কৈশোরকাল বা বয়ঃসন্ধিকালের বিকাশগত বৈশিষ্ট্য

কৈশোরকাল বা বয়ঃসন্ধিকালের বিকাশগত বৈশিষ্ট্য

উত্তর:

কৈশোরকাল বা বয়ঃসন্ধিকালের বিকাশগত বৈশিষ্ট্য :

Adolescence শব্দটি একটি গ্রিক শব্দ adolescere থেকে এসেছে যার অর্থ হল বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হওয়া বা পরিণমন সম্পন্ন হওয়া। মানবজীবনের এই সময়কাল খুবই প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ। কৈশােরকাল মােটামুটিভাবে 12 থেকে 18 বছর পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। নিম্নে কৈশােরকালের বিকাশমূলক বৈশিষ্ট্যগুলি বিবৃত হল— 

[1] দৈহিক বিকাশ : কিশাের এবং কিশােরীদের উভয়েরই এই সময়ে আকস্মিকভাবে দৈহিক বৃদ্ধি হয়। 13 বছর বয়সে বালিকারা বালকদের থেকে উচ্চতা ও ওজনের দিক থেকে বেশি বৃদ্ধি পায়। কিশােরদের গলার স্বর কর্কশ হয়, কিশােরীদের গলার স্বর সরু হয়। এই বয়সে কিশাের এবং কিশােরীদের যৌনাঙ্গের সম্পূর্ণ পরিণমন হয়। কিশােরদের কাধ চওড়া হয় ও কিশােরীদের কবজি তুলনামূলকভাবে সরু হয়। 

[2] সঞ্চালনমূলক ক্ষমতার বিকাশ : এই বয়সে কিশাের-কিশােরীদের দেহ ভারসাম্যযুক্ত হয় এবং সঞ্চালনমুলক ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। দ্রুতগতি ও মাংসপেশির শক্তির দিক থেকে কিশােররা কিশােরীদের থেকে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে।

[3] যৌন প্রবৃত্তির বিকাশ : কৈশােরকালে যৌনতা এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই সময়ে যৌনপ্রবৃত্তির জন্য অনেক সময় কিশাের-কিশােরীদের আচরণে অস্থিরতা, রােমান্টিকতা দেখা যায়। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হতে দেখা যায়। কিন্তু বন্ধুত্বের সঠিক অর্থ এই সময়ে তারা অনেকক্ষেত্রেই বুঝতে পারে না। তবে অনেক সময়ে অপরিণত যৌনতার ধারণার জন্য কিশাের-কিশােরীরা বিভিন্ন প্রকারের ফোবিয়া, সাইকো নিউরােসিস ব্যাধির শিকার হয়। 

[4] সামাজিক বিকাশ : এই বয়সে কিশাের-কিশােরীরা খুবই অনুভূতিপ্রবণ হয় ফলে প্রশংসা এবং দোষারােপের দ্বারা বিশেষভাবে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে। তবে এই প্রবণতা অতিরিক্ত মাত্রায় আত্মসচেতনতা থেকে আসে। এই সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল নিজের দলের দ্বারা ভীষণভাবে প্রভাবিত হওয়া। তাদের আচরণ, আগ্রহ, মূল্যবােধ সমস্ত কিছুই দলের দ্বারা প্রভাবিত হয়। কখনাে-কখনাে দলের স্বার্থে আত্মবলিদান দিতেও প্রস্তুত হয়। 

[5] প্রক্ষোভিক বিকাশ; এই সময়ে ভালােবাসা এক গুরুত্বপূর্ণ প্রক্ষোভ। বন্ধুদের প্রতি ভালােবাসা ও বন্ধুবিচ্ছেদের প্রতি যন্ত্রণা বিশেষভাবে এই সময়ে প্রতিভাত হয়। বয়ঃসন্ধিকালের প্রথম দিকে সমলিঙ্গের প্রতি ভালােবাসা লক্ষ করা যায় কিন্তু শেষের দিকে তা বিপরীত লিঙ্গে সালিত হয়। ধর্ম ও নৈতিকতার প্রতি এক জটিল আচরণের সৃষ্টি হয়। অনেক সময় দেখা যায়, কিশাের-কিশােরীরা ধর্মীয় কোনাে গােষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হয়। সর্বোপরি বলা যায়, সমাজে এই বয়সের কিশাের-কিশােরীরা একটি নির্দিষ্ট স্থান পেতে চায়। নিজেকে সমাজের এক সচেতনপূর্ণ মানুষরূপে প্রতিপন্ন করতে চায়। এই সময়ে তাদের মধ্যে Heroism লক্ষ করা যায়। তবে বেশিরভাগ কিশাের-কিশােরীদের একটু নিজের মধ্যে কেন্দ্রীভূত হতে দেখা যায়।

[6] মানসিক বিকাশ: এই সময়ে দ্রুতগতিতে মানসিক বিকাশ ঘটে। বিমূর্ত চিন্তনে সক্ষম হয়। সম্পর্ক সম্বন্ধে সচেতনতা ও সমস্যা সমাধানে সক্ষমতা অর্জন করে। ধারণার বিকাশ হয়। নিজের মতামতের প্রতি আত্মবিশ্বাস জাগরিত হয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে চিন্তা করতে সক্ষম হয়। শব্দসংখ্যা অতিরিক্ত পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। কল্পনাশক্তি প্রবলভাবে বৃদ্ধি পায়।

মনােবিজ্ঞানী Stanley Hall বলেছেন, ‘Puberty is the birthdays of imagination’। এই সময়ে কিশাের-কিশােরীরা রহস্যরোমাঞ্চ গল্প, উপন্যাস পড়তে আগ্রহী হয়। দিবাস্বপ্ন ও অবাস্তব কল্পনা এই সময়ের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। কিশাের এবং কিশােরীরা ভীষণভাবে পরামর্শদান করতে উৎসাহী থাকে। তবে ব্যক্তিত্ব গঠনের দিক থেকে বলা যায়, খুব সংগঠিতভাবে ব্যক্তিসত্তা গড়ে ওঠে না। 

উপসংহারস্বরূপ উল্লেখ করা যায়, জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সমাজকে বিশেষভাবে সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে বয়ঃসন্ধিকালের বিকাশ সঠিক ও সুস্থ পথে প্রকাশিত হতে পারে। তবেই ভবিষ্যতে সুনাগরিক তৈরি করা যথােপযুক্তভাবে সুসম্পন্ন হবে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment