মাধ্যমিক শিক্ষা কাকে বলে | মাধ্যমিক শিক্ষার ধারণা ও উদ্দেশ্যগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো 2 + 2 + 4
উত্তর:
মাধ্যমিক শিক্ষা ও প্রাথমিক শিক্ষার পরের স্তরটি হল মাধ্যমিক শিক্ষাস্তর। এটি প্রকৃতপক্ষে পাঁচ-ছয় বছরের একটি শিক্ষা স্তর। এই স্তরের শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে এমনভাবে গড়ে তােলা। হয় যে, সে আগামীদিনে সমাজজীবনে নিজেকে সঠিকভাবে মানিয়ে। নিতে সক্ষম হয়। এই শিক্ষাস্তরে শিক্ষার্থীকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের উপযােগী করে গড়ে তােলা হয়।
মাধ্যমিক শিক্ষার ধারণা :
নিয়ন্ত্রিত শিক্ষাব্যবস্থায় কৈশাের বা বয়ঃসন্ধিকালের ছাত্রছাত্রীরা মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে পঠনপাঠন করে। মানবজীবন বিকাশের দিক থেকে এবং শিক্ষাগত দিক থেকে এই পর্যায়টি মধ্যম পর্যায় বা মধ্যম স্তর হিসেবে বিবেচিত হয়। 1948-1949 খ্রিস্টাব্দের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশনের মতে সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে শিক্ষার এই পর্যায়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই পর্যায়টি উচ্চশিক্ষা বা বৃত্তিমুখী শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রস্তুতিপর্ব হিসেবে বিবেচিত হয়। অনেকে মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে কর্মজীবনে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। সেদিক থেকে মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ শিক্ষাস্তর হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে দুটি প্রধান বিভাগ থাকে।
[1] নিম্নমাধ্যমিক : এটি নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য।
[2] উচ্চমাধ্যমিক : এটি একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য।
সাধারণভাবে চোদ্দো বা পনেরাে বছর বয়স থেকে আঠারাে বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষাকে মাধ্যমিক শিক্ষা বলা হয়।
মাধ্যমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য :
বয়ঃসন্ধিকালের ছাত্রছাত্রীদের বিকাশগত বৈশিষ্ট্য এবং বিশেষ চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এই স্তরের শিক্ষার উদ্দেশ্য নির্ধারিত হয়। এই শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলি হল —
[1] সার্বিক বিকাশে সহায়তা করা : মাধ্যমিক শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল ছাত্রছাত্রীদের সার্বিক বিকাশে সহায়তা করা। ভাষা, সাহিত্য, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগােল প্রভৃতি বিষয় চর্চার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সার্বিক বিকাশ ঘটানাের ব্যবস্থা করা হয়।
[2] নাগরিকতার বিকাশে সহায়তাদান: মাধ্যমিক শিক্ষার অপর একটি উদ্দেশ্য হল গণতান্ত্রিক সমাজের দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করা।
[3] সামাজিকতার বিকাশে সহায়তা করা: ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক মূল্যবােধ এবং সামাজিক গুণাবলির বিকাশসাধনের মাধ্যমে তাদেরকে সমাজজীবনের। উপযােগী করে তােলা বা তাদের সামাজিকতার বিকাশে সহায়তা করা হল মাধ্যমিক শিক্ষার অপর একটি উদ্দেশ্য।
[4] সুস্বাথ্যাভ্যাস গড়ে তােলা : মাধ্যমিক শিক্ষার অন্য একটি উদ্দেশ্য হল ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সুস্বাস্থ্যাভ্যাস গড়ে তােলা। সুস্বাথ্যাভ্যাস বলতে শারীরিক ও মানসিক উভয় ধরনের স্বাস্থ্যাভ্যাসকে বােঝানাে হয়। খেলাধুলা, শরীরচর্চা, যােগব্যায়াম, শারীর শিক্ষা প্রভৃতির মাধ্যমে এই অভ্যাস গড়ে ভােলা হয়।
[5] সৃজনধর্মী গুণের বিকাশে সহায়তা করা : প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মধ্যে কিছু না কিছু সৃজনধর্মী গুণ লুকিয়ে থাকে। মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য হল ছাত্রছাত্রীদের ওই সৃজনধর্মী গুণের বিকাশে সহায়তা করা।
[6] বৃত্তিমুখী বা পেশাগত শিক্ষায় সহায়তা করা ; মাধ্যমিক শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহ, প্রবণতা ও সামর্থ্য অনুসারে তাকে বৃত্তিমুখী বা পেশাগত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তােলা। কারণ এই পর্যায়ের শিক্ষা শেষ করে বহু শিক্ষার্থী কর্মক্ষেত্রে যােগদান করে।
[7] দৃষ্টিভঙি গড়ে তােলা : মাধ্যমিক শিক্ষার আর একটি উদ্দেশ্য হল ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে প্রগতিশীল বিজ্ঞানসম্মত মনােভাব গড়ে তােলা, তাদেরকে কুসংস্কার ও সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করা।
[8] নৈতিক ও আধ্যাত্নিক চেতনার বিকাশে সহায়তা করা : মাধ্যমিক শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল ছাত্রছাত্রীদের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক চেতনার বিকাশে সহায়তা করা।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।