজা নদী বিদ্রোহ করে।
১০.৫ কে গোয়ালে ইশারা পাঠায়?
উত্তর : সুকান্ত ভট্টাচার্য রচিত ‘চিরদিনের’ কবিতায় সবুজ ঘাস গোয়ালে ইশারা পাঠায়।
১০.৬ রাত্রিকে কীভাবে স্বাগত জানানো হয় ?
উত্তর : সুকান্ত ভট্টাচার্য রচিত ‘চিরদিনের’ কবিতায় সন্ধ্যাবেলায় শঙ্খধ্বনির মাধ্যমে রাত্রিকে স্বাগত জানানো হয়।
১০.৭ কোথায় জনমত গড়ে ওঠে?
উত্তর : সুকান্ত ভট্টাচার্য রচিত ‘চিরদিনের’ কবিতায় বুড়ো বটতলায় জনমত গড়ে ওঠে।
১০.৮ ঠাকুমা কাকে, কখন গল্প শোনান?
উত্তর : সুকান্ত ভট্টাচার্য রচিত ‘চিরদিনের’ কবিতায় ঠাকুমা রাতের অন্ধকারে দাওয়ায় বসে নাতনিকে গল্প শোনান।
১০.৯ কোন গল্প তিনি বলেন?
উত্তর : সুকান্ত ভট্টাচার্য রচিত ‘চিরদিনের’ কবিতায় ঠাকুমা দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতার গল্প বলেন।
১০.১০ সকালের আগমন কীভাবে ঘোষিত হয় ?
উত্তর : সুকান্ত ভট্টাচার্য রচিত ‘চিরদিনের’ কবিতায় পাখির গানে সকাল ঘোষিত হয়।
১০.১১ কবিতায় কোন কোন জীবিকার মানুষের কথা আছে?
উত্তর : সুকান্ত ভট্টাচার্য রচিত ‘চিরদিনের’ কবিতায় কৃষক, কামার, কুমোর, তাঁতি প্রভৃতি জীবিকার মানুষের কথা আছে।
১১. আট দশটি বাক্যে উত্তর দাও :
১১.১ এই কবিতায় বাংলার পল্লি প্রকৃতির যে বর্ণনা আছে তা নিজের ভাষায় সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর : সুকান্ত ভট্টাচার্য রচিত চিরদিনের কবিতায় কবি পল্লী প্রকৃতির এক অপূর্ব চিত্র অঙ্কন করেছেন। যেখানে বৃষ্টিমুখর লাজুক গায়ে ব্যস্ত ঘড়ির কাঁটা যেন থেমে গেছে। সবুজ মাঠে ঘেরা শান্ত গ্রামটিতে চলার পথ বলতে মেঠো আলপথ। কাছেই জোড়াদিঘির পাড়ে রয়েছে তাল গাছের সারি, দূরে বাঁশঝাড়। গ্রামের মজা নদী যেন বর্ষায় বিদ্রোহ করে। গোয়ালে ইশারা পাঠায় সবুজ ঘাস। এ গ্রাম যেন বর্ষায় সবুজের নতুন ঘাগরা পরে। সকাল ঘোষিত হয় পাখির গানে সন্ধ্যা বেলা শঙ্খধ্বনির মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয় রাত্রিকে। এ গ্রামে যেন সবুজ ফসলে সুবর্ণ যুগের সূচনা হয়।
১১.২ কবিতাটিতে গ্রামীণ মানুষের জীবনযাপনের যে ছবিটি পাও তা নিজের ভাষায় বর্ণনা করো।
উত্তর : কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর রচিত ‘চিরদিনের’ কবিতায় গ্রামীণ মানুষের জীবনযাপনের একটি সুনির্দিষ্ট চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। শান্ত, স্নিগ্ধ এই গ্রামে কৃষিজীবী মানুষের সংখ্যাই বেশি। এছাড়াও রয়েছে কামার, কুমোর, তাঁতি প্রভৃতি পেশার মানুষ। সকালে পাখির গানে যাদের দিন শুরু হয় । সারাদিন কৃষকেরা খেতে সোনার ফসল উৎপাদনে ব্যস্ত থাকেন। কামার, কুমোর, তাঁতী প্রত্যেকেই নিজ নিজ কাজে সারাদিন ব্যস্ত থাকেন। কৃষক বধূরা পায়ে পায়ে ঢেঁকি নাচান, সন্ধ্যাবেলা শঙ্খধ্বনির মাধ্যমে রাত্রিকে স্বাগত জানান। সারাদিনের কাজের শেষে সন্ধ্যাবেলা অবসর সময় কাটানোর জন্য এ গ্রামের বুড়ো বটতলায় জড়ো হন গ্রামের মানুষ। দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতায় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এ গ্রামের মানুষ টিকে থাকার লড়াইয়ে হার মানে না। তাইতো কবিতার শেষে কৃষক বধূ ঘোমটা তুলে সবুজ ফসল দেখে। তাতে যেন নতুন যুগের আকাঙ্ক্ষা ফুটে ওঠে।
১১.৩ আকাল ও দুর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপটে মানুষের সম্মিলিত শ্রম আর জীবনীশক্তি কীভাবে বিজয়ী হয়েছে, কবিতাটি অবলম্বনে তা বুঝিয়ে দাও ৷
উত্তর : সুকান্ত ভট্টাচার্য রচিত ‘চিরদিনের’ কবিতায় কবি দুর্ভিক্ষ কাটিয়ে ওঠা একটি শান্ত গ্রামের বর্ণনা দিয়েছেন। দুর্ভিক্ষের সময় বাচার তাগিদে বহু মানুষ এ গ্রাম ছেড়ে শহরে পাড়ি দিয়েছে। এই ঘটনা যেন গ্রামটিকে আরও নীরব করে তুলেছে। তবুও গ্রামের কৃষক, কামার, কুমোর, তাঁতি নিজেদের কর্ম পরিত্যাগ করেনি। তারা সকলে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে দুর্ভিক্ষের ক্ষত মেরামতে সক্ষম হয়েছে। তাইতো কবিতার শেষে সবুজ ফসলে যেন নতুন যুগের সূচনার আভাস মিলেছে। এভাবেই সাম্যবাদী কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য দেখিয়েছেন আকাল ও দুর্ভিক্ষ গ্রামের শ্রমজীবী মানুষকে কষ্ট দিলেও তাদের দমিয়ে রাখতে পারেনি। শ্রমজীবী মানুষেরা তাদের জীবনীশক্তি তথা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে বিজয়ী হয়েছে। তাইতো পল্লী বাংলা ফিরে পেয়েছে নতুন প্রাণ।
১১.৪ “কোনো বিশেষ সময়ের নয়, বরং আবহমান কালের বাংলাদেশ তার প্রকৃতি ও মানুষকে নিয়ে জীবনের যে জয়গান গেয়ে চলেছে, এই কবিতায় তারই প্রকাশ দেখতে পাই।”— উপরের উদ্ধৃতিটির সাপেক্ষে কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
উত্তর : সুকান্ত ভট্টাচার্য রচিত ‘চিরদিনের’ কবিতায় দুর্ভিক্ষ পীড়িত শান্ত একটি গ্রাম্য জীবনের কাহিনী থাকলেও। এর মধ্যে অন্তর্নিহিত আছে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও মানুষের চিরপরিচিত এক চিত্র। যা আবহমানকাল ধরে একই ভাবে চলে আসছে। পল্লিবাংলার শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশ, নব বর্ষায় সবুজে সেজে ওঠা, সান্ধ্য শাঁখের রাত্রিকে আহ্বান, শ্রমজীবী মানুষের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ এগুলো যেন নির্দিষ্ট কোনো একটি সময়ে চিত্র নয়। আবহমানকাল ধরে পল্লী বাংলার চির পরিচিত চিত্র এগুলি। ঠাকুমার গল্পও বংশ পরম্পরায় এভাবেই মুখে মুখে প্রবাহিত হয়। এ যেন বহমান নদী যার স্থিরতা নেই। সময়ের সাথে সাথে মানুষের পরিবর্তন ঘটে কিন্তু ‘চিরদিনের’ পল্লী বাংলা একই থাকে। একারণেই কবিতাটির নামকরণ যথার্থ ও সার্থক।
১২. ব্যাখ্যা করো:
১২.১ “এখানে বৃষ্টিমুখর…… ঘড়ির কাঁটা”।
উত্তর : সুকান্ত ভট্টাচার্য রচিত ‘চিরদিনের’ কবিতা থেকে আলোচ্য উদ্ধৃতিটি নেওয়া হয়েছে।
বৃষ্টিমুখর লাজুক গ্রামে শহরের ব্যস্ততা নেই। ঘড়ির কাঁটায় নজর রেখে গ্রামের মানুষকে যন্ত্রের মতো ছুটতে হয়না। বর্ষায় পল্লী প্রকৃতির এই স্নিগ্ধ, লাজুক রূপ দেখে কবি মুগ্ধ হয়েছেন। তাইতো কবির মনে হয়েছে সমস্ত ব্যস্ততা যেন এই শান্ত, নিবীড় পল্লী বাংলায় এসে থমকে গেছে ।
১২.২ “এ গ্রামের পাশে…… বিদ্রোহ বুঝি করে”।
উত্তর : সুকান্ত ভট্টাচার্য রচিত ‘চিরদিনের’ কবিতা থেকে আলোচ্য উদ্ধৃতিটি নেওয়া হয়েছে।
গ্রামের পাশে ছোট্ট নদী। সারাবছর জলের অভাবে এ নদী মজে থাকে। কিন্তু বর্ষাকালে সেই নদীই ফুলে ফেঁপে ওঠে। বর্ষার জলে পুষ্ট এই নদী যেন প্রবল আকার ধারণ করে বিদ্রোহ করতে চায়।
১২.৩ “দুর্ভিক্ষের আঁচল…..কাজ করে”।
উত্তর : সুকান্ত ভট্টাচার্য রচিত ‘চিরদিনের’ কবিতা থেকে আলোচ্য উদ্ধৃতিটি নেওয়া হয়েছে।
পঞ্চাশের মন্বন্তরের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ গ্রাস করেছিল আলোচ্য কবিতার গ্রামটিকে। এছাড়াও এখানে খরা, বন্যা, মহামারি লেগেই থাকে। তবুও এ গ্রামের খেটে খাওয়া বিভিন্ন পেশার মানুষ মন দিয়ে নিজেদের কাজ করে। তারা জীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে।
১২.৪ “সারাটা দুপুর….বিচিত্র ধ্বনি ওঠে”।
উত্তর : সুকান্ত ভট্টাচার্য রচিত ‘চিরদিনের’ কবিতা থেকে আলোচ্য উদ্ধৃতিটি নেওয়া হয়েছে।
পাখির গানে সকাল ঘোষিত হলে কৃষক, কামার, কুমোর, তাঁতি সকলে নিজেদের কাজ আরম্ভ করে। সারা দুপুর ধরে মাঠে কর্মরত চাষির কানে কাজের ফলে সৃষ্ট একটানা নানা বিচিত্র শব্দ বাজতে থাকে।
১২.৫ “সবুজ ফসলে সুবর্ণযুগ আসে”।
উত্তর : সুকান্ত ভট্টাচার্য রচিত ‘চিরদিনের’ কবিতা থেকে আলোচ্য উদ্ধৃতিটি নেওয়া হয়েছে।
সাম্যবাদী কবি আলোচ্য কবিতায় দুর্ভিক্ষের আঁচল জড়ানো শান্ত, নিরব গ্রামের ছবি ফুটিয়ে তুললেও। হতাশা দিয়ে কবিতার শেষ করেননি। তাইতো গ্রামের বধূ যখন ঘোমটার ফাঁক দিয়ে সবুজ ফসল দেখে। সেই দৃশ্যে যেন নতুন যুগের সূচনা ঘটে। ফুটে ওঠে আশার আলো।
১৩. তোমার দেখা একটি গ্রামের কথা ডায়েরিতে লেখো। গ্রামটি কোথায়, সেখানে কোন কোন জীবিকার কতজন মানুষ থাকেন ইত্যাদি জানিয়ে গ্রামটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মানুষজনের জীবনযাপন পদ্ধতি, বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধার কথা লেখো। গ্রামটির উন্নতিসাধনে যদি তোমার কোনো পরামর্শ দেওয়ার থাকে, অবশ্যই সেকথা লিখবে।
উত্তর :
তারিখ: ২৫শে জুন, ২০২৪
কিছুদিন আগে আমি পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলার এক ছোট্ট গ্রাম বুলনপুরে ঘুরতে গিয়েছিলাম। এটা শহর থেকে অনেক দূরে, এখনও তেমন উন্নতি হয়নি। গ্রামটিতে যাওয়ার পর আমার মনে হল আমি আদিম যুগে ফিরে আসলাম । এক কথায় বলা যায় এটি একটি পল্লীগ্রাম । গ্রামের মানুষ খুব অল্প, মোটামুটি ২৫০ থেকে ৩০০ জন। বেশিরভাগই চাষের কাজ করেন। কিছু লোক আছে যারা কুটিরশিল্প বা ছোট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
এই গ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশ আমার খুব ভালো লেগেছে। চারদিকে শাল, পিয়াল আর মহুয়া গাছের জঙ্গল। লাল মাটির রাস্তা আর সবুজ গাছপালায় ঘেরা গ্রামটা দেখতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা খুব সুন্দর একটি গ্রাম। সকালে পাখির ডাক আর বিকেলে পাহাড়ের পাশে সূর্য ডুবে যাওয়ার দৃশ্য – যা আমরা এতদিন মোবাইলে বা টিভিতে দেখতাম সেটা আমি এই গ্রামে গিয়ে সরাসরি দেখতে পেলাম। এই দৃশ্য গুলি দেখে আমার চোখ এবং মন জুড়িয়ে গেল। এখানকার বাতাস একদম পরিষ্কার, ধোঁয়া-ধুলো কিছুই নেই।
গ্রামের মানুষ খুব সাধারণভাবে জীবন কাটান – হ্যাঁ এটা সত্যি, এই জিনিসটা আমি এই গ্রামে গিয়ে স্পষ্টভাবে বুঝতে পারলাম। সকালে ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার মানুষেরা কাজ শুরু করে, আর সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথেই সবাই বাড়িতে চলে আসে । পুরুষেরা জমিতে কাজ করেন আর মহিলারা ঘরের কাজের পাশাপাশি গরু-ছাগল দেখেন, আবার কেউ কেউ কুটির শিল্পের কাজ করেন। সন্ধ্যার সময় সবাই একসঙ্গে বসে গল্প করে, হাসি-ঠাট্টা গান গাওয়া ইত্যাদি – এক কথায় বলা যায় সবাই মিলে বসে আড্ডা মারে। তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব আর মিলঝুলে থাকার মানসিকতা সত্যিই একটি আলাদা রকমের শান্তির জীবন।
তবে কিছু সমস্যা আছে। রাস্তা ঠিক নেই, তাই শহরে যাতায়াত কষ্টকর। ভালো স্কুল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রও নেই, ফলে পড়াশোনা আর চিকিৎসার জন্য অনেক দূরে যেতে হয়। বিদ্যুৎ মাঝেমধ্যে থাকে না, আর পানীয় জলও অনেক সময়ে লোহার মতো স্বাদ হয় কারণ নলকূপে আয়রনের পরিমাণ বেশি।
আমার মতে, যদি কিছু জিনিস ঠিক করা যায়, তাহলে এই গ্রামের অনেক উন্নতি হতে পারে। যেমন:
- ভালো রাস্তা বানানো দরকার, যাতে জিনিসপত্র শহরে সহজে পাঠানো যায়।
- একটা ছোট স্কুল আর স্বাস্থ্যকেন্দ্র খুব দরকার।
- বিদ্যুৎ সমস্যার জন্য সৌরবিদ্যুৎ চালু করা যেতে পারে।
- আর কুটিরশিল্পে যদি সরকার একটু সাহায্য করতো, তাহলে অনেকেই বাড়িতে বসে রোজগার করতে পারত।
সবকিছু মিলিয়ে, বুলনপুর গ্রাম আমার খুব ভালো লেগেছে । এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, আর মানুষের সরল মন আমাকে আমার জীবনের একটি নতুন অধ্যায় শিখিয়েছে । এখানে গিয়ে আমার মনে হল শহরের মানুষ আর গ্রামের মানুষের মধ্যে মানসিকতার দিক থেকে দিনরাত তফাৎ রয়েছে । তাই শহরের ছাত্র-ছাত্রীদের বছরের অন্ততপক্ষে একবার গ্রামে গ্রামে গিয়ে ঘুরে আসা দরকার । আমি আশা করি, একদিন এই গ্রামের অনেক উন্নতি, কিন্তু তারা যেন গ্রামের আসল সৌন্দর্য বজায় রাখে।
আরো পড়ুন
গল্পবুড়ো কবিতার প্রশ্ন উত্তর | সুনির্মল বসু | Golpo Buro Kobita Question Answer | Class 5 | Wbbse
বুনো হাঁস প্রশ্ন উত্তর | লীলা মজুমদার | Buno Has Class 5 Question Answer | Wbbse
দারোগাবাবু এবং হাবু কবিতার প্রশ্ন উত্তর | Daroga Babu Ebong Habu Question Answer | Class 5 | Wbbse
এতোয়া মুন্ডার কাহিনী প্রশ্ন উত্তর | Etoya Mundar Kahini Question Answer | Class 5 | Wbbse
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।