দৃষ্টিহীন শিশুদের শিক্ষা পদ্ধতি আলােচনা করাে। Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 4 Marks
উত্তর:-
দৃষ্টিহীন শিশুদের শিক্ষাপদ্ধতি : দৃষ্টিহীন শিশুদের পাঠদানের জন্য বিশেষ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সাধারণ পদ্ধতিতে স্বাভাবিক শিশুদের যেভাবে পড়ানাে হয়, দৃষ্টিহীন শিশুদের সেভাবে পড়ানাে যায় না। শিশুরা কতখানি দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন সে বিষয়ে পরিমাপ করার পর উপযুক্ত পদ্ধতি অবলম্বনের দ্বারা পঠনপাঠনের ব্যবস্থা করা হয়। সাধারণত দৃষ্টিহীন শিশুদের পঠনপাঠনের জন্য স্পর্শ পদ্ধতি ও শ্রবণ পদ্ধতির ওপর জোর দেওয়া হয়।
[1] ব্রেইল পদ্ধতি : বর্তমানে সারা বিশ্বে দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়েদের পড়ানাের জন্য ব্রেইল পদ্ধতি প্রচলিত। লুইস ব্রেইল 1829 খ্রিস্টাব্দে এই বিশেষ স্পর্শ পদ্ধতির প্রচলন করেন। বর্তমানে বাংলা ভাষাতেও উন্নত মানের ব্রেইল লেখা হয়। ব্রেইল ব্যবস্থায় পুরু কার্ডবাের্ড বা কাগজের ওপর যে শক্ত জিনিস দিয়ে উঁচু উঁচু ডট বা বিন্দু দেওয়া হয়, তাকে বলা হয় ‘স্টাইলাস’ উঁচু উঁচু ছয়টি বিন্দুকে বিভিন্নভাবে সাজিয়ে বাঁদিক থেকে ডানদিকে ব্রেইল লেখা হয়। এই পদ্ধতিতে হাতের স্পর্শের মাধ্যমে লেখা পড়তে হয়৷ বৈজ্ঞানিক সংকেত, গণিত, সংগীতের স্বরলিপি প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয় ব্রেইলের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়।
[2] ব্যক্তিকেন্দ্রিক পদ্ধতি: অন্ধ শিশুদের পড়ানাের ক্ষেত্রে ব্যক্তিকেন্দ্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ প্রত্যেক শিশুর প্রতি আলাদাভাবে যত্ন নেওয়া হয়। প্রতিটি শিশুর চাহিদা অনুযায়ী শিখন পদ্ধতি আলাদাভাবে নির্বাচিত হয়।
[3] শব্দনির্ভর পদ্ধতি : অন্ধ শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য টকিং বুক, ফোনােগ্রাম, টেপরেকর্ডার, ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি, বিশেষ করে পাঠ্যসূচির বিভিন্ন অংশের ওপর অডিয়াে ক্যাসেট প্রভৃতির ব্যবহার করা হয়।
[4] নির্ভুল অভিজ্ঞতা দান: অন্ধ ছেলেমেয়েরা মূলত স্পর্শ এবং শ্রবণের মাধ্যমে বিশ্বজগৎ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে। সেই কারণে তাদের পড়ানাের সময়ে স্পর্শেন্দ্রিয় এবং শ্রবণেন্দ্রিয়কে কাজে লাগিয়ে সঠিক অভিজ্ঞতাদানের পদ্ধতি প্রয়ােগ করা হয়।
[5] সক্রিয়তাভিত্তিক পদ্ধতি : দৃষ্টিহীনদের সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করানাে হয় | পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে তাদের পরিচয় ঘটিয়ে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হয়। ফলে একদিকে তারা যেমন অনুপ্রাণিত হয়, অন্যদিকে যথাযথ অভিজ্ঞতা লাভ করে।
[6] সামগ্রিক ধারণা গঠন: মানুষ চোখে দেখে যেসব অভিজ্ঞতা অর্জন করে, তা মূলত সামগ্রিক বা সমন্বয়ধর্মী হয়। এজন্যই স্বাভাবিক ছেলেমেয়েরা কোনাে বস্তুকে সামগ্রিকভাবে দেখে। এই কারণে দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়েদের পড়ানাের সময় একটি বস্তুর নানান অংশ সম্পর্কে পৃথক পৃথকভাবে ধারণা দেওয়ার পর, ওইসব অভিজ্ঞতাগুলির সমন্বয়সাধন করা হয়ে থাকে। সামগ্রিক ধারণা না পেলে তাদের শিক্ষা অপূর্ণ থেকে যায়।
ওপরের আলােচনা থেকে বলা যায়, দৃষ্টিহীনদের শিখন পদ্ধতি মূলত ব্রেইল ব্যবহারের কৌশলের ওপর নির্ভরশীল। যেসব দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়ে ব্রেইল পাঠে দক্ষতা অর্জন করে, তাদের ব্রেইল পদ্ধতিতেই পড়ানাের ব্যবস্থা করা হয়।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।