দূর্নীতি প্রতিরােধে ভারত সরকার কতৃক গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং শান্তানাম

দুনীতি প্রতিরােধে ভারত সরকার কতৃক গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং শান্তানাম কমিটির প্রস্তাবিত বিভিন্ন সুপারিশ আলােচনা কর। Class 12 | Sociology (সাম্প্রতিক কালের সামাজিক বিচার্য বিষয়) | 8 Marks

উত্তর:

ভারতে সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছে। দুর্নীতি দমনের জন্য সবদিক থেকে পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক। এ বিষয়ে এ পর্যন্ত গৃহীত আইনমূলক পদক্ষেপের মধ্যে কতকগুলি উল্লেখযােগ্য।

দুনীতি প্রতিরােধ আইন, ১৯৪৭ (Prevention of Corruption Act, 1947)

দুর্নীতি প্রতিরােধের ক্ষেত্রে ভারতীয় দণ্ডবিধি (IPC-Indian Penal Code) কতকাংশে প্রাসঙ্গিক। ঘুস দেওয়া-নেওয়া ও অন্যবিধ দুর্নীতি অধিকতর সক্রিয়ভাবে প্রতিরােধ করার জন্য ভারত সরকার ১৯৪৭ সালে বিশেষ একটি আইনপ্রণয়ন করে। এই আইনটি ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরােধ আইন’ (The Prevention of Corruption Act, 1947) নামে পরিচিত। কিন্তু দুর্নীতি প্রতিরােধের লক্ষ্যে আইনটি শােচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

দুর্নীতি প্রতিরােধ আইন, ১৯৮৮ (Prevention of Corruption Act, 1988)

ভারত সরকার ১৯৮৮ সালে দুর্নীতি প্রতিরােধ সম্পর্কিত আর একটি আইন প্রণয়ন করে। এই আইনটি ১৯৮৮ সালের দুর্নীতি প্রতিরােধ আইন (Prevention of Corruption Act, 1988) নামে পরিচিত। এই আইনটির মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরােধ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিধি-ব্যবস্থাকে সমন্বিত ও সুসংহত করা হয়। সংশ্লিষ্ট বিধি-ব্যবস্থাগুলি হল: ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরােধ আইন, ভারতীয় দণ্ডবিধি (IPC-Indian Penal Code) -র কতকগুলি ধারা, ফৌজদারি পদ্ধতি বিধি (Cr.P.C- Criminal Procedure Code) এবং ১৯৫২ সালের ফৌজদারি আইন (Criminal Law, 1952)

১৯৮৮ সালের দুর্নীতি প্রতিরােধ আইনে ‘সরকারি কর্মচারী’ (Public Servant) কথাটির অর্থের পরিধিকে অধিকতর প্রসারিত করা হয়েছে। আলােচ্য আইন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সকল কর্মচারী এই আইনটির আওতায় আসবে। তদনুসারে যে সমস্ত পদাধিকারীরা এই আইনের আওতায় আসবেন তাদের তালিকা যথেষ্ট দীর্ঘ। তবে কিছু পদাধিকারীর নাম উল্লেখ করা যায়। এঁরা হলেন — জাতীয় ব্যাংকসমূহের কর্মচারীরা, সরকার কর্তৃক অধিগৃহীত সংস্থাসমূহের কর্মচারীরা, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের কর্মচারীরা, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বিজ্ঞানী, অধ্যাপক এবং কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার ও স্থানীয় সংস্থাসমূহের আর্থিক সাহায্যপ্রাপ্ত কর্মচারীসমূহ। সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতিমূলক অপরাধ আদালতে প্রমাণিত হলে ১৯৮৮ সালের দুর্নীতি দমন আইন অনুসারে শাস্তির ব্যবস্থা হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা দরকার যে, সাংসদ এবং বিধায়কদের এই আইনের আওতা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

শান্তানাম কমিটি (Santhanam Committee) : ভারতের জনজীবনের সকল ক্ষেত্রেই দুর্নীতি ইতিমধ্যে গভীরভাবে অনুপ্রবিষ্ট হয়েছে। সমাজজীবনের ক্ষেত্রে দুর্নীতির ব্যাপ্তি ও গভীরতা ভয়াবহ। সম্পূর্ণভাবে এবং সহজে দুর্নীতির অবসান একরকম অসম্ভব। তবে দুর্নীতিমূলক ক্রিয়াকর্মকে পুরােপুরি বন্ধ করা না গেলেও নিয়ন্ত্রণ ও হ্রাস করা সম্ভব।

দুর্নীতির প্রতিরােধ ব্যবস্থা সম্পর্কে আলােচনা ও সুপারিশ করার জন্য ভারত সরকার ১৯৬২ সালে একটি কমিটি গঠন করে। শান্তানাম (K, Santhanam) -এর সভাপতিত্বে এই কমিটি গঠন করা হয়। তাই এই কমিটিটি শান্তানাম কমিটি’ নামে পরিচিত। শান্তানাম কমিটি দুর্নীতি প্রতিরােধের ব্যাপারে বিভিন্ন প্রস্তাব সুপারিশ করেছে।

(১) প্রতিটি বিভাগ, অধিগৃহীত সংস্থা ও মন্ত্রিদপ্তরের দুর্নীতির পরিধি ও পদ্ধতি সম্পর্কে যথাসম্ভব বিস্তারিতভাবে অনুসন্ধান করা আবশ্যক। অনুসন্ধানমূলক সমীক্ষার প্রতিবেদনে প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ সম্পর্কে সুপারিশ থাকবে।

২) দুর্নীতিমুলক ক্রিয়াকর্ম এড়ানাের জন্য প্রশাসনিক বিলম্বকে যথাসম্ভব হ্রাস করতে হবে। এই উদ্দেশ্যে দুটি বিষয়ের প্রতি নজর দিতে হবে: (ক) বিলম্ব যাতে না হয়, তার জন্য বিদ্যমান। প্রক্রিয়া-পদ্ধতি পুনরীক্ষণ করা প্রয়ােজন; (খ) সময়সীমা নির্ধারণ ও অনুসরণ করা আবশ্যক। 

৩) নাগরিক অধিকার ও দায়দায়িত্ব এবং সরকারের প্রক্রিয়া-পদ্ধতি সম্পর্কে নাগরিকদের শিক্ষিত করে তুলতে হবে।। 

(4) কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে হবে, উপরন্তু সরকারি কর্মচারীদের জন্য আবাসন ও চিকিৎসা পরিষেবার ব্যবস্থা করতে হবে। খ) বিভিন্ন শ্রেণির কর্মচারী, বিশেষত আর্থনীতিক বিষয়াদি সম্পর্কিত বিভিন্ন বিভাগের কর্মচারীদের। কিছু আচরণবিধি নির্ধারণ করে দিতে হবে। জানিয়ে দিতে হবে যে, যাদের সঙ্গে পদ সম্পর্কিত কর্তব্য সংক্রান্ত সংযােগ বর্তমান তাদের কাছ থেকে কোনাে পরিষেবা বা সুযােগ-সুবিধা নেওয়া যাবে না। 

(৬) কোনাে শিল্প-পরিবারের বৈধ কর্তৃত্বহীন দালাল প্রকৃতির কোনাে ব্যক্তির সঙ্গে বিভাগীয় | আধিকারিকদের কোনােরকম সংযােগ-সম্পর্ক থাকা চলবে না। 

(৭) ব্যয় সম্পর্কিত বিস্তারিত হিসাবপত্র রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে কোম্পানিসমূহ ও ব্যবসায়ীদের। বাধ্য করতে হবে। 

(৮) প্রশাসনিক ক্ষেত্রে আধিকারিক পদে নিয়ােগের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রমাণিত সততার বিষয়ে সুনিশ্চিত হতে হবে। 

(৯) সরকারি কর্মচারীরা অবসরগ্রহণের পর দু’বছরের মধ্যে কোনাে শিল্প বা বাণিজ্যিক সংস্থায় নিযুক্ত হতে পারবে না।

কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশন (Central Vigilance Commission) : শান্তানাম কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ভারত সরকার ১৯৬৪ সালে কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশন (Central Vigilance Commission) গঠন করে। কেন্দ্রীয় সরকার সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতি দমনমূলক আরও তিনটি সংগঠন গড়ে তােলে। এই তিনটি সংগঠন হল: (ক) প্রশাসনিক ভিজিল্যান্স ডিভিশন (AVD– Administrative Vigilance Division)। (খ) সেন্ট্রাল ব্যুরাে অব ইনভেসটিগেশন (CBI-Central Bureau of Investigation) ; এবং (গ) ডােমেস্টিক ভিজিল্যান্স ইউনিট (Domestic Vigilance Unit)। প্রথমটি ‘কর্মীবৃন্দ ও প্রশিক্ষণ বিভাগ (Department of Presonnel and Training)-এর অন্তর্ভুক্ত এবং তৃতীয়টি বিভিন্ন মন্ত্রক, বিভাগ, অধিগৃহীত সংস্থা, এবং জাতীয়করণকৃত ব্যাঙ্কসমূহের সঙ্গে সংযুক্ত।

দুর্নীতি বিষয়ক অভিযােগসমূহ মােকাবিলা করার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশন হল মুখ্য আইনানুগ সংস্থা। এই সংস্থার কার্যাবলীর মধ্যে কতকগুলি বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। (ক) কোনাে সরকারি কর্মচারীর। বিরুদ্ধে দুর্নীতি সম্পর্কিত যে-কোনাে অভিযােগ সম্পর্কে অনুসন্ধানের ব্যবস্থা করা। (খ) দুর্নীতির সঙ্গে সংযুক্ত অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে উপযুক্ত পন্থা-পদ্ধতির ব্যাপারে পরামর্শ প্রদান। (গ) দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিবর্গের। বিরুদ্ধে নিয়মিতভাবে মামলা করার ব্যাপারে CBI-কে নির্দেশদান। (ঘ) নজরদারি ও দুর্নীতিবিরােধী কার্যাবলীর উপর সাধারণ নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থা বিভিন্ন মন্ত্রক, দপ্তর, ব্যাংক, সরকারি অধিগৃহীত সংস্থা প্রভৃতির ক্ষেত্রে কার্যকর হয়।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!