দূরদর্শনের সুফল ও কুফল
ভূমিকা :
“দূরকে করেছে নিকট বন্ধু”—দূরদর্শন
মহাভারতের যুগে মহাজ্ঞানী সঞ্জয় দিব্যদৃষ্টিবলে কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধের ঘটনা হস্তিনাপুরের রাজপ্রাসাদ থেকে অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রকে শুনিয়েছিলেন। বােধহয় সেই দিব্যদৃষ্টিরই অধিকার আজ বিজ্ঞানের আশীর্বাদের ফসল টেলিভিশন—যার অপর নাম দূরদর্শন। কথা ও দৃশ্যের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এই ইলেকট্রনিক মাধ্যমটি আজ শহর-গ্রাম সর্বত্র জনপ্রিয়। দূরদর্শনে আমরা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার স্বাদ পাই। এজন্য এটি প্রধান গণমাধ্যম হয়ে উঠেছে।
‘টেলিভিশন’ একটি মিশ্র শব্দ। গ্রিক ‘টেলি’ শব্দের অর্থ ‘দূর’ আর ইংরেজি ‘ভিশন’ শব্দের অর্থ ‘দৃশ্য। এই দুইয়ের মিলনে গড়ে উঠেছে ‘টেলিভিশন’, যার অর্থ দূরদর্শন। জন বেয়ার্ড হলেন টেলিভিশনের আবিষ্কর্তা।
গুরুত্ব ও কার্যকারিতা : দূরদর্শনের গুরুত্ব ও কার্যকারিতা অপরিসীম। এর কারণ হল দূরদর্শনের মাধ্যমে কথা, চিত্র, রং, শব্দ ও গতি একসঙ্গে প্রতিফলিত করা যায়। আসলে এটি হল একইসঙ্গে চোখে দেখার এবং কানে শােনার মাধ্যম। দূরদর্শনের সাহায্যে যে-কোনাে অনুষ্ঠানের লাইভ ব্রডকাস্ট’ অথবা কোনাে অনুষ্ঠানের সরাসরি রিলে দেখানাে সম্ভব। দূরদর্শন অশিক্ষিত ও স্বল্পশিক্ষিত শ্রোতাদের পক্ষে খুব উপকারী। গণপ্রচারের পক্ষে দূরদর্শন খুবই অনুকূল। বই বা সংবাদপত্র একসঙ্গে একাধিক লােক পড়তে পারে না। কিন্তু দূরদর্শন একসঙ্গে অনেকের পক্ষে দেখা সম্ভব। এই কারণে আধুনিক সভ্যতায় দূরদর্শন গুরুত্বপূর্ণ প্রচারমাধ্যম হয়ে উঠেছে। এটি শুধু ? বিনােদন নয়, শিক্ষা-সংস্কৃতি-জাতীয় সংহতি বিস্তারে এর ভূমিকা সর্বাধিক। জনসাধারণের মনে দূরদর্শন সর্বাধিক প্রভাব বিস্তার করেছে।
দূরদর্শনের সুফল : দূরদর্শন আজ সমাজজীবনের অপরিহার্য মাধ্যম। এটি মূলত বিনােদন মাধ্যম হলেও এর সামাজিক উপযােগিতা অস্বীকার করা যায় না— (১) দূরদর্শন বিনােদন জগতে যুগান্তর এনেছে। (২) দূরদর্শন শিক্ষার প্রসার বিশেষত লােকশিক্ষা প্রসারে, নিরক্ষরতা দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। (৩) প্রথা বহির্ভূত জ্ঞান-বিদ্যা শিক্ষায় এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। (৪) চিকিৎসা-স্বাস্থ্য, আবহাওয়ার সংবাদ, কৃষি-শিল্প বিষয়ে তথ্য ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত সংবাদ ও জ্ঞান দূরদর্শনের মাধ্যমে প্রচারিত হয়। (৫) বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশ-সমাজের সংহতি-চেতনা প্রসারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে।
দূরদর্শনের কুফল : দূরদর্শন শিক্ষা, তথ্যপ্রচার ও বিনােদনের এক শক্তিশালী এবং ব্যক্তিমর্যাদার প্রতীকরূপে সারাবিশ্বে স্বীকৃত হলেও সমাজে দূরদর্শনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে – (১) দূরদর্শনে প্রচারিত নানা অনুষ্ঠান শিশুমনে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি করে। (২) দূরদর্শন শিক্ষার্থীর পড়ার সময় কেড়ে নিয়েছে, সাধারণ মানুষের অবসর সময়ও গ্রাস করেছে। (৩) দূরদর্শন মানুষের বাস্তববােধকে নষ্ট করে তার মানসিকতাকে অসুস্থ করে তুলেছে। নীতিহীনতা, ধ্বংস, হত্যা আর বিশৃঙ্খলার দৃশ্য দূরদর্শনে বেশি করে দেখানাে হয়। (৪) দূরদর্শন মুখ্যত বিনােদন মাধ্যম। এই উল্লেখযােগ্য বিষয়গুলি দর্শকদের কাছে মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উপসংহার: বর্তমান যুগে দূরদর্শন যেমন অবসর বিনােদনের আনন্দদায়ক মাধ্যম, তেমন এটি অনেকের মতে ইডিয়ট বক্স। এ-যেন দূরদর্শনের কপালে চন্দন-তিলক ও কলঙ্কচিহ্ন। দূরদর্শন আমাদের কাছ থেকে ‘চোখ’ আর ‘মন কেড়ে নিয়ে চিন্তাশক্তির লােপ ঘটিয়েছে। টিভির নগ্ন বিজ্ঞাপন ও ছবি দেখে শিশু ও তরুণ মন কলুষিত হচ্ছে। বই পড়ার অভ্যাস আজ আর তেমন নেই। তাই, দূরদর্শনকে সুস্থ সংস্কৃতি ও শিক্ষামূলক কাজে ব্যবহার করতে পারলে সমাজের উপকার হবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম উন্নত হয়ে উঠবে।
আরো পড়ুন
গ্রন্থাগার – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
বিবেকানন্দ ও যুবসমাজ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
আধুনিক ভারতবর্ষে শিক্ষার জনক বিদ্যাসাগর – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
জনজীবনে সংবাদপত্রের ভূমিকা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।
Very good