প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা, এখানে আমরা দ্বিশতবর্ষে বিদ্যাসাগর | উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আলোচনা করলাম। খুব সুন্দর করে গুছিয়ে এই প্রবন্ধ রচনাটি লেখা হয়েছে। আশা করি তোমাদের সবারই ভালো লাগবে। ধন্যবাদ
দ্বিশতবর্ষে বিদ্যাসাগর
উনিশ শতকে একদিকে যখন ইংরেজের অনুগ্রহভাজন হয়ে ছদ্ম-আধুনিকতার পাঠ নিচ্ছে বাঙালি, অন্যদিকে মনের ভিতরে মধ্যযুগীয় অন্ধকার—সেই সময় আত্মমর্যাদা ও শিক্ষায় জাতিকে আত্মদীপ্ত করে তুলেছিলেন বিদ্যাসাগর।
প্রাথমিক পরিচিতি: ১৮২০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ সেপ্টেম্বর মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে বিদ্যাসাগরের জন্ম। পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, মা ভগবতী দেবী। ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যাসাগর সংস্কৃত কলেজে ব্যাকরণের তৃতীয় শ্রেণিতে ভরতি হন। সংস্কৃত কলেজে তিনি বারো বছর পড়াশোনা করেন। ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি আইন পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। তার প্রশংসাপত্রেই প্রথম ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধিটি ব্যবহার করা হয়।
কর্মজীবন: ১৮৪১ খ্রিস্টাব্দে একুশ বছর বয়সে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রধান পণ্ডিতের পদে বিদ্যাসাগর যোগদান করেন। ১৮৪৬-এ সংস্কৃত কলেজে সহ-সম্পাদক হিসেবে যোগ দিলেও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণে তিনি পদত্যাগ করে ফিরে যান ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে। তবে ১৮৫১-তে বিদ্যাসাগর সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি সংস্কৃত কলেজের দরজা অব্রাক্ষ্মণ ছাত্রদের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। সংস্কৃতের পাশাপাশি বাংলা এবং ইংরেজিকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃতি, শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য নর্মাল স্কুল স্থাপন করেন তিনি।
নারীশিক্ষার প্রসার: বিদ্যাসাগর নারীশিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন জেলায় পঁয়তিরিশটি স্কুল স্থাপন করেন। মেয়েদের শিক্ষায় সাহায্য করার জন্য গড়ে তোলেন নারীশিক্ষা ভাণ্ডার। তবে বিদ্যাসাগরের জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ বিধবাবিবাহ প্রচলন করা। তাঁর উদ্যোগেই ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ সরকার বিধবাবিবাহ আইন প্রচলন করে।
সাহিত্যসৃষ্টি: বর্ণপরিচয় বিদ্যাসাগরের অবিস্মরণীয় কীর্তি। এ ছাড়াও তিনি বেশ কিছু স্মরণীয় অনুবাদ গ্রন্থ রচনা করেন, যেমন—সীতার বনবাস, ভ্রান্তিবিলাস, কথামালা, বোধোদয়, বেতাল পঞ্চবিংশতি ইত্যাদি। মার্শম্যানের History of Bengal অবলম্বনে রচনা করেন বাঙ্গালার ইতিহাস।
বর্তমান প্রাসঙ্গিকতা: জন্মের দুশো বছর অতিক্রান্তেও বিদ্যাসাগর আজও প্রাসঙ্গিক। সে-কথা মনে রেখে রাজ্যসরকার যথোচিত মর্যাদার সঙ্গে বিদ্যাসাগরের জন্মদ্বিশতবর্ষ পালনের উদ্যোগ নিয়েছে। বিদ্যালয় স্তরে প্রাক্প্রাথমিক এবং প্রথম শ্রেণিতে বিনামূল্যে বর্ণপরিচয়-কে ঐতিহ্যপূর্ণ বই হিসেবে বিতরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেপ্টেম্বরের ২১ থেকে ২৬ তারিখ পর্যন্ত স্কুলগুলিতে বিতর্ক, আলোচনা প্রদর্শনী ইত্যাদির মাধ্যমে বিদ্যাসাগর চর্চা হয়েছে।
উপসংহার: বিদ্যাসাগর কোনো নাম নয়, এক জীবনচর্চা। উদারতা ও সংস্কারহীনতার সমন্বয়ে তাঁর যে জীবনাদর্শ তা বাঙালিকে মেরুদণ্ড ঋজু রাখার শিক্ষা দেয়। জাতিকে তার কাছেই নতজানু থাকতে হবে।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।