মাধ্যমিক শিক্ষার সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে আলোচনা করো

মাধ্যমিক শিক্ষার সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে আলোচনা করো
অথবা, মাধ্যমিক শিক্ষার ত্রুটি বা সমস্যাগুলি কী কী? এই ত্রুটি বা সমস্যা সমাধানের উপায় কী? 5 + 3 

উত্তর : 

মাধ্যমিক শিক্ষার ত্রুটি বা সমস্যা :

আমাদের রাজ্যে প্রচলিত মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে যেসকল সমস্যা বা ত্রুটি পরিলক্ষিত হয় সেগুলি হল— 

[1] পাঠমগত ত্রুটি: মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রমে কর্মভিত্তিক অভিজ্ঞতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এতে শিক্ষার্থীর নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষার তেমন কোনাে ব্যবস্থা নেই। ব্যাবহারিক শিক্ষা পুরােপুরি অবহেলিত এবং পাঠক্রম প্রণয়নের সময় শিক্ষার্থীর চাহিদা ও সামর্থ্যের প্রতিও সঠিকভাবে দৃষ্টি দেওয়া হয় না।

[2] বিদ্যালয়ের অভাব : আমাদের রাজ্যে মাধ্যমিক শিক্ষা পরিচালনার জন্য উপযুক্ত সংখ্যক বিদ্যালয় নেই। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছাত্রছাত্রীর সংখ্যানুপাতে অনেক কম। 

[3] শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাব : আমাদের রাজ্যের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলির প্রত্যেকটিতে উপযুক্তসংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষিকা নেই। বিদ্যালয়গুলিতে কোনাে-না-কোনাে বিষয়ের শিক্ষক পদ শূন্য থাকে। 

[4] সঠিক পাঠক্রমের ঘাটতি : আজও আমাদের রাজ্যের মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রম বাস্তবসম্মত নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পাঠক্রম তত্ত্বগত বিষয়ের ভারে ভারাক্রান্ত। 

[5] আর্থিক দুরবস্থা : পশ্চিমবঙ্গে অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আর্থিক অনটন রয়েছে। গৃহ সমস্যা, বসার জন্য বেঞ্চের সমস্যা, শিক্ষাসহায়ক উপকরণের অভাব—আথিক দুরবস্থার কারণই প্রকট হয়ে উঠেছে।

[6] অবৈজ্ঞানিক পাঠদান পদ্ধতি : আমাদের দেশের মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা কেবল পুথিনির্ভর ও তথ্যসর্বস্ব । বাস্তবের সঙ্গে এর খুব একটা মিল নেই। এই শিক্ষায় জ্ঞান লাভ করে শিক্ষার্থীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে বেকার জীবন কাটাতে বাধ্য হয়। তাই এই শিক্ষা তাদের কাছে খুব একটা গ্রহণযােগ্য হয়ে উঠছে না। 

[7] পাঠ্যপুস্তকের সমস্যা : বর্তমানে পাঠ্যপুস্তকগুলির দাম এত বেশি হয়েছে যে, বহু শিক্ষার্থী ওইগুলি জোগাড় করতে পারছে না। ফলে তাদের পঠনপাঠন ব্যাহত হচ্ছে। 

[8] সঠিক মূল্যায়ন পদ্ধতির অভাব : মাধ্যমিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে যে মূল্যায়ন ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে, তা পুরােপুরি বিজ্ঞানভিত্তিক এবং বাস্তবসম্মত নয়। এটিও মাধ্যমিক শিক্ষার একটি ত্রুটি বা সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়। 

মাধ্যমিক শিক্ষার ত্রুটি বা সমস্যা সমাধানের উপায় :

মাধ্যমিক শিক্ষার ত্রুটি বা সমস্যাগুলির সমাধানের জন্য যেসকল উপায় অবলম্বন করতে হবে, সেগুলি হল— 

[1] পাঠক্রমে কর্ম অভিজ্ঞতা লাভের সুযােগ সৃষ্টি করতে হবে। এ ছাড়া পাঠক্রম প্রণয়নের সময় শিক্ষার্থীর নৈতিক ও আধ্যাত্মিক বিকাশে সহায়ক উপকরণ বা বিষয়কে নির্বাচন করতে হবে। শিক্ষার্থীরা যাতে বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাবহারিক কাজের সুযােগ পায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। 

[2] অধিকসংখ্যক বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে এবং ছাত্রছাত্রীর সংখ্যার অনুপাতে সারাবছর বিদ্যালয়গুলিতে যাতে শিক্ষিকার সংখ্যা ঠিক থাকে সে-বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে। 

[3] বিদ্যালয়গুলিতে উপযুক্ত যােগ্যতাসম্পন্ন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়ােগের ব্যবস্থা করতে হবে। 

[4] মেধাবী ও দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে। 

[5] বিভিন্ন ধরনের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির ব্যবস্থা করতে হবে। 

[6] আধুনিক এবং যুগােপযােগী বিভিন্ন ভিত্তিক মূল্যায়ন ব্যবস্থা চালু করতে হবে। 

[7] পাঠদানকে শিক্ষার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় করার জন্য বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাসহায়ক উপকরণ প্রয়ােগ করতে হবে। 

[8] সরকারি দিক থেকে প্রশাসনিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment